ইসলামে ব্যবসায়িক মাল বা সম্পদের উপর যাকাত ফরজ হওয়ার সুস্পষ্ট দলিল রয়েছে। কুরআন ও হাদিসে ব্যবসায়িক সম্পদের যাকাত সম্পর্কে বিভিন্ন নির্দেশনা ও উদাহরণ পাওয়া যায়।
কুরআনের দলিল
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَنْفِقُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا كَسَبْتُمْ وَمِمَّا أَخْرَجْنَا لَكُمْ مِنَ الْأَرْضِ
উচ্চারণ:
ইয়া আইয়ুহাল্লাজিনা আমানু আনফিকু মিন তাইয়িবাতি মা কাসাবতুম ওয়া মিম্মা আখরাজনা লাকুম মিনাল আরদ।
অর্থ:
হে মুমিনগণ, তোমরা তোমাদের উপার্জিত পবিত্র বস্তুসমূহ থেকে এবং আমি তোমাদের জন্য ভূমি থেকে যা উৎপাদন করেছি তা থেকে ব্যয় করো।
[সূরা আল-বাকারা - ২:২৬৭]
এই আয়াত থেকে স্পষ্ট যে, মুসলমানদের উপার্জিত সম্পদ থেকে যাকাত প্রদান করতে হবে।
وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٍ. يَوْمَ يُحْمَى عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَى بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوبُهُمْ وَظُهُورُهُمْ هَـٰذَا مَا كَنَزْتُمْ لِأَنفُسِكُمْ فَذُوقُوا مَا كُنتُمْ تَكْنِزُونَ
উচ্চারণ:
ওয়াল্লাজিনা ইয়াকনিজুনা যাহাবা ওয়ালফিজ্বাতা ওয়ালা ইউনফিকুনাহা ফি সাবিলিল্লাহি ফাবাশশিরহুম বিআযাবিন আলিম। ইয়াওমা ইয়ুহমা আলাইহা ফি নারি জাহান্নামা ফাতুকওয়া বিহা জিবাহুহুম ওয়া জুনুবুহুম ওয়া যুহুরুহুম। হাজা মা কানাজতুম লি'আনফুসিকুম ফাজুকু মা কুনতুম তাকনিজুন।"
অর্থ:
আর যারা সোনা ও রূপা জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও। সেদিন সেই সোনা ও রূপাকে জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে, অতঃপর তা দিয়ে তাদের কপাল, পার্শ্ব এবং পৃষ্ঠদেশে দাগ দেওয়া হবে। বলা হবে, ‘এটাই হচ্ছে যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করে রেখেছিলে, এখন আস্বাদন কর যা তোমরা জমা করে রেখেছিলে।’"
[সূরা আত-তাওবা (৯:৩৪-৩৫)]
এই আয়াতে আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় না করার শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে, যা যাকাত প্রদানের বাধ্যবাধকতা নির্দেশ করে।
হাদিসের দলিল (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)
قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ اللَّهَ فَرَضَ عَلَيْهِمْ زَكَاةَ أَمْوَالِهِمْ تُؤْخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ وَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ
উচ্চারণ:
কালা আন-নবিয়্যু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম: ইন্নাল্লাহা ফারদা আলাইহিম যাকাত আমওয়ালিহিম তুউখাযু মিন আগনিয়াইহিম ওয়া তুরাদ্দু আলা ফুকারাইহিম।"
অর্থ:
নবী (সা.) বলেন: আল্লাহ তাদের উপর তাদের সম্পদের যাকাত ফরজ করেছেন, যা তাদের ধনীদের থেকে গ্রহণ করা হবে এবং তাদের দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।"
مَا مِنْ صَاحِبِ كَنْزٍ لاَ يُؤَدِّى زَكَاتَهُ إِلاَّ أُحْمِىَ عَلَيْهِ فِى نَارِ جَهَنَّمَ فَيُجْعَلُ صَفَائِحَ فَيُكْوَى بِهَا جَنْبَاهُ وَجَبِينُهُ حَتَّى يَحْكُمَ اللَّهُ بَيْنَ عِبَادِهِ فِى يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ
উচ্চারণ:
মা মিন সাহিবি কানযিন লা ইউ'আদ্দি যাকাতাহু ইল্লা উহমিয়া আলাইহি ফি নারি জাহান্নামা ফাইউজ'আলু সাফায়িহা ফাইউকওয়া বিহা জানবাহু ওয়া জাবিনুহু হাত্তা ইয়াহকুমাল্লাহু বায়না ইবাদিহি ফি ইয়াউমিন কান মিকদারুহু খামসিনা আলফা সানাতিন।
