ইসলামে যাকাত ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের একটি এবং এটি মুসলমানদের জন্য ফরজ (অবশ্য পালনীয়)। স্বর্ণের যাকাত প্রদান করা মুসলমানদের উপর একটি বাধ্যতামূলক কর্তব্য। নিচে স্বর্ণের যাকাত সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হলো
স্বর্ণের যাকাতের পরিমাণ
নিসাব: স্বর্ণের যাকাতের জন্য নির্ধারিত নিসাব হলো ২০ মিসকাল (প্রায় ৮৫ গ্রাম বা ৭.৫ তোলা) স্বর্ণ। যদি কারো কাছে এই পরিমাণ বা তার বেশি স্বর্ণ থাকে এবং তা এক বছর ধরে থাকে, তাহলে তার উপর যাকাত ফরজ হবে।
হার:
স্বর্ণের যাকাতের হার হলো ২.৫%। অর্থাৎ, স্বর্ণের মোট পরিমাণের ২.৫% যাকাত হিসেবে প্রদান করতে হবে।
স্বর্ণের যাকাতের হিসাব
স্বর্ণের পরিমাণ নির্ণয়: প্রথমে আপনি কতটুকু স্বর্ণের মালিক তা নির্ণয় করবেন। স্বর্ণের গহনা, সোনা বার বা অন্য যে কোনো রূপে থাকা স্বর্ণের মোট ওজন পরিমাপ করবেন।
যাকাতের হিসাব: মোট স্বর্ণের ওজনের ২.৫% হিসেবে যাকাত নির্ধারণ করবেন।
যাকাত প্রদান পদ্ধতি পরিমাণ নির্ধারণ
উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার কাছে ১০০ গ্রাম স্বর্ণ থাকে, তাহলে এর ২.৫% যাকাত হবে ২.৫ গ্রাম স্বর্ণ।
মূল্য নির্ধারণ:
আপনি স্বর্ণের বর্তমান বাজার মূল্য নির্ধারণ করে ২.৫% হিসাবে টাকা প্রদান করতে পারেন অথবা সরাসরি স্বর্ণ প্রদান করতে পারেন।
স্বর্ণের যাকাত না দেওয়ার শাস্তি –
مَا مِنْ صَاحِبِ كَنْزٍ لاَ يُؤَدِّى زَكَاتَهُ إِلاَّ أُحْمِىَ عَلَيْهِ فِى نَارِ جَهَنَّمَ فَيُجْعَلُ صَفَائِحَ فَيُكْوَى بِهَا جَنْبَاهُ وَجَبِينُهُ حَتَّى يَحْكُمَ اللَّهُ بَيْنَ عِبَادِهِ فِى يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ
উচ্চারণ:
মা মিন সাহীবি কানযিন লা ইয়ু'আদ্দি যাকাতাহু ইল্লা উহমিয়া আলাইহি ফি নারি জাহান্নামা ফাইউজ'আলু সাফায়িহা ফাইউকওয়া বিহা জানবাহু ওয়া জাবিনুহু হাত্তা ইয়াহকুমাল্লাহু বায়না ইবাদিহি ফি ইয়াউমিন কান মিকদারুহু খামসিনা আলফা সানাতিন।
অর্থ:
যে কোনো ব্যক্তি যে ধনসম্পদ জমা করে এবং যাকাত প্রদান করে না, কিয়ামতের দিন সেই সম্পদকে জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দিয়ে তার পার্শ্ব ও কপালে দাগ লাগানো হবে, যতক্ষণ না আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে ফয়সালা করেন।
[সহিহ মুসলিম]
উদাহরণ স্বরূপ স্বর্ণের যাকাতের হিসাব
• মালিকানাধীন স্বর্ণের পরিমাণ: ১০০ গ্রাম
• যাকাতের হার: ২.৫%
• যাকাতের পরিমাণ: ১০০ গ্রাম × ২.৫% = ২.৫ গ্রাম
অথবা
• মালিকানাধীন স্বর্ণের মূল্য: ১,০০,০০০ টাকা
• যাকাতের হার: ২.৫%
• যাকাতের পরিমাণ: ১,০০,০০০ টাকা × ২.৫% = ২,৫০০ টাকা
সারসংক্ষেপ
স্বর্ণের যাকাত ইসলামে ফরজ এবং এর নির্ধারিত নিসাব ও হার অনুসারে যাকাত প্রদান করতে হবে। মুসলমানদের উচিত যাকাত প্রদানের মাধ্যমে নিজেদের সম্পদ পবিত্র করা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। যাকাত না দিলে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে, যা কুরআন ও হাদিসে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
