যাকাত শব্দটি এসেছে আরবি "زكاة" (Zakat) শব্দ থেকে, যার অর্থ পবিত্রতা, প্রবৃদ্ধি এবং দানের মাধ্যমে সম্পদের বিশুদ্ধতা। যাকাত ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি এবং এটি ধনী মুসলমানদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
কুরআনের আলোকে যাকাতের অর্থ
কুরআনে যাকাতকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে উল্লেখ করা হয়েছে এবং যাকাত আদায়কে মুসলমানদের জন্য ফরজ করা হয়েছে। কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে যাকাতের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে
سورة البقرة, الآية وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَارْكَعُوا مَعَ الرَّاكِعِينَ
উচ্চারণ:
ওয়াকিমুস সালাতা ওয়াতুজযাকাতা ওয়ারকাউ মা'আর রাকিউন
অর্থ:
আর নামায কায়েম কর, যাকাত আদায় কর এবং রুকু কর রুকু কারীদের সাথে।
[সূরা আল-বাকারা, আয়াত ৪৩]
سورة التوبة, الآية إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ فَرِيضَةً مِّنَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
উচ্চারণ:
ইন্নামা আস-সাদাকাতু লিলফুকারাই ওয়াল-মাসাকিনি ওয়াল-আমিলিনা আলাইহা ওয়াল-মুয়াল্লাফাতি কুলুবুহুম ওয়া ফির-রিকাবি ওয়াল-গারিমিনা ওয়া ফি সাবিলিল্লাহি ওয়াবনিস সাবিলি ফারিদাতাম মিনাল্লাহি ওয়াল্লাহু আলিমুন হাকিম
অর্থ:
যাকাত তো শুধুমাত্র ফকির-মিসকিন, যাকাতের কাজ নিয়ে যারা নিয়োজিত, নতুন মুসলিম, মুক্তি পেতে চাওয়া ক্রীতদাস, ঋণগ্রস্ত, আল্লাহর পথে সংগ্রামী এবং মুসাফিরদের জন্য নির্ধারিত। এটি আল্লাহর নির্দেশ। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
[সূরা আত-তাওবা, আয়াত ৬০]
হাদিসের আলোকে যাকাতের অর্থ
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিভিন্ন হাদিসে যাকাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لِمُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ حِينَ بَعَثَهُ إِلَى الْيَمَنِ "إِنَّكَ سَتَأْتِي قَوْمًا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ، فَادْعُهُمْ إِلَى شَهَادَةِ أَنْ لا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنِّي رَسُولُ اللَّهِ، فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللَّهَ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ، فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللَّهَ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً تُؤْخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ فَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ، فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ فَإِيَّاكَ وَكَرَائِمَ أَمْوَالِهِمْ
উচ্চারণ:
আন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু 'আনহু) ক্বালা ক্বালা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লি মুআয ইবনে জাবাল হিনা বা'আছাহু ইলা আল-ইয়ামান: 'ইন্নাকা তা'তী কাওমান মিন আহলি আল-কিতাব, ফা'দ'উহুম ইলা শাহাদাতি আন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়া আন্নি রাসুলুল্লাহ, ফা'ইন হুম আতাও লিদ্বালিক ফা'আলিমহুম আন্নাল্লাহ আফতারদা 'আলাইহিম খামসা সালাওয়াতিন ফি কুল্লি ইয়াওমিন ওয়া লাইলা, ফা'ইন হুম আতাও লিদ্বালিক ফা'আলিমহুম আন্নাল্লাহ আফতারদা 'আলাইহিম সাদাকাতান তুও'খাদু মিন আঘনিয়ায়িহিম ফা তুরাদ্দু 'আলা ফুকারায়িহিম, ফা'ইন হুম আতাও লিদ্বালিক ফা ইইয়্যাকা ওয়া কারাইমা আমওয়ালিহিম
অর্থ:
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মুআয (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) কে ইয়েমেনে পাঠিয়েছিলেন, তখন বললেন: "তুমি এমন এক সম্প্রদায়ের কাছে যাচ্ছ, যারা কিতাবধারী। তাদেরকে সাক্ষ্য দিতে বল, যে 'আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল। তারা যদি এটা মেনে নেয়, তাহলে তাদেরকে জানাও যে আল্লাহ তাদের উপর প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরজ করেছেন। তারা যদি এটা মেনে নেয়, তাহলে তাদেরকে জানাও যে আল্লাহ তাদের ধনীদের থেকে যাকাত আদায় করে গরীবদের মধ্যে বিতরণ করতে আদেশ করেছেন। তারা যদি এটা মেনে নেয়, তাহলে তাদের সেরা সম্পদগুলি নেয়া থেকে সাবধান থাক।"
[সহিহ বোখারি, হাদিস নম্বর ১৩৯৫]
যাকাত হলো ইসলামের একটি মৌলিক স্তম্ভ, যা মক্কার প্রাথমিক যুগ থেকে প্রতিষ্ঠিত এবং মদিনায় প্রবর্তিত ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থায় সম্পূর্ণভাবে কার্যকর হয়েছে। যাকাতের মাধ্যমে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে অর্থনৈতিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং সমাজের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান করা হয়।
কুরআনের আলোকে যাকাতের ইতিহাস
কুরআনে যাকাতের বিধান ও ইতিহাস সম্পর্কে বিভিন্ন আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। যাকাতের মাধ্যমে মুসলিম সমাজে সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন নিশ্চিত করা হয়।
وَإِذْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ بَنِي إِسْرَائِيلَ وَبَعَثْنَا مِنْهُمُ اثْنَيْ عَشَرَ نَقِيبًا وَقَالَ اللَّهُ إِنِّي مَعَكُمْ لَئِنْ أَقَمْتُمُ الصَّلَاةَ وَآتَيْتُمُ الزَّكَاةَ وَآمَنْتُمْ بِرُسُلِي وَعَزَّرْتُمُوهُمْ وَأَقْرَضْتُمُ اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا لَأُكَفِّرَنَّ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَلَأُدْخِلَنَّكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ فَمَنْ كَفَرَ بَعْدَ ذَٰلِكَ مِنْكُمْ فَقَدْ ضَلَّ سَوَاءَ السَّبِيلِ
উচ্চারণ:
ওয়াইয আখাযাল্লাহু মীথাক্বা বানী ইসরাঈলা ওয়াবা'ছনা মিনহুমুছনাই আশারা নাকীবা ওয়াক্বালাল্লাহু ইন্নী মাআকুম লাইন আকমতুমুস সালাতা ওয়া আতাইতুমুয যাকাতা ওয়া আমান্তুম বিরুসূলী ওয়া আযযারতুমুহুম ওয়া আক্বরাযতুমুল্লাহা কারদান হাসানান লা উকাফফিরান্না আনকুম সাইয়িয়্যাতিকুম ওয়া লা উদখিলান্নাকুম জান্নাতিন তাজরী মিন তাহতিহাল আনহার ফামান কাফারা বাদা যালিকা মিনকুম ফাক্বাদ দ্বাল্লা সাওয়াস সাবীল
অর্থ:
যখন আল্লাহ বনী ইসরাঈলের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিলেন এবং তাদের থেকে বারোজন নেতাকে পাঠালেন। আল্লাহ বললেন, 'আমি তোমাদের সাথে আছি, যদি তোমরা নামাজ কায়েম কর, যাকাত দাও, আমার রসূলদের প্রতি ঈমান আন, তাদের সম্মান কর এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও, তাহলে আমি তোমাদের পাপ মোচন করব এবং তোমাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবো যেখানে নদীগুলি প্রবাহিত। এরপর যারা অবিশ্বাস করবে তারা সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হবে।
[সূরা আল-মায়েদা, আয়াত ১২]
হাদিসের আলোকে যাকাতের ইতিহাস
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিভিন্ন হাদিসে যাকাতের গুরুত্ব ও বিধান সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لِمُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ حِينَ بَعَثَهُ إِلَى الْيَمَنِ "إِنَّكَ سَتَأْتِي قَوْمًا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ، فَادْعُهُمْ إِلَى شَهَادَةِ أَنْ لا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنِّي رَسُولُ اللَّهِ، فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللَّهَ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ، فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللَّهَ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً تُؤْخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ فَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ، فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ فَإِيَّاكَ وَكَرَائِمَ أَمْوَالِهِمْ
উচ্চারণ:
আন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু 'আনহু) ক্বালা ক্বালা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লি মুআয ইবনে জাবাল হিনা বা'আছাহু ইলা আল-ইয়ামান: 'ইন্নাকা তা'তী কাওমান মিন আহলি আল-কিতাব, ফা'দ'উহুম ইলা শাহাদাতি আন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়া আন্নি রাসুলুল্লাহ, ফা'ইন হুম আতাও লিদ্বালিক ফা'আলিমহুম আন্নাল্লাহ আফতারদা 'আলাইহিম খামসা সালাওয়াতিন ফি কুল্লি ইয়াওমিন ওয়া লাইলা, ফা'ইন হুম আতাও লিদ্বালিক ফা'আলিমহুম আন্নাল্লাহ আফতারদা 'আলাইহিম সাদাকাতান তুও'খাদু মিন আঘনিয়ায়িহিম ফা তুরাদ্দু 'আলা ফুকারায়িহিম, ফা'ইন হুম আতাও লিদ্বালিক ফা ইইয়্যাকা ওয়া কারাইমা আমওয়ালিহিম
অর্থ:
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মুআয (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) কে ইয়েমেনে পাঠিয়েছিলেন, তখন বললেন: "তুমি এমন এক সম্প্রদায়ের কাছে যাচ্ছ, যারা কিতাবধারী। তাদেরকে সাক্ষ্য দিতে বল, যে 'আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল। তারা যদি এটা মেনে নেয়, তাহলে তাদেরকে জানাও যে আল্লাহ তাদের উপর প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরজ করেছেন। তারা যদি এটা মেনে নেয়, তাহলে তাদেরকে জানাও যে আল্লাহ তাদের ধনীদের থেকে যাকাত আদায় করে গরীবদের মধ্যে বিতরণ করতে আদেশ করেছেন। তারা যদি এটা মেনে নেয়, তাহলে তাদের সেরা সম্পদগুলি নেয়া থেকে সাবধান থাক।
[সহিহ বোখারি, হাদিস নম্বর ১৩৯৫]
ইসলামের প্রাথমিক যুগে যাকাত
ইসলামের প্রাথমিক যুগে মক্কার সময়কাল থেকে যাকাতের বিধান প্রবর্তন করা হয়। মদিনায় প্রবর্তিত ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থায় এটি সম্পূর্ণভাবে কার্যকর করা হয়। খলিফা আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু 'আনহু) যখন কিছু গোত্র যাকাত প্রদানে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল, তখন তিনি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন, যা "রিদ্দা যুদ্ধ" নামে পরিচিত। এভাবে যাকাতের বাধ্যতামূলকতা প্রতিষ্ঠিত হয়।
কুরআনের আলোকে যাকাতের তাৎপর্য