অর্থ:
যে কোনো ব্যক্তি যে ধনসম্পদ জমা করে এবং যাকাত প্রদান করে না, কিয়ামতের দিন সেই সম্পদকে জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দিয়ে তার পার্শ্ব ও কপালে দাগ লাগানো হবে, যতক্ষণ না আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে ফয়সালা করেন।
সারসংক্ষেপ
কুরআন ও হাদিসে ব্যবসায়িক মালের যাকাত ফরজ হওয়ার সুস্পষ্ট দলিল পাওয়া যায়। কুরআনে ব্যবসায়িক মালের উপার্জিত সম্পদ থেকে যাকাত প্রদানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, এবং হাদিসে এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে। যাকাত প্রদান না করলে কিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। তাই ব্যবসায়িক মালের যাকাত প্রদান করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য বাধ্যতামূলক।
ব্যবসায়িক মালের যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হয়। এই শর্তগুলো পূরণ হলে মুসলমানদের জন্য তাদের ব্যবসায়িক সম্পদের উপর যাকাত আদায় করা বাধ্যতামূলক হয়। নিচে ব্যবসায়িক মালের যাকাত ফরজ হওয়ার শর্তগুলো উল্লেখ করা হলো
সম্পদের মালিকানা
• ব্যবসায়িক মাল বা সম্পদ যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য অবশ্যই সম্পদের মালিক হতে হবে। যদি সম্পদ কারো কাছে আমানত হিসেবে থাকে, তবে এর উপর যাকাত ফরজ নয়।
নিসাব পরিমাণ সম্পদ
• ব্যবসায়িক মালের যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য সম্পদের পরিমাণ নিসাব পরিমাণ হতে হবে। নিসাব হলো একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ, যা স্বর্ণের ক্ষেত্রে ৮৫ গ্রাম বা রূপার ক্ষেত্রে ৫৯৫ গ্রাম। অর্থাৎ ব্যবসায়িক সম্পদের মূল্য যদি এই পরিমাণের সমান বা এর বেশি হয়, তাহলে যাকাত ফরজ হবে।
এক বছর পূর্ণ হওয়া (হাওলানুল হাওল)
• ব্যবসায়িক সম্পদের উপর যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য সম্পদ এক বছর ধরে মালিকানাধীন থাকতে হবে। ইসলামি হিজরি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এক বছর পূর্ণ হওয়ার পরই যাকাত ফরজ হবে।
ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য
• যেসব সম্পদ ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয় এবং মুনাফা অর্জনের জন্য রাখা হয়, সেসব সম্পদের উপর যাকাত ফরজ হবে। যদি কোনো সম্পদ ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য রাখা হয়, তবে তার উপর যাকাত ফরজ নয়।
প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ
• যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য সম্পদ অবশ্যই প্রয়োজনের অতিরিক্ত হতে হবে। অর্থাৎ যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য মৌলিক চাহিদা পূরণের পর বাকি সম্পদ নিসাব পরিমাণ হতে হবে।
দায়মুক্ত সম্পদ
• যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য সম্পদ অবশ্যই দায়মুক্ত হতে হবে। যদি ব্যবসায়িক সম্পদের উপর কোনো ঋণ থাকে এবং সেই ঋণ পরিশোধ করার পর নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে, তাহলে তার উপর যাকাত ফরজ হবে।
উদাহরণ :
ব্যবসায়িক সম্পদের মালিকানা
• একজন ব্যবসায়ী যিনি ১০ লাখ টাকার মালিক এবং এই সম্পদ তার ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে।
নিসাব পরিমাণ সম্পদ
• যদি এই ব্যবসায়ীর সম্পদের মূল্য ৮৫ গ্রাম স্বর্ণ বা ৫৯৫ গ্রাম রূপার সমমূল্যের বেশি হয়।
এক বছর পূর্ণ হওয়া