চেক এবং ব্যাংক নোটের যাকাত প্রদান করা ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য এবং এটি সম্পদের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের উপর নির্ভর করে। চেক এবং ব্যাংক নোটের যাকাত সম্পর্কিত নির্দেশনা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
নিসাবের পরিমাণ
চেক এবং ব্যাংক নোটের যাকাতের জন্য নিসাব হলো ৫৯৫ গ্রাম রূপা বা ৮৫ গ্রাম স্বর্ণের সমমূল্য সম্পদ। যদি কারো কাছে এই পরিমাণ বা তার বেশি সম্পদ থাকে এবং তা এক বছর ধরে থাকে, তাহলে তার উপর যাকাত ফরজ হবে।
যাকাতের হার
চেক এবং ব্যাংক নোটের যাকাতের হার হলো ২.৫%। অর্থাৎ, মোট সম্পদের ২.৫% যাকাত হিসেবে প্রদান করতে হবে।
চেক ও ব্যাংক নোটের যাকাতের হিসাব মোট সম্পদ নির্ধারণ
প্রথমে আপনার সব চেক, ব্যাংক অ্যাকাউন্টে থাকা অর্থ, নগদ অর্থ, এবং অন্যান্য সম্পদগুলোর মোট মূল্য নির্ধারণ করবেন।
যাকাতের হিসাব
মোট সম্পদের ২.৫% হিসেবে যাকাত নির্ধারণ করবেন।
যাকাত প্রদানের উদাহরণ মোট সম্পদ নির্ধারণ
• ব্যাংক অ্যাকাউন্টে থাকা অর্থ: ১০,০০,০০০ টাকা
• চেকের মাধ্যমে পাওন অর্থ: ২,০০,০০০ টাকা
• নগদ অর্থ: ৫০,০০০ টাকা
• মোট সম্পদ: ১০,০০,০০০ + ২,০০,০০০ + ৫০,০০০ = ১২,৫০,০০০ টাকা
যাকাতের হিসাব
• যাকাতের হার: ২.৫%
• যাকাতের পরিমাণ: ১২,৫০,০০০ টাকা × ২.৫% = ৩১,২৫০ টাকা
যাকাত প্রদানের পদ্ধতি
• যাকাতের পরিমাণ নির্ধারণ করার পর, আপনি এই অর্থ দরিদ্র, অভাবী, এবং যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করতে পারেন।
• যাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে কুরআন এবং হাদিসের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।
কুরআন ও হাদিসের উদ্ধৃতি
خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِم بِهَا
উচ্চারণ:
খুজ্ মিন আমওয়ালিহিম সাদাকাতান তুতাহিরুহুম ওয়া তুজাক্কিহিম বিহা।
অর্থ:
তাদের ধন-সম্পদ থেকে সদকা গ্রহণ করো, এর মাধ্যমে তুমি তাদেরকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করবে।
[সূরা আত-তাওবা, আয়াত ১০৩]
হাদিসের নির্দেশনা
إِنَّ اللَّهَ فَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً تُؤْخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ فَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ
উচ্চারণ:
ইন্নাল্লাহা ফারাদা আলাইহিম সাদাকাতান তুউখাযু মিন আগনিয়াইহিম ফাতুরাদ্দু আলা ফুকারাইহিম।
অর্থ:
নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাদের উপর একটি দান ফরজ করেছেন যা তাদের ধনীদের থেকে গ্রহণ করা হবে এবং তাদের দরিদ্রদের মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
[সহিহ বুখারি ও মুসলিম]
সারসংক্ষেপ