কুরআনে যাকাতকে একটি বাধ্যতামূলক ইবাদত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং মুসলমানদের এটি পালন করতে বলা হয়েছে।
لَيْسَ الْبِرَّ أَنْ تُوَلُّوا وُجُوهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلَكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّينَ وَآتَى الْمَالَ عَلَى حُبِّهِ ذَوِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَالسَّائِلِينَ وَفِي الرِّقَابِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَالْمُوفُونَ بِعَهْدِهِمْ إِذَا عَاهَدُوا وَالصَّابِرِينَ فِي الْبَأْسَاءِ وَالضَّرَّاءِ وَحِينَ الْبَأْسِ أُولَئِكَ الَّذِينَ صَدَقُوا وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُتَّقُونَ
উচ্চারণ:
লাইসাল বির্রা আন তুওয়াল্লু উজূহাকুম কিবালাল মাশরিকি ওয়াল মাগরিবি ওয়ালাকিনাল বির্রা মান আমানা বিল্লাহি ওয়াল ইয়াওমিল আখিরি ওয়াল মালাইকাতি ওয়াল কিতাবি ওয়ান নবিয়্যিনাওয়া আতা আল মালা আলা হুব্বিহি জাওয়িল কুরবা ওয়াল ইয়াতামা ওয়াল মাসাকিনা ওয়াবনাস সাবিলি ওয়াস সাইলিনা ওয়া ফির রিকাবি ওয়া আকামাস সালাতা ওয়া আতায যাকাতা ওয়াল মুফুনা বিআহদিহিম ইজা আহাদু ওয়াস সাবিরিনা ফিল বা'সাই ওয়াদ্দারাই ওয়া হিনা আল বা'সি উলাইকাল্লাযিনা সাদাকু ওয়া উলাইকাহুমুল মুত্তাকুন
অর্থ:
নেকি এই নয় যে তোমরা তোমাদের মুখ পূর্ব ও পশ্চিম দিকে ফেরাও, বরং নেকি হলো সেই ব্যক্তি যে আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতাগণ, কিতাব ও নবীগণের উপর ঈমান আনে, এবং আল্লাহর জন্য আত্মীয়স্বজন, এতিম, মিসকিন, পথচারী, ভিক্ষুক এবং ক্রীতদাসদের মুক্তির জন্য ধন-সম্পদ দান করে, নামায কায়েম করে এবং যাকাত আদায় করে; এবং যারা তাদের চুক্তি পূরণ করে যখন তারা চুক্তিবদ্ধ হয়, এবং যারা ধৈর্য ধরে দুঃখ-কষ্টে ও কষ্টের সময় এবং যুদ্ধের সময়। তারা সত্যিকারের ধর্মপরায়ণ এবং তারাই সতর্ককর্তা।
[সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৭৭]
হাদিসের আলোকে যাকাতের তাৎপর্য
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাকাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিয়ে বহু হাদিসে আলোচনা করেছেন।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لِمُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ حِينَ بَعَثَهُ إِلَى الْيَمَنِ "إِنَّكَ سَتَأْتِي قَوْمًا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ، فَادْعُهُمْ إِلَى شَهَادَةِ أَنْ لا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنِّي رَسُولُ اللَّهِ، فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللَّهَ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ، فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللَّهَ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً تُؤْخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ فَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ، فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ فَإِيَّاكَ وَكَرَائِمَ أَمْوَالِهِمْ
উচ্চারণ:
আন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু 'আনহু) ক্বালা ক্বালা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লি মুআয ইবনে জাবাল হিনা বা'আছাহু ইলা আল-ইয়ামান: 'ইন্নাকা তা'তী কাওমান মিন আহলি আল-কিতাব, ফা'দ'উহুম ইলা শাহাদাতি আন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়া আন্নি রাসুলুল্লাহ, ফা'ইন হুম আতাও লিদ্বালিক ফা'আলিমহুম আন্নাল্লাহ আফতারদা 'আলাইহিম খামসা সালাওয়াতিন ফি কুল্লি ইয়াওমিন ওয়া লাইলা, ফা'ইন হুম আতাও লিদ্বালিক ফা'আলিমহুম আন্নাল্লাহ আফতারদা 'আলাইহিম সাদাকাতান তুও'খাদু মিন আঘনিয়ায়িহিম ফা তুরাদ্দু 'আলা ফুকারায়িহিম, ফা'ইন হুম আতাও লিদ্বালিক ফা ইইয়্যাকা ওয়া কারাইমা আমওয়ালিহিম
অর্থ:
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মুআয (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) কে ইয়েমেনে পাঠিয়েছিলেন, তখন বললেন: "তুমি এমন এক সম্প্রদায়ের কাছে যাচ্ছ, যারা কিতাবধারী। তাদেরকে সাক্ষ্য দিতে বল, যে 'আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল। তারা যদি এটা মেনে নেয়, তাহলে তাদেরকে জানাও যে আল্লাহ তাদের উপর প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরজ করেছেন। তারা যদি এটা মেনে নেয়, তাহলে তাদেরকে জানাও যে আল্লাহ তাদের ধনীদের থেকে যাকাত আদায় করে গরীবদের মধ্যে বিতরণ করতে আদেশ করেছেন। তারা যদি এটা মেনে নেয়, তাহলে তাদের সেরা সম্পদগুলি নেয়া থেকে সাবধান থাক।
[সহিহ বোখারি, হাদিস নম্বর ১৩৯৫]
যাকাতের সামাজিক ও অর্থনৈতিক তাৎপর্য
যাকাতের মাধ্যমে সমাজের দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের সহায়তা প্রদান করা হয়। এটি ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে একটি ভারসাম্য তৈরি করে এবং সমাজে অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠা করে।
দরিদ্রদের সহায়তা
যাকাতের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের সাহায্য করা। কুরআনে আল্লাহ বলেন
إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ وَابْنَ السَّبِيلِ فَرِيضَةً مِّنَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
উচ্চারণ:
ইন্নামাসসাদাকাতু লিলফুকারাই ওয়ালমাসাকিনি ওয়ালআমিলিনা 'আলাইহা ওয়ালমু'আল্লাফাতি কুলুবুহুম ওয়াফিররিকাবি ওয়ালগারিমিনা ওয়াফি সাবিলিল্লাহি ওয়াবনিস সাবিলি ফারিদাতাম মিনাল্লাহি ওয়াল্লাহু আলিমুন হাকিম"
অর্থ:
যাকাত তো শুধুমাত্র ফকির-মিসকিন, যাকাতের কাজ নিয়ে যারা নিয়োজিত, নতুন মুসলিম, মুক্তি পেতে চাওয়া ক্রীতদাস, ঋণগ্রস্ত, আল্লাহর পথে সংগ্রামী এবং মুসাফিরদের জন্য নির্ধারিত। এটি আল্লাহর নির্দেশ। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।"
[সূরা আত-তাওবা, আয়াত ৬০]
অর্থনৈতিক ভারসাম্য
যাকাতের মাধ্যমে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে একটি ভারসাম্য তৈরি হয়। ধনী ব্যক্তিদের সম্পদ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ যাকাত হিসেবে আদায় করা হয় এবং তা দরিদ্র ও অসহায়দের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এর ফলে সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য কমে যায় এবং সবার মাঝে সম্পদের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়।
পবিত্রতা ও প্রবৃদ্ধি
যাকাত আদায়ের মাধ্যমে ধনী ব্যক্তিরা তাদের সম্পদকে পবিত্র ও বিশুদ্ধ করে। এটি একটি আধ্যাত্মিক ও নৈতিক উন্নতির মাধ্যম। যাকাতের মাধ্যমে সমাজের দরিদ্র মানুষদের জন্য একটি উন্নত জীবনযাপনের সুযোগ সৃষ্টি হয়, যা সামগ্রিকভাবে সমাজের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে সহায়ক হয়।
যাকাত ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ এবং এর আদায়ের মাধ্যমে ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ই উপকৃত হয়। এটি কেবলমাত্র একটি আর্থিক ইবাদত নয়, বরং এটি সমাজের দারিদ্র্য বিমোচন, অর্থনৈতিক সাম্য এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়।
যাকাত ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের একটি এবং এটি মুসলমানদের উপর ফরজ করা হয়েছে। এটি কেবলমাত্র একটি আর্থিক ইবাদত নয়, বরং এটি সমাজের দারিদ্র্য বিমোচন, অর্থনৈতিক সাম্য এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়।
কুরআনের আলোকে যাকাতের গুরুত্ব
কুরআনে যাকাতের গুরুত্ব বারবার উল্লেখ করা হয়েছে এবং মুসলমানদেরকে যাকাত আদায় করতে উৎসাহিত করা হয়েছে।
خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِمْ بِهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْ إِنَّ صَلَاتَكَ سَكَنٌ لَّهُمْ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
উচ্চারণ:
খুয মিন আমওয়ালিহিম সাদাকাতান তুওহিরুহুম ওয়া তুজাক্কিহিম বিহা ওয়া সাল্লি আলাইহিম ইন্না সালাতাকা সাকানুল্লাহুম ওয়াল্লাহু সামীউন আলীম"
অর্থ:
তাদের সম্পদ থেকে যাকাত গ্রহণ কর, এর মাধ্যমে তুমি তাদের পবিত্র করবে এবং বিশুদ্ধ করবে এবং তাদের জন্য দোয়া কর, কারণ তোমার দোয়া তাদের জন্য প্রশান্তি। আল্লাহ সবকিছু শোনেন এবং জানেন।"
[সূরা আত-তাওবা, আয়াত ১০৩]
হাদিসের আলোকে যাকাতের গুরুত্ব
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিভিন্ন হাদিসে যাকাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لِمُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ حِينَ بَعَثَهُ إِلَى الْيَمَنِ "إِنَّكَ سَتَأْتِي قَوْمًا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ، فَادْعُهُمْ إِلَى شَهَادَةِ أَنْ لا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنِّي رَسُولُ اللَّهِ، فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللَّهَ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ، فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللَّهَ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً تُؤْخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ فَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ، فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ فَإِيَّاكَ وَكَرَائِمَ أَمْوَالِهِمْ
উচ্চারণ:
আন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু 'আনহু) ক্বালা ক্বালা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লি মুআয ইবনে জাবাল হিনা বা'আছাহু ইলা আল-ইয়ামান: 'ইন্নাকা তা'তী কাওমান মিন আহলি আল-কিতাব, ফা'দ'উহুম ইলা শাহাদাতি আন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়া আন্নি রাসুলুল্লাহ, ফা'ইন হুম আতাও লিদ্বালিক ফা'আলিমহুম আন্নাল্লাহ আফতারদা 'আলাইহিম খামসা সালাওয়াতিন ফি কুল্লি ইয়াওমিন ওয়া লাইলা, ফা'ইন হুম আতাও লিদ্বালিক ফা'আলিমহুম আন্নাল্লাহ আফতারদা 'আলাইহিম সাদাকাতান তুও'খাদু মিন আঘনিয়ায়িহিম ফা তুরাদ্দু 'আলা ফুকারায়িহিম, ফা'ইন হুম আতাও লিদ্বালিক ফা ইইয়্যাকা ওয়া কারাইমা আমওয়ালিহিম"
অর্থ:
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মুআয (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) কে ইয়েমেনে পাঠিয়েছিলেন, তখন বললেন: "তুমি এমন এক সম্প্রদায়ের কাছে যাচ্ছ, যারা কিতাবধারী। তাদেরকে সাক্ষ্য দিতে বল, যে 'আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল। তারা যদি এটা মেনে নেয়, তাহলে তাদেরকে জানাও যে আল্লাহ তাদের উপর প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরজ করেছেন। তারা যদি এটা মেনে নেয়, তাহলে তাদেরকে জানাও যে আল্লাহ তাদের ধনীদের থেকে যাকাত আদায় করে গরীবদের মধ্যে বিতরণ করতে আদেশ করেছেন। তারা যদি এটা মেনে নেয়, তাহলে তাদের সেরা সম্পদগুলি নেয়া থেকে সাবধান থাক।"
[সহিহ বোখারি, হাদিস নম্বর ১৩৯৫]
যাকাতের সামাজিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব
যাকাতের মাধ্যমে সমাজের দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের সহায়তা প্রদান করা হয়। এটি ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে একটি ভারসাম্য তৈরি করে এবং সমাজে অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠা করে।
إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ وَابْنَ السَّبِيلِ فَرِيضَةً مِّنَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
উচ্চারণ:
ইন্নামাসসাদাকাতু লিলফুকারাই ওয়ালমাসাকিনি ওয়ালআমিলিনা 'আলাইহা ওয়ালমু'আল্লাফাতি কুলুবুহুম ওয়াফিররিকাবি ওয়ালগারিমিনা ওয়াফি সাবিলিল্লাহি ওয়াবনিস সাবিলি ফারিদাতাম মিনাল্লাহি ওয়াল্লাহু আলিমুন হাকিম"
অর্থ:
যাকাত তো শুধুমাত্র ফকির-মিসকিন, যাকাতের কাজ নিয়ে যারা নিয়োজিত, নতুন মুসলিম, মুক্তি পেতে চাওয়া ক্রীতদাস, ঋণগ্রস্ত, আল্লাহর পথে সংগ্রামী এবং মুসাফিরদের জন্য নির্ধারিত। এটি আল্লাহর নির্দেশ। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।"
[সূরা আত-তাওবা, আয়াত ৬০]
যাকাত ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ এবং এর আদায়ের মাধ্যমে ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ই উপকৃত হয়। এটি কেবলমাত্র একটি আর্থিক ইবাদত নয়, বরং এটি সমাজের দারিদ্র্য বিমোচন, অর্থনৈতিক সাম্য এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়।
যাকাত ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের একটি এবং এটি মুসলমানদের উপর ফরজ করা হয়েছে। এটি ধনী মুসলমানদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং এর মাধ্যমে সমাজের দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের সহায়তা প্রদান করা হয়।
কুরআনের আলোকে যাকাতের হুকুম
কুরআনে আল্লাহ যাকাতকে একটি বাধ্যতামূলক ইবাদত হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং মুসলমানদের জন্য এটি পালন করা বাধ্যতামূলক করেছেন।
خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِمْ بِهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْ إِنَّ صَلَاتَكَ سَكَنٌ لَّهُمْ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
উচ্চারণ:
খুয মিন আমওয়ালিহিম সাদাকাতান তুওহিরুহুম ওয়া তুজাক্কিহিম বিহা ওয়া সাল্লি আলাইহিম ইন্না সালাতাকা সাকানুল্লাহুম ওয়াল্লাহু সামীউন আলীম
অর্থ:
তাদের সম্পদ থেকে যাকাত গ্রহণ কর, এর মাধ্যমে তুমি তাদের পবিত্র করবে এবং বিশুদ্ধ করবে এবং তাদের জন্য দোয়া কর, কারণ তোমার দোয়া তাদের জন্য প্রশান্তি। আল্লাহ সবকিছু শোনেন এবং জানেন।
[সূরা আত-তাওবা, আয়াত ১০৩]
হাদিসের আলোকে যাকাতের হুকুম
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিভিন্ন হাদিসে যাকাতের বাধ্যতামূলকতা ও তাৎপর্য সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لِمُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ حِينَ بَعَثَهُ إِلَى الْيَمَنِ "إِنَّكَ سَتَأْتِي قَوْمًا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ، فَادْعُهُمْ إِلَى شَهَادَةِ أَنْ لا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنِّي رَسُولُ اللَّهِ، فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللَّهَ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ، فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللَّهَ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً تُؤْخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ فَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ، فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ فَإِيَّاكَ وَكَرَائِمَ أَمْوَالِهِمْ
উচ্চারণ:
আন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু 'আনহু) ক্বালা ক্বালা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লি মুআয ইবনে জাবাল হিনা বা'আছাহু ইলা আল-ইয়ামান: 'ইন্নাকা তা'তী কাওমান মিন আহলি আল-কিতাব, ফা'দ'উহুম ইলা শাহাদাতি আন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়া আন্নি রাসুলুল্লাহ, ফা'ইন হুম আতাও লিদ্বালিক ফা'আলিমহুম আন্নাল্লাহ আফতারদা 'আলাইহিম খামসা সালাওয়াতিন ফি কুল্লি ইয়াওমিন ওয়া লাইলা, ফা'ইন হুম আতাও লিদ্বালিক ফা'আলিমহুম আন্নাল্লাহ আফতারদা 'আলাইহিম সাদাকাতান তুও'খাদু মিন আঘনিয়ায়িহিম ফা তুরাদ্দু 'আলা ফুকারায়িহিম, ফা'ইন হুম আতাও লিদ্বালিক ফা ইইয়্যাকা ওয়া কারাইমা আমওয়ালিহিম