• যদি ব্যবসায়ী এই সম্পদ এক বছর ধরে ধরে রাখেন।
ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য
• যদি এই সম্পদ ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয় এবং ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য না থাকে।
কুরআন ও হাদিসের উদ্ধৃতি
وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٍ. يَوْمَ يُحْمَى عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَى بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوبُهُمْ وَظُهُورُهُمْ هَـٰذَا مَا كَنَزْتُمْ لِأَنفُسِكُمْ فَذُوقُوا مَا كُنتُمْ تَكْنِزُونَ
উচ্চারণ:
ওয়াল্লাজিনা ইয়াকনিজুনা যাহাবা ওয়ালফিজ্বাতা ওয়ালা ইউনফিকুনাহা ফি সাবিলিল্লাহি ফাবাশশিরহুম বিআযাবিন আলিম। ইয়াওমা ইয়ুহমা আলাইহা ফি নারি জাহান্নামা ফাতুকওয়া বিহা জিবাহুহুম ওয়া জুনুবুহুম ওয়া যুহুরুহুম। হাজা মা কানাজতুম লি'আনফুসিকুম ফাজুকু মা কুনতুম তাকনিজুন।"
অর্থ:
আর যারা সোনা ও রূপা জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও। সেদিন সেই সোনা ও রূপাকে জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে, অতঃপর তা দিয়ে তাদের কপাল, পার্শ্ব এবং পৃষ্ঠদেশে দাগ দেওয়া হবে। বলা হবে, ‘এটাই হচ্ছে যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করে রেখেছিলে, এখন আস্বাদন কর যা তোমরা জমা করে রেখেছিলে।’"
[সূরা আত-তাওবা (৯:৩৪-৩৫)]
قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ اللَّهَ فَرَضَ عَلَيْهِمْ زَكَاةَ أَمْوَالِهِمْ تُؤْخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ وَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ
উচ্চারণ:
কালা আন-নবিয়্যু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম: ইন্নাল্লাহা ফারদা আলাইহিম যাকাত আমওয়ালিহিম তুউখাযু মিন আগনিয়াইহিম ওয়া তুরাদ্দু আলা ফুকারাইহিম।"
অর্থ:
নবী (সা.) বলেন: আল্লাহ তাদের উপর তাদের সম্পদের যাকাত ফরজ করেছেন, যা তাদের ধনীদের থেকে গ্রহণ করা হবে এবং তাদের দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।"
[সহিহ বুখারি ও মুসলিম]
সারসংক্ষেপ
ব্যবসায়িক মালের যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য কয়েকটি শর্ত রয়েছে, যেমন সম্পদের মালিকানা, নিসাব পরিমাণ সম্পদ, এক বছর পূর্ণ হওয়া, ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য, প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ এবং দায়মুক্ত সম্পদ। এই শর্তগুলো পূরণ হলে ব্যবসায়িক মালের উপর যাকাত ফরজ হয়। কুরআন ও হাদিসে এ বিষয়ক সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে, যা প্রতিটি মুসলমানের জন্য মান্য করা আবশ্যক।
ইসলামে জমির যাকাত নির্ধারণ করার সুনির্দিষ্ট নিয়ম এবং শর্ত রয়েছে। জমির যাকাত প্রধানত জমি থেকে উৎপাদিত ফসলের উপর নির্ভর করে। এছাড়াও ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত জমির উপর যাকাত আদায় করা হয়। জমির যাকাত সম্পর্কিত বিধান ও শর্তাবলী নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলজমির যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত
উৎপাদনশীল জমি
• জমি যদি উৎপাদনশীল হয় এবং ফসল উৎপাদিত হয়, তবে উক্ত ফসলের উপর যাকাত ফরজ হয়।
নিসাব পরিমাণ ফসল
• যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য ফসলের পরিমাণ নিসাব পরিমাণ হতে হবে। ফসলের নিসাব হলো ৫ ওয়াসক। ১ ওয়াসক হলো প্রায় ৬০ সা' (প্রাচীন আরবের পরিমাপ একক)। ১ সা' প্রায় ২.৪০ কেজি হিসাবে ধরা হয়। সুতরাং, ৫ ওয়াসক হলো প্রায় ৭২০ কেজি।