চেক এবং ব্যাংক নোটের যাকাত প্রদান একটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী দায়িত্ব। নিসাব এবং হার অনুযায়ী যাকাতের হিসাব নির্ধারণ করে দরিদ্র ও অভাবী মানুষের মধ্যে তা বিতরণ করতে হবে। যাকাত প্রদানের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায় এবং সম্পদ পবিত্র হয়। যাকাত না দিলে কিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
ব্যবসায়ীদের জন্য যাকাত প্রদান একটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী দায়িত্ব। ব্যবসার জন্য ব্যবহৃত পণ্যের যাকাত প্রদানের নির্দিষ্ট নিয়ম ও শর্ত রয়েছে। এখানে ব্যবসায়ী পণ্যের যাকাত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল
নিসাব নির্ধারণ
নিসাবের পরিমাণ: ব্যবসায়ী পণ্যের যাকাতের জন্য নির্ধারিত নিসাব হলো ৫৯৫ গ্রাম রূপা বা ৮৫ গ্রাম স্বর্ণের সমমূল্য সম্পদ। যদি ব্যবসায়ীর মোট সম্পদ এই পরিমাণ বা তার বেশি হয় এবং তা এক বছর ধরে থাকে, তাহলে তার উপর যাকাত ফরজ হবে
যাকাতের হার
ব্যবসায়ী পণ্যের যাকাতের হার হলো ২.৫%। অর্থাৎ, মোট পণ্যের মূল্যের ২.৫% যাকাত হিসেবে প্রদান করতে হবে।
ব্যবসায়ী পণ্যের যাকাতের হিসাব
মোট পণ্যের মূল্য নির্ধারণ: প্রথমে আপনার ব্যবসার সকল পণ্যের বর্তমান বাজার মূল্য নির্ধারণ করবেন।
অন্যান্য সম্পদ
ব্যবসার জন্য ব্যবহৃত নগদ অর্থ, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের অর্থ, চেক ইত্যাদির মূল্যও যাকাতের হিসাবের অন্তর্ভুক্ত হবে।
মোট সম্পদ নির্ধারণ
সমস্ত সম্পদের মোট মূল্য নির্ধারণ করবেন।
যাকাতের হিসাব
মোট সম্পদের ২.৫% হিসেবে যাকাত নির্ধারণ করবেন।
যাকাত প্রদানের উদাহরণ
• মোট সম্পদ নির্ধারণ:
• পণ্যের মোট মূল্য: ৫,০০,০০০ টাকা
• ব্যাংক অ্যাকাউন্টে থাকা অর্থ: ২,০০,০০০ টাকা
• চেকের মাধ্যমে পাওন অর্থ: ১,০০,০০০ টাকা
• নগদ অর্থ: ৫০,০০০ টাকা
• মোট সম্পদ: ৫,০০,০০০ + ২,০০,০০০ + ১,০০,০০০ + ৫০,০০০ = ৮,৫০,০০০ টাকা
যাকাতের হিসাব
• যাকাতের হার: ২.৫%
• যাকাতের পরিমাণ: ৮,৫০,০০০ টাকা × ২.৫% = ২১,২৫০ টাকা
যাকাত প্রদানের পদ্ধতি
• যাকাতের পরিমাণ নির্ধারণ করার পর, আপনি এই অর্থ দরিদ্র, অভাবী, এবং যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করতে পারেন।
• যাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে কুরআন এবং হাদিসের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।
কুরআনের আদেশ
خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِم بِهَا
উচ্চারণ:
খুজ্ মিন আমওয়ালিহিম সাদাকাতান তুতাহিরুহুম ওয়া তুজাক্কিহিম বিহা।
অর্থ:
তাদের ধন-সম্পদ থেকে সদকা গ্রহণ করো, এর মাধ্যমে তুমি তাদেরকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করবে।
[সূরা আত-তাওবা, আয়াত ১০৩]
হাদিসের নির্দেশনা