অর্থ:
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মুআয (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) কে ইয়েমেনে পাঠিয়েছিলেন, তখন বললেন: "তুমি এমন এক সম্প্রদায়ের কাছে যাচ্ছ, যারা কিতাবধারী। তাদেরকে সাক্ষ্য দিতে বল, যে 'আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল। তারা যদি এটা মেনে নেয়, তাহলে তাদেরকে জানাও যে আল্লাহ তাদের উপর প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরজ করেছেন। তারা যদি এটা মেনে নেয়, তাহলে তাদেরকে জানাও যে আল্লাহ তাদের ধনীদের থেকে যাকাত আদায় করে গরীবদের মধ্যে বিতরণ করতে আদেশ করেছেন। তারা যদি এটা মেনে নেয়, তাহলে তাদের সেরা সম্পদগুলি নেয়া থেকে সাবধান থাক।
[সহিহ বোখারি, হাদিস নম্বর ১৩৯৫]
যাকাতের মূল উদ্দেশ্য হলো সমাজে অর্থনৈতিক সাম্যতা, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা এবং দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের সহায়তা প্রদান করা। এটি ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে একটি ভারসাম্য তৈরি করে এবং সমাজে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে আসে।
কুরআনের আলোকে যাকাতের উদ্দেশ্য
কুরআনে যাকাতের উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং মুসলমানদেরকে যাকাত আদায় করতে উৎসাহিত করা হয়েছে।
إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ وَابْنَ السَّبِيلِ فَرِيضَةً مِّنَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
উচ্চারণ:
ইন্নামা আস-সাদাকাতু লিলফুকারাই ওয়াল-মাসাকিনি ওয়াল-আমিলিনা আলাইহা ওয়াল-মুয়াল্লাফাতি কুলুবুহুম ওয়া ফির-রিকাবি ওয়াল-গারিমিনা ওয়া ফি সাবিলিল্লাহি ওয়াবনিস সাবিলি ফারিদাতাম মিনাল্লাহি ওয়াল্লাহু আলিমুন হাকিম"
অর্থ:
যাকাত তো শুধুমাত্র ফকির-মিসকিন, যাকাতের কাজ নিয়ে যারা নিয়োজিত, নতুন মুসলিম, মুক্তি পেতে চাওয়া ক্রীতদাস, ঋণগ্রস্ত, আল্লাহর পথে সংগ্রামী এবং মুসাফিরদের জন্য নির্ধারিত। এটি আল্লাহর নির্দেশ। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।"
[সূরা আত-তাওবা, আয়াত ৬০]
হাদিসের আলোকে যাকাতের উদ্দেশ্য
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিভিন্ন হাদিসে যাকাতের উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
عَنْ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم "بُنِيَ الْإِسْلَامُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ وَإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَصَوْمِ رَمَضَانَ وَحَجِّ الْبَيْتِ"
উচ্চারণ:
আন ইবনে উমার (রাদিয়াল্লাহু 'আনহু) ক্বালা ক্বালা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম): 'বুনি আল-ইসলামু আলা খামস: শাহাদাতি আন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়া আন্না মুহাম্মাদান রাসুলুল্লাহ, ওয়া ইকামিস সালাতি, ওয়া ইতায়িয যাকাতি, ওয়া সাওমি রামাদান, ওয়া হাজ্জিল বাইত"
অর্থ:
ইবনে উমর (রাদিয়াল্লাহু 'আনহু) বর্ণনা করেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত:
[সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বর ৯৮২]
যাকাতের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য
যাকাতের মাধ্যমে সমাজের দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের সহায়তা প্রদান করা হয়। এটি ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে একটি ভারসাম্য তৈরি করে এবং সমাজে অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠা করে।
দরিদ্রদের সহায়তা
যাকাতের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের সাহায্য করা। কুরআনে আল্লাহ বলেন -
إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ وَابْنَ السَّبِيلِ فَرِيضَةً مِّنَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
উচ্চারণ:
ইন্নামাসসাদাকাতু লিলফুকারাই ওয়ালমাসাকিনি ওয়ালআমিলিনা 'আলাইহা ওয়ালমু'আল্লাফাতি কুলুবুহুম ওয়াফিররিকাবি ওয়ালগারিমিনা ওয়াফি সাবিলিল্লাহি ওয়াবনিস সাবিলি ফারিদাতাম মিনাল্লাহি ওয়াল্লাহু আলিমুন হাকিম
অর্থ:
যাকাত তো শুধুমাত্র ফকির-মিসকিন, যাকাতের কাজ নিয়ে যারা নিয়োজিত, নতুন মুসলিম, মুক্তি পেতে চাওয়া ক্রীতদাস, ঋণগ্রস্ত, আল্লাহর পথে সংগ্রামী এবং মুসাফিরদের জন্য নির্ধারিত। এটি আল্লাহর নির্দেশ। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
[সূরা আত-তাওবা, আয়াত ৬০]
অর্থনৈতিক ভারসাম্য -
যাকাতের মাধ্যমে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে একটি ভারসাম্য তৈরি হয়। ধনী ব্যক্তিদের সম্পদ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ যাকাত হিসেবে আদায় করা হয় এবং তা দরিদ্র ও অসহায়দের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এর ফলে সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য কমে যায় এবং সবার মাঝে সম্পদের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়।
পবিত্রতা ও প্রবৃদ্ধি -
যাকাত আদায়ের মাধ্যমে ধনী ব্যক্তিরা তাদের সম্পদকে পবিত্র ও বিশুদ্ধ করে। এটি একটি আধ্যাত্মিক ও নৈতিক উন্নতির মাধ্যম। যাকাতের মাধ্যমে সমাজের দরিদ্র মানুষদের জন্য একটি উন্নত জীবনযাপনের সুযোগ সৃষ্টি হয়, যা সামগ্রিকভাবে সমাজের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে সহায়ক হয়।
যাকাত ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ এবং এর আদায়ের মাধ্যমে ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ই উপকৃত হয়। এটি কেবলমাত্র একটি আর্থিক ইবাদত নয়, বরং এটি সমাজের দারিদ্র্য বিমোচন, অর্থনৈতিক সাম্য এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়।
যাকাত বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট শর্ত রয়েছে, যা পূরণ করতে হবে। এই শর্তগুলি পূরণ না হলে যাকাত গ্রহণযোগ্য হয় না।
• ইসলামের অনুসারী হতে হবে
যাকাত আদায়কারী ব্যক্তিকে মুসলমান হতে হবে। অমুসলিমদের জন্য যাকাত আদায় বাধ্যতামূলক নয়।
• প্রাপ্তবয়স্ক ও বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন হতে হবে
যাকাত আদায়কারী ব্যক্তিকে প্রাপ্তবয়স্ক (বালিগ) এবং বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন হতে হবে। শিশু বা মানসিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির উপর যাকাত ফরজ নয়।
• সম্পদের মালিক হতে হবে
যাকাত আদায়কারীকে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হতে হবে। নিসাব হলো নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ, যার উপরে যাকাত ফরজ হয়।
• এক বছর অতিক্রান্ত হতে হবে
যাকাতযোগ্য সম্পদের উপর এক বছর (হিজরি বছর) অতিক্রান্ত হতে হবে। যদি সম্পদ এক বছর পূর্ণ না করে, তাহলে সেই সম্পদের উপর যাকাত ফরজ হয় না।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُم بَيْنَكُم بِالْبَاطِلِ إِلَّا أَن تَكُونَ تِجَارَةً عَن تَرَاضٍ مِّنكُمْ وَلَا تَقْتُلُوا أَنفُسَكُمْ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا
উচ্চারণ:
ইয়া আইয়্যুহাল্লাযীনা আমানু লা তা'কুলু আমওয়ালাকুম বাইনাকুম বিল-বাতিলি ইল্লা আন তা'কুনা তিজারাতান আন তারাদিম মিনকুম ওয়ালা তাকতুলু আনফুসাকুম ইন্নাল্লাহা কান বিকুম রহীমা
অর্থ:
হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের মধ্যে অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ গ্রাস করো না, তবে তোমাদের সম্মতিতে ব্যবসায়িক লেনদেন হতে পারে। আর তোমরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু।
[সূরা আন-নিসা, আয়াত ২৯]
• সম্পদের উপর মালিকানা সম্পূর্ণ হতে হবে
যাকাতযোগ্য সম্পদের উপর সম্পূর্ণ মালিকানা থাকতে হবে। যদি সম্পদে কারো সম্পূর্ণ অধিকার না থাকে, তাহলে সেই সম্পদের উপর যাকাত ফরজ হয় না।
• সম্পদের ধরন
যাকাতযোগ্য সম্পদে সোনা, রূপা, নগদ অর্থ, বাণিজ্যিক পণ্য, কৃষিজ পণ্য, পশু ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم "لَيْسَ فِيمَا دُونَ خَمْسِ ذَوْدٍ صَدَقَةٌ وَلَا فِيمَا دُونَ خَمْسِ أَوْسُقٍ صَدَقَةٌ وَلَا فِيمَا دُونَ خَمْسِ أَوَاقٍ صَدَقَةٌ
উচ্চারণ:
আন আবি সাঈদ আল-খুদরী (রাদিয়াল্লাহু 'আনহু) ক্বালা ক্বালা আন-নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম): 'লাইসা ফীমা দুনা খামসি যাউদিন সাদাকাতুন ওয়ালা ফীমা দুনা খামসি আওসুকিন সাদাকাতুন ওয়ালা ফীমা দুনা খামসি আওকিন সাদাকাতুন
অর্থ:
আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাদিয়াল্লাহু 'আনহু) বর্ণনা করেন, নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, 'পাঁচ উটের নিচে যাকাত নেই, পাঁচ ওসকের নিচে যাকাত নেই এবং পাঁচ আউকিয়া সোনার নিচে যাকাত নেই।
[সহিহ বোখারি, হাদিস নম্বর ১৪৫৪]
• নিয়ত
যাকাত আদায়ের সময় নিয়ত করতে হবে যে, এটি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আদায় করা হচ্ছে।
إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى
উচ্চারণ:
ইন্নামাল আ'মালু বিন নিয়্যাতি ওয়া ইন্নামা লিকুল্লি মারিন মা নাওয়া"
অর্থ:
কাজগুলি নিয়তের উপর নির্ভরশীল এবং প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য তার নিয়ত অনুযায়ী ফলাফল পাওয়া যাবে।"
[সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বর ১৯০৭]
• সঠিকভাবে বিতরণ
যাকাত সঠিকভাবে বিতরণ করতে হবে এবং কুরআনে উল্লিখিত প্রাপকদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে।
إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ وَابْنَ السَّبِيلِ فَرِيضَةً مِّنَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
উচ্চারণ:
ইন্নামাসসাদাকাতু লিলফুকারাই ওয়ালমাসাকিনি ওয়ালআমিলিনা 'আলাইহা ওয়ালমু'আল্লাফাতি কুলুবুহুম ওয়াফিররিকাবি ওয়ালগারিমিনা ওয়াফি সাবিলিল্লাহি ওয়াবনিস সাবিলি ফারিদাতাম মিনাল্লাহি ওয়াল্লাহু আলিমুন হাকিম
অর্থ:
যাকাত তো শুধুমাত্র ফকির-মিসকিন, যাকাতের কাজ নিয়ে যারা নিয়োজিত, নতুন মুসলিম, মুক্তি পেতে চাওয়া ক্রীতদাস, ঋণগ্রস্ত, আল্লাহর পথে সংগ্রামী এবং মুসাফিরদের জন্য নির্ধারিত। এটি আল্লাহর নির্দেশ। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
[সূরা আত-তাওবা, আয়াত ৬০]
এই শর্তগুলি পূরণ করলে যাকাত গ্রহণযোগ্য হয় এবং তা আদায়কারীর জন্য আল্লাহর নিকট পুরস্কৃত হবে।
যাকাতের বিভিন্ন প্রকার রয়েছে এবং এটি বিভিন্ন সম্পদের উপর নির্ধারিত হয়। যাকাতের প্রধান দুটি প্রকারভেদ হলো যাকাতুল মাল (সম্পদের যাকাত) এবং যাকাতুল ফিতর (ফিতরার যাকাত)।
যাকাতুল মাল ধনী মুসলমানদের সম্পদের উপর নির্ধারিত যাকাত, যা প্রতিবছর একবার আদায় করতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে-
কুরআনের আলোকে যাকাতুল মাল
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَنفِقُوا مِن طَيِّبَاتِ مَا كَسَبْتُمْ وَمِمَّا أَخْرَجْنَا لَكُم مِّنَ الْأَرْضِ وَلَا تَيَمَّمُوا الْخَبِيثَ مِنْهُ تُنفِقُونَ وَلَسْتُم بِآخِذِيهِ إِلَّا أَن تُغْمِضُوا فِيهِ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ حَمِيدٌ
উচ্চারণ:
ইয়া আইয়্যুহাল্লাযীনা আমানু আনফিকু মিন ত্বয়্যিবাতি মা কাসাবতুম ওয়ামিম্মা আখরাজনা লাকুম মিনাল আরদ্বি ওয়ালা তায়াম্মামুল খাবীছা মিনহু তুফিকুনা ওয়ালাস্তুম বি আখিজীহি ইল্লা আন তুঘমিদু ফীহি ওয়াআলামু আন্নাল্লাহা গনিইউন হামীদ
অর্থ:
হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের অর্জিত উত্তম সম্পদ থেকে এবং যা আমরা জমিন থেকে তোমাদের জন্য উৎপন্ন করেছি, তা থেকে ব্যয় কর। এবং তোমরা মন্দ বস্তু ব্যয় করতে মনস্থ করো না, যদিও তা থেকে কিছু গ্রহণ করতে তোমরা নিজেরা অপছন্দ করো। আর জেনে রাখো, আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসিত।
[সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২৬৭]
সোনা ও রূপা
যে ব্যক্তির কাছে নিসাব পরিমাণ সোনা বা রূপা রয়েছে, তার উপর যাকাত ফরজ। সোনার নিসাব ৮৭.৪৮ গ্রাম এবং রূপার নিসাব ৬১২.৩৬ গ্রাম।
নগদ অর্থ
যে ব্যক্তির কাছে নিসাব পরিমাণ নগদ অর্থ রয়েছে, তার উপর যাকাত ফরজ।
বাণিজ্যিক পণ্য
যে ব্যক্তি বাণিজ্যিক পণ্যের মালিক, তার পণ্য মূল্যের উপর যাকাত ফরজ।
পশুসম্পদ
যে ব্যক্তির কাছে নিসাব পরিমাণ পশু রয়েছে, তার উপর যাকাত ফরজ।
যাকাতুল ফিতর রমজান মাসের শেষে আদায় করা হয় এবং এটি প্রত্যেক সক্ষম মুসলমানের উপর ফরজ। এটি মূলত গরীব ও দরিদ্রদের সহায়তা করার জন্য প্রদান করা হয়।
হাদিসের আলোকে যাকাতুল ফিতর
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ فَرَضَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم زَكَاةَ الْفِطْرِ طُهْرَةً لِلصَّائِمِ مِنَ اللَّغْوِ وَالرَّفَثِ وَطُعْمَةً لِلْمَسَاكِينِ مَنْ أَدَّاهَا قَبْلَ الصَّلاَةِ فَهِيَ زَكَاةٌ مَقْبُولَةٌ وَمَنْ أَدَّاهَا بَعْدَ الصَّلاَةِ فَهِيَ صَدَقَةٌ مِنَ الصَّدَقَاتِ
উচ্চারণ:
আন ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু 'আনহু) ক্বালা, ফারদ্বা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাকাতুল ফিতরি তুহরাতান লিস সায়িমি মিনাল লাঘবি ওয়ার রাফাথি ওয়া তু'মাতান লিলমাসাকীন, মান আদ্দাহা ক্বাবলাস সালাতি ফাহিয়া যাকাতুম মাক্ববুলাতুন ওয়ামান আদ্দাহা বাদাস সালাতি ফাহিয়া সাদাকাতুম মিনাস সাদাকাতি
অর্থ:
ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু 'আনহু) থেকে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাকাতুল ফিতরকে ফরজ করেছেন, যা রোজাদারকে অশালীন কথাবার্তা ও অপবিত্রতা থেকে পবিত্র করে এবং গরীবদের আহার সরবরাহ করে। যে ব্যক্তি ঈদের নামাযের পূর্বে তা আদায় করবে, তার যাকাত গ্রহণযোগ্য হবে এবং যে ব্যক্তি নামাযের পরে তা আদায় করবে, তা সাধারণ সাদাকা হিসেবে গণ্য হবে।
[সহিহ বোখারি, হাদিস নম্বর ১৫০৩]
যাকাতের অন্যান্য প্রকার
কৃষিজ পণ্য
কৃষিজ পণ্যের উপর নির্দিষ্ট পরিমাণ যাকাত নির্ধারিত রয়েছে।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي مَكَايِيلِ كَانَتْ تَتَعَامَلُ بِهَا أَهْلُ الْمَدِينَةِ "مَا كَانَ مِنْ تَحْتِ سَقْفٍ أَوْ حَائِطٍ فَفِيهِ العُشْرُ، وَمَا كَانَ مِنْ غَيْرِ سَقْفٍ أَوْ حَائِطٍ فَفِيهِ نِصْفُ العُشْرِ"
উচ্চারণ:
আন ইবনে উমার (রাদিয়াল্লাহু 'আনহু) ক্বালা: ক্বালা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফি মাকায়ীলি কানাত তা'আমালু বিহা আহলুল মাদীনা: 'মা কানা মিন তাহতি সাক্বফিন আও হাইতিন ফাফিহিল উশরু, ওয়া মা কানা মিন গাইরি সাক্বফিন আও হাইতিন ফাফিহি নিসফুল উশর'
অর্থ:
ইবনে উমার (রাদিয়াল্লাহু 'আনহু) থেকে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদিনার লোকদের ব্যবহৃত মাপকাঠির উপর নির্ভর করে বলেছেন, 'যা সাক্বফ (ছাদ) বা দেয়ালের নিচে জন্মায়, তার উপর এক-দশমাংশ যাকাত এবং যা সাক্বফ বা দেয়ালের বাইরে জন্মায়, তার উপর অর্ধ-দশমাংশ যাকাত।
[সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বর ৯৮১]
খনিজ সম্পদ
মাটি থেকে উত্তোলিত খনিজ সম্পদের উপরও যাকাত নির্ধারিত।
এই শর্ত ও প্রকারভেদগুলো মেনে চললে যাকাতের আদায় শুদ্ধ এবং পূর্ণাঙ্গ হয়।