সেচের পদ্ধতি
• যাকাতের হার নির্ভর করে জমির সেচের পদ্ধতির উপর।
• প্রাকৃতিক সেচ (বৃষ্টি, ঝরনা, নদী ইত্যাদি) দ্বারা সেচ করা হলে, যাকাতের হার হলো মোট ফসলের ১০%।
• কৃত্রিম সেচ (যেমনঃ পানি উত্তোলন, পাম্প ইত্যাদি) দ্বারা সেচ করা হলে, যাকাতের হার হলো মোট ফসলের ৫%।
উদাহরণস্বরূপ জমির যাকাতের হিসাব
প্রাকৃতিক সেচ
• যদি কোনো কৃষক ১০০০ কেজি ফসল উৎপাদন করে এবং তা প্রাকৃতিক সেচের মাধ্যমে হয়, তাহলে যাকাত হবে
• যাকাতের হার: ১০%
• যাকাতের পরিমাণ: ১০০০ কেজি × ১০% = ১০০ কেজি
যদি কোনো কৃষক ১০০০ কেজি ফসল উৎপাদন করে এবং তা কৃত্রিম সেচের মাধ্যমে হয়, তাহলে যাকাত হবে
• যাকাতের হার: ৫%
• যাকাতের পরিমাণ: ১০০০ কেজি × ৫% = ৫০ কেজি
ব্যবসায়িক জমির যাকাত
যদি জমি ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, যেমন বিক্রয়ের জন্য রাখা হয় বা ভাড়া দেওয়া হয়, তবে জমির মূল্য বা ভাড়া থেকে প্রাপ্ত আয়ের উপর যাকাত ফরজ হবে।
নিসাব পরিমাণ সম্পদ
• ব্যবসায়িক জমির উপর যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হতে হবে। নিসাব হলো ৮৫ গ্রাম স্বর্ণ বা ৫৯৫ গ্রাম রূপার সমমূল্য সম্পদ।
এক বছর পূর্ণ হওয়া
• ব্যবসায়িক জমির মূল্য বা আয় এক বছর ধরে মালিকানাধীন থাকতে হবে।
যাকাতের হার
• ব্যবসায়িক জমির উপর যাকাতের হার হলো ২.৫
কুরআনের দলিল
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَنفِقُوا مِن طَيِّبَاتِ مَا كَسَبْتُمْ وَمِمَّا أَخْرَجْنَا لَكُم مِّنَ الْأَرْضِ
উচ্চারণ:
ইয়া আইয়ুহাল্লাজিনা আমানু আনফিকু মিন তাইইবাতি মা কাসাবতুম ওয়া মিম্মা আখরাজনা লাকুম মিনাল আরদ।
অর্থ:
হে মুমিনগণ, তোমরা তোমাদের উপার্জিত পবিত্র বস্ত্র এবং আমি তোমাদের জন্য ভূমি থেকে যা উৎপাদন করেছি তা থেকে ব্যয় করো।
[সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২৬৭]
হাদিসের দলিল
فِيمَا سَقَتِ السَّمَاءُ وَالعُيُونُ أَوْ كَانَ عَثَرِيًّا العُشْرُ، وَمَا سُقِيَ بِالنَّضْحِ نِصْفُ العُشْرِ
উচ্চারণ:
ফিমা সাকাতিস সামাউ ওয়াল উইউন আও কান আছারিয়্যুন আল উশরু, ওয়া মা সুঙিয় বিননাদহি নিছফুল উশরি।
অর্থ:
যে ফসল বৃষ্টির পানি বা ঝরনা দ্বারা সেচ করা হয় তার জন্য (যাকাতের হার) দশভাগের একভাগ (১০%)। আর যা কৃত্রিম সেচের মাধ্যমে হয়, তার জন্য (যাকাতের হার) বিশভাগের একভাগ (৫%)।
[সহিহ বুখারি]
সারসংক্ষেপ
জমির যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য জমি থেকে ফসল উৎপাদিত হতে হবে এবং ফসলের পরিমাণ নিসাব পরিমাণ হতে হবে। প্রাকৃতিক সেচের ক্ষেত্রে ফসলের ১০% এবং কৃত্রিম সেচের ক্ষেত্রে ৫% যাকাত প্রদান করতে হবে। ব্যবসায়িক জমির যাকাতের ক্ষেত্রে জমির মূল্য বা আয়ের উপর ২.৫% যাকাত ফরজ হয়। কুরআন ও হাদিসে জমির যাকাত সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে, যা প্রতিটি মুসলমানের জন্য মান্য করা আবশ্যক।
ব্যবসায়িক পণ্যের যাকাত ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত। ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত পণ্য সামগ্রীর উপর যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট শর্ত রয়েছে। এই শর্তগুলো পূরণ হলে ব্যবসায়িক পণ্যের উপর যাকাত আদায় করতে হবে।
ব্যবসায়িক পণ্যের যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত:
নিসাব পরিমাণ সম্পদ