إِنَّ اللَّهَ فَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً تُؤْخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ فَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ
উচ্চারণ:
ইন্নাল্লাহা ফারাদা আলাইহিম সাদাকাতান তুউখাযু মিন আগনিয়াইহিম ফাতুরাদ্দু আলা ফুকারাইহিম।
অর্থ:
নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাদের উপর একটি দান ফরজ করেছেন যা তাদের ধনীদের থেকে গ্রহণ করা হবে এবং তাদের দরিদ্রদের মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
[সহিহ বুখারি ও মুসলিম]
সারসংক্ষেপ
ব্যবসায়ী পণ্যের যাকাত প্রদান একটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী দায়িত্ব। নিসাব এবং হার অনুযায়ী যাকাতের হিসাব নির্ধারণ করে দরিদ্র ও অভাবী মানুষের মধ্যে তা বিতরণ করতে হবে। যাকাত প্রদানের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায় এবং সম্পদ পবিত্র হয়। যাকাত না দিলে কিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
ইসলামী শরিয়াতে জীব-জন্তুর যাকাত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাধারণত গৃহপালিত প্রাণী যেমন উট, গরু, ছাগল ইত্যাদির জন্য যাকাত ফরজ হয়। এই প্রাণীগুলোর যাকাত প্রদানের জন্য নির্দিষ্ট নিসাব এবং হার নির্ধারিত রয়েছে। নিচে জীব-জন্তুর যাকাত সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হলো -
উটের যাকাত
নিসাব:
৫ উট হলে যাকাত ফরজ হবে।
হার -
• ৫ থেকে ৯ উটের জন্য ১টি ছাগল বা ভেড়া।
• ১০ থেকে ১৪ উটের জন্য ২টি ছাগল বা ভেড়া।
• ১৫ থেকে ১৯ উটের জন্য ৩টি ছাগল বা ভেড়া।
• ২০ থেকে ২৪ উটের জন্য ৪টি ছাগল বা ভেড়া।
• ২৫ থেকে ৩৫ উটের জন্য ১টি এক বছরের বাচ্চা উট।
• ৩৬ থেকে ৪৫ উটের জন্য ১টি দুই বছরের বাচ্চা উট।
• ৪৬ থেকে ৬০ উটের জন্য ১টি তিন বছরের বাচ্চা উট।
• ৬১ থেকে ৭৫ উটের জন্য ১টি চার বছরের বাচ্চা উট।
• এর বেশি হলে প্রতি নির্দিষ্ট সংখ্যার জন্য নির্ধারিত পরিমাণে যাকাত দিতে হবে।
গরুর যাকাত
নিসাব:
৩০ গরু হলে যাকাত ফরজ হবে।
হার -
• ৩০ থেকে ৩৯ গরুর জন্য ১টি এক বছরের বাচ্চা গরু।
• ৪০ থেকে ৫৯ গরুর জন্য ১টি দুই বছরের বাচ্চা গরু।
• এর বেশি হলে প্রতি নির্দিষ্ট সংখ্যার জন্য নির্ধারিত পরিমাণে যাকাত দিতে হবে।
ছাগল ও ভেড়ার যাকাত
নিসাব: ৪০ ছাগল বা ভেড়া হলে যাকাত ফরজ হবে।
হার -
• ৪০ থেকে ১২০ ছাগল বা ভেড়ার জন্য ১টি ছাগল বা ভেড়া।
• ১২১ থেকে ২০০ ছাগল বা ভেড়ার জন্য ২টি ছাগল বা ভেড়া।
• ২০১ থেকে ৩০০ ছাগল বা ভেড়ার জন্য ৩টি ছাগল বা ভেড়া।
• এর বেশি হলে প্রতি ১০০ ছাগল বা ভেড়ার জন্য ১টি ছাগল বা ভেড়া।
কুরআনের আদেশ
خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِم بِهَا
উচ্চারণ:
খুজ্ মিন আমওয়ালিহিম সাদাকাতান তুতাহিরুহুম ওয়া তুজাক্কিহিম বিহা।
অর্থ:
তাদের ধন-সম্পদ থেকে সদকা গ্রহণ করো, এর মাধ্যমে তুমি তাদেরকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করবে।
[সূরা আত-তাওবা, আয়াত ১০৩]
হাদিসের নির্দেশনা
مَا مِنْ صَاحِبِ كَنْزٍ لاَ يُؤَدِّى زَكَاتَهُ إِلاَّ أُحْمِىَ عَلَيْهِ فِى نَارِ جَهَنَّمَ فَيُجْعَلُ صَفَائِحَ فَيُكْوَى بِهَا جَنْبَاهُ وَجَبِينُهُ حَتَّى يَحْكُمَ اللَّهُ بَيْنَ عِبَادِهِ فِى يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَة
বাংলা উচ্চারণ:
মা মিন সাহীবি কানযিন লা ইয়ু'আদ্দি যাকাতাহু ইল্লা উহমিয়া আলাইহি ফি নারি জাহান্নামা ফাইউজ'আলু সাফায়িহা ফাইউকওয়া বিহা জানবাহু ওয়া জাবিনুহু হাত্তা ইয়াহকুমাল্লাহু বায়না ইবাদিহি ফি ইয়াউমিন কান মিকদারুহু খামসিনা আলফা সানাতিন।
অর্থ:
যে কোনো ব্যক্তি যে ধনসম্পদ জমা করে এবং যাকাত প্রদান করে না, কিয়ামতের দিন সেই সম্পদকে জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দিয়ে তার পার্শ্ব ও কপালে দাগ লাগানো হবে, যতক্ষণ না আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে ফয়সালা করেন।"
[সহিহ মুসলিম]
সারসংক্ষেপ
জীব-জন্তুর যাকাত ইসলামে একটি বাধ্যতামূলক দায়িত্ব। নিসাব এবং হার অনুযায়ী যাকাতের হিসাব নির্ধারণ করে দরিদ্র ও অভাবী মানুষের মধ্যে তা বিতরণ করতে হবে। যাকাত প্রদানের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায় এবং সম্পদ পবিত্র হয়। যাকাত না দিলে কিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
ফল এবং ফসলের যাকাত ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব এবং এর সুনির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন রয়েছে। ফল ও ফসলের যাকাত আদায়ের পদ্ধতি, পরিমাণ এবং বিধান নিম্নে উল্লেখ করা হলো -
নিসাব নির্ধারণ -
• ফল এবং ফসলের যাকাতের জন্য নির্ধারিত নিসাব হলো ৫ ওয়াসক। ১ ওয়াসক হলো প্রায় ৬০ সা' (প্রাচীন আরবের পরিমাপ একক)। ১ সা' প্রায় ২.৪০ কেজি হিসাবে ধরা হয়। সুতরাং, ৫ ওয়াসক হলো প্রায় ৬০৫২.৪০ = ৭২০ কেজি।
• যদি কারো কাছে ৭২০ কেজি বা তার বেশি ফল বা ফসল থাকে, তাহলে তার উপর যাকাত ফরজ হবে।
যাকাতের হার -
• সেচের পদ্ধতি অনুসারে: যাকাতের হার নির্ভর করে সেচের পদ্ধতির উপর।
• প্রাকৃতিক সেচ (বৃষ্টি, ঝরনা, নদী ইত্যাদি) দ্বারা সেচ করা হলে, যাকাতের হার হলো মোট ফল বা ফসলের ১০%।
• কৃত্রিম সেচ (যেমনঃ পানি উত্তোলন, পাম্প ইত্যাদি) দ্বারা সেচ করা হলে, যাকাতের হার হলো মোট ফল বা ফসলের ৫%।
যাকাত প্রদানের উদাহরণ -
প্রাকৃতিক সেচ -
• যদি কোনো কৃষক ১০০০ কেজি ফসল উৎপাদন করে এবং তা প্রাকৃতিক সেচের মাধ্যমে হয়, তাহলে যাকাত হবে -
• যাকাতের হার: ১০%
• যাকাতের পরিমাণ: ১০০০ কেজি × ১০% = ১০০ কেজি
কৃত্রিম সেচ -
• যদি কোনো কৃষক ১০০০ কেজি ফসল উৎপাদন করে এবং তা কৃত্রিম সেচের মাধ্যমে হয়, তাহলে যাকাত হবে:
• যাকাতের হার: ৫%
• যাকাতের পরিমাণ: ১০০০ কেজি × ৫% = ৫০ কেজি
ফল ও ফসলের যাকাত প্রদানের পদ্ধতি -
• যাকাতের পরিমাণ নির্ধারণ করার পর, তা দরিদ্র, অভাবী, এবং যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে।
• যাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে কুরআন এবং হাদিসের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।
গুপ্তধন, অর্থাৎ মাটির নিচে বা অন্য কোথাও লুকানো ধনসম্পদ, ইসলামে এ ধরনের সম্পদের যাকাত আদায়ের বিধান রয়েছে। নিম্নে গুপ্তধনের যাকাত সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হলো -
গুপ্তধনের যাকাতের নিয়ম
• গুপ্তধন আবিষ্কারের পর তা পরিমাণের ২০% যাকাত হিসেবে প্রদান করতে হবে। এ পরিমাণকে "খুমস" (খামস) বলা হয়।
• যদি আবিষ্কৃত ধনসম্পদ মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত মুদ্রা বা সম্পদ হয়, তবে তা যাকাতের আওতাভুক্ত হবে।
• গুপ্তধন আবিষ্কারের পর তা এক বছর ধরে রাখার প্রয়োজন নেই। আবিষ্কারের সাথে সাথেই যাকাত প্রদান করতে হবে।
গুপ্তধনের যাকাতের হার
• গুপ্তধনের যাকাতের হার হলো ২০% (১/৫)।
যাকাত প্রদানের পদ্ধতি
গুপ্তধনের যাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে পরিমাণ নির্ধারণ করার পর তা দরিদ্র, অভাবী, এবং যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে।
কুরআনের আদেশ
وَاعْلَمُوا أَنَّمَا غَنِمْتُم مِّن شَيْءٍ فَأَنَّ لِلَّهِ خُمُسَهُ وَلِلرَّسُولِ وَلِذِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينِ وَابْنِ السَّبِيلِ
উচ্চারণ:
ওয়াআলামু আন্নামা গানিমতুম মিন শাই'য়িন ফা'ন্না লিল্লাহি খুমুসাহু ওয়া লিররাসূলি ওয়ালিজিল কুরবা ওয়াল ইয়াতামা ওয়াল মাসাকিনি ওয়াবনি সাবিল।"
অর্থ:
আর জেনে রাখো, তোমরা যা কিছুই যুদ্ধলব্ধ সম্পদ (গানিমত) পাও, তার পঞ্চমাংশ (খুমস) আল্লাহর জন্য, রাসূলের জন্য, তাঁর নিকট আত্মীয়দের জন্য, ইয়াতিমদের জন্য, মিসকিনদের জন্য এবং মুসাফিরদের জন্য।"
[সূরা আল-আনফাল, আয়াত ৪১]
গুপ্তধনের যাকাত সম্পর্কে হাদিস
فِي الرِّكَازِ الخُمُسُ
উচ্চারণ:
ফি রিকাজিল খুমস।
অর্থ:
গুপ্তধনে পঞ্চমাংশ (২০%) যাকাত (খুমস) রয়েছে।
[সহিহ বুখারি ও মুসলিম]
উদাহরণস্বরূপ গুপ্তধনের যাকাতের হিসাব
• আবিষ্কৃত গুপ্তধনের পরিমাণ: ১০০,০০০ টাকা
• যাকাতের হার: ২০%
• যাকাতের পরিমাণ: ১০০,০০০ টাকা × ২০% = ২০,০০০ টাকা
সারসংক্ষেপ
গুপ্তধনের যাকাত ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এ জন্য নির্ধারিত হার হলো ২০% (১/৫)। গুপ্তধন আবিষ্কারের সাথে সাথেই যাকাত প্রদান করতে হবে এবং তা দরিদ্র ও অভাবী মানুষের মধ্যে বিতরণ করতে হবে। যাকাত প্রদানের মাধ্যমে সম্পদ পবিত্র হয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়।
যাকাতুল ফিতর ইসলামের একটি বাধ্যতামূলক দায়িত্ব যা রমজান মাসের শেষে ঈদুল ফিতরের নামাজের আগে প্রদান করা হয়। এটি বিশেষত দরিদ্র ও অভাবী মানুষের সাহায্যের উদ্দেশ্যে নির্ধারিত হয়েছে। যাকাতুল ফিতরের মাধ্যমে মুসলমানরা তাদের রোজার সময়ে ঘটে যাওয়া ছোটখাট ভুলত্রুটি সংশোধন করতে পারে এবং ঈদের আনন্দে সকলকে শরিক করতে পারে।
যাকাতুল ফিতরের পরিমাণ
• প্রত্যেক মুসলিম, পুরুষ বা মহিলা, শিশু বা প্রাপ্তবয়স্কের উপর যাকাতুল ফিতর প্রদান করা বাধ্যতামূলক।
• যাকাতুল ফিতরের পরিমাণ হলো এক সা’ (প্রায় ২.৫ কেজি) খাদ্য সামগ্রী যেমন গম, যব, খেজুর, কিসমিস, পনির ইত্যাদি।
• খাদ্য সামগ্রীর পরিবর্তে সমমূল্যের টাকা বা অর্থও প্রদান করা যেতে পারে।
যাকাতুল ফিতরের সময়সীমা -
• যাকাতুল ফিতর রমজান মাসের শেষ দিনে সূর্যাস্তের পর থেকে ঈদুল ফিতরের নামাজের আগে প্রদান করা উত্তম।
• তবে যাকাতুল ফিতর রমজান মাসের শুরু থেকেও প্রদান করা যেতে পারে।
যাকাতুল ফিতরের প্রাপ্য ব্যক্তি
• যাকাতুল ফিতর মূলত দরিদ্র, মিসকিন, ঋণগ্রস্ত, মুসাফির এবং যাদের উপার্জন সক্ষমতা নেই তাদের জন্য নির্ধারিত।
কুরআনের আদেশ
خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِم بِهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْ إِنَّ صَلَاتَكَ سَكَنٌ لَّهُمْ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
উচ্চারণ:
খুজ্ মিন আমওয়ালিহিম সাদাকাতান তুতাহিরুহুম ওয়া তুজাক্কিহিম বিহা ওয়াসাল্লি আলাইহিম ইন্না সালাতাকা সাকানুল্লাহুম। ওয়াল্লাহু সামীউন আলীম।
অর্থ:
তাদের ধন-সম্পদ থেকে সদকা গ্রহণ কর, এর মাধ্যমে তুমি তাদেরকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করবে এবং তাদের জন্য দোয়া কর। নিঃসন্দেহে তোমার দোয়া তাদের জন্য প্রশান্তি। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।
[সূরা আত-তাওবা, আয়াত ১০৩]
হাদিসের নির্দেশনা –
فَرَضَ رَسُولُ اللَّهِ زَكَاةَ الْفِطْرِ طُهْرَةً لِلصَّائِمِ مِنَ اللَّغْوِ وَالرَّفَثِ وَطُعْمَةً لِلْمَسَاكِينِ
উচ্চারণ:
ফারদা রাসুলুল্লাহি যাকাতাল ফিতরি তুহরাতান লিসসায়িমি মিনাল লাঘবি ওয়াররাফাসি ওয়া তু'মাতান লিল মাসাকিন।
অর্থ:
রাসুলুল্লাহ (সা.) যাকাতুল ফিতরকে ফরজ করেছেন, যা রোজাদারদের অশালীন কথা ও কাজ থেকে পবিত্র করে এবং দরিদ্রদের খাবারের জন্য।"
[আবু দাউদ]
উদাহরণস্বরূপ যাকাতুল ফিতরের হিসাব
• পরিবারের সদস্য সংখ্যা: ৫ জন (স্বামী, স্ত্রী, ৩ সন্তান)
• প্রত্যেকের জন্য যাকাতুল ফিতরের পরিমাণ: ২.৫ কেজি খাদ্য সামগ্রী বা এর সমমূল্যের টাকা
• মোট যাকাতুল ফিতরের পরিমাণ: ৫ জন × ২.৫ কেজি = ১২.৫ কেজি খাদ্য সামগ্রী বা এর সমমূল্যের টাকা
সারসংক্ষেপ
যাকাতুল ফিতর ইসলামের একটি বাধ্যতামূলক দায়িত্ব যা ঈদুল ফিতরের আগে দরিদ্র ও অভাবী মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এটি প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরজ এবং রোজার সময়ে ঘটে যাওয়া ছোটখাট ভুলত্রুটি সংশোধনের একটি মাধ্যম। যাকাতুল ফিতর প্রদান করে মুসলমানরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারে এবং সমাজের দরিদ্র ও অভাবী মানুষের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে পারে।