কোরবানির পশুতে সর্বোচ্চ কতজন অংশ