• ব্যবসায়িক পণ্যের যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হতে হবে। নিসাব হলো ৮৫ গ্রাম স্বর্ণ বা ৫৯৫ গ্রাম রূপার সমমূল্য সম্পদ।
এক বছর পূর্ণ হওয়া
• ব্যবসায়িক পণ্যের মূল্য এক বছর ধরে মালিকানাধীন থাকতে হবে। ইসলামী হিজরি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এক বছর পূর্ণ হলে যাকাত ফরজ হবে।
ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য
• যেসব পণ্য ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে মুনাফা অর্জনের জন্য রাখা হয়, সেসব পণ্যের উপর যাকাত ফরজ হবে। ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য রাখা পণ্যের উপর যাকাত ফরজ নয়।
প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ
• যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য সম্পদ অবশ্যই প্রয়োজনের অতিরিক্ত হতে হবে। অর্থাৎ যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য মৌলিক চাহিদা পূরণের পর বাকি সম্পদ নিসাব পরিমাণ হতে হবে।
যাকাতের হার
• ব্যবসায়িক পণ্যের যাকাতের হার হলো ২.৫%।
• উদাহরণস্বরূপ ব্যবসায়িক পণ্যের যাকাতের হিসাব
মোট পণ্যের মূল্য নির্ধারণ
• আপনার ব্যবসার সব পণ্যের বর্তমান বাজার মূল্য নির্ধারণ করবেন।
• উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার পণ্যের মোট মূল্য ১০ লাখ টাকা হয়।
যাকাতের হিসাব
• মোট সম্পদের ২.৫% হিসেবে যাকাত নির্ধারণ করবেন।
• ১০ লাখ টাকা × ২.৫% = ২৫,০০০ টাকা
কুরআনের আদেশ
خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِم بِهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْ إِنَّ صَلَاتَكَ سَكَنٌ لَّهُمْ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
উচ্চারণ:
খুজ্ মিন আমওয়ালিহিম সাদাকাতান তুতাহিরুহুম ওয়া তুজাক্কিহিম বিহা ওয়াসাল্লি আলাইহিম ইন্না সালাতাকা সাকানুল্লাহুম। ওয়াল্লাহু সামীউন আলীম।
অর্থ:
তাদের ধন-সম্পদ থেকে সদকা গ্রহণ কর, এর মাধ্যমে তুমি তাদেরকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করবে এবং তাদের জন্য দোয়া কর। নিঃসন্দেহে তোমার দোয়া তাদের জন্য প্রশান্তি। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।
[সূরা আত-তাওবা, আয়াত ১০৩]
হাদিসের নির্দেশনা
قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ اللَّهَ فَرَضَ عَلَيْهِمْ زَكَاةَ أَمْوَالِهِمْ تُؤْخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ وَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ
উচ্চারণ:
কালা আন-নবিয়্যু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম: ইন্নাল্লাহা ফারদা আলাইহিম যাকাত আমওয়ালিহিম তুউখাযু মিন আগনিয়াইহিম ওয়া তুরাদ্দু আলা ফুকারাইহিম।
অর্থ:
নবী (সা.) বলেন: আল্লাহ তাদের উপর তাদের সম্পদের যাকাত ফরজ করেছেন, যা তাদের ধনীদের থেকে গ্রহণ করা হবে এবং তাদের দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
[সহিহ বুখারি ও মুসলিম]
সারসংক্ষেপ
দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় ব্যবসায়িক পণ্য সামগ্রীর উপর যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হতে হবে, সম্পদ এক বছর ধরে রাখতে হবে, এবং তা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতে হবে। যাকাতের হার হলো ২.৫%। কুরআন ও হাদিসে ব্যবসায়িক পণ্যের যাকাত সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে, যা প্রতিটি মুসলমানের জন্য মান্য করা আবশ্যক।