নিসাব হলো নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ যা একজন মুসলমানের কাছে এক বছর ধরে অবশিষ্ট থাকে এবং যার পরিমাণ নির্ধারিত সীমা ছাড়িয়ে গেলে যাকাত প্রদান করা ফরজ হয়। নিসাবের পরিমাণ বিভিন্ন ধরণের সম্পদের জন্য ভিন্ন হতে পারে, যেমন সোনা, রূপা, নগদ অর্থ, ব্যবসায়ের পণ্য ইত্যাদি।
নিসাবের গুরুত্ব -
অর্থনৈতিক সাম্য: নিসাবের মাধ্যমে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে অর্থনৈতিক সাম্যতা রক্ষা করা হয়।
সমাজের কল্যাণ: নিসাবের মাধ্যমে সমাজের দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের সাহায্য করা হয়।
আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধি: নিসাব প্রদান ব্যক্তিগত সম্পদের পরিশুদ্ধি ও আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধন করে।
নিসাবের বিবরণ -
সোনা ও রূপা:
সোনা: ৭.৫ তোলা (৮৭.৪৮ গ্রাম)
রূপা: ৫২.৫ তোলা (৬১২.৩৬ গ্রাম)
নগদ অর্থ ও অন্যান্য সম্পদ -
নগদ অর্থ, ব্যবসায়ের পণ্য এবং সঞ্চয়ের উপর যাকাত নির্ধারণ করা হয়। যদি এই সম্পদের মোট পরিমাণ নিসাবের সমান বা বেশি হয় তবে যাকাত ফরজ হয়।
خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِمْ بِهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْ ۖ إِنَّ صَلَاتَكَ سَكَنٌ لَّهُمْ ۗ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
উচ্চারণ:
খুযْ মিনْ আমওয়ালিহিমْ সাদাকাতানْ তুতাহহিরুহুমْ ওয়াতুজাক্কিহিমْ বিহা ওয়াসাল্লি 'আলাইহিমْ, ইন্না সালাতাকা সাকানুল্লাহুমْ, ওয়াল্লাহু সামী'উনْ 'আলীম।"
অর্থ:
তাদের ধন-সম্পদ থেকে যাকাত গ্রহণ কর, এর মাধ্যমে তুমি তাদের পবিত্র কর এবং পরিশুদ্ধ করবে এবং তাদের জন্য দোয়া কর। তোমার দোয়া তাদের জন্য শান্তির কারণ হবে। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।"
[সূরা আত-তওবা, ৯:১০৩]
وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ ۚ وَمَا تُقَدِّمُوا لِأَنفُسِكُم مِّنْ خَيْرٍ تَجِدُوهُ عِندَ اللَّهِ ۗ إِنَّ اللَّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ
উচ্চারণ:
ওয়া আকীমুস্ সালাতা ওয়া আাতুয্ যাকাতা ওয়ামা তুক্বাদ্দিমু লি'আনফুসিকুমْ মিনْ খাইরিনْ তাজিদূহু 'ইন্দাল্লাহি, ইন্নাল্লাহা বিমা তা'মালুনা বাসীর।
অর্থ:
নামাজ কায়েম কর এবং যাকাত প্রদান কর। তোমরা নিজেদের জন্য যাকাত হিসাবে যা কিছু অগ্রিম পাঠাবে, আল্লাহর নিকট তা পাবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের কাজ কর্ম দেখেন।
[সূরা আল-বাকারা, ২:১১০]
عَنْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: بُنِيَ الْإِسْلَامُ عَلَى خَمْسٍ: شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَإِقَامِ الصَّلَاةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ، وَحَجِّ الْبَيْتِ.
উচ্চারণ:
আনি ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা ক্বাল: ক্বাল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম: 'বুনিয়াল ইসলামু 'আলা খমস: শাহাদাতি আন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান রাসূলুল্লাহ, ওয়া ইকামিস সালাতি, ওয়া ইতা'ইয যাকাতি, ওয়া সাওমি রমাদান, ওয়া হজ্জিল বাইত।'
অর্থ:
ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (সঃ) বলেছেন, 'ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত: আল্লাহর একত্বে সাক্ষ্য দেয়া, নামাজ কায়েম করা, যাকাত প্রদান করা, রমজানের রোজা রাখা এবং হজ পালন করা।'"
[সহিহ বুখারি, হাদিস নং ১৩৯৫]
عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: أَمَرَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ أَقُومَ عَلَى جَذَاذِ النَّخْلِ فَأَخُذَ لَهُ مِنْ كُلِّ أَرْبَعِينَ دِينَارًا دِينَارًا
উচ্চারণ:
আন্ আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু, ক্বাল: আমারানী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আন্ আকুমা 'আলা জাজাযিন নাখলি ফাখুছা লাহু মিন্ কুল্লি আরবাইনা দিনারান দিনারান।
অর্থ:
আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, 'আমার কাছে রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর পক্ষ থেকে এই আদেশ এসেছে যে, যেখানে যেখানে সোনা ও রূপা আছে সেখান থেকে প্রতি চল্লিশে এক অংশ যাকাত দিতে হবে।
[সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৯৮২]
নিসাবের মাধ্যমে যাকাত প্রদান একজন মুসলমানের জন্য আর্থিক দায়বদ্ধতা ও সামাজিক দায়িত্বের বহিঃপ্রকাশ। এটি মুসলিম সমাজে সহানুভূতি, সহানুভূতি ও সহযোগিতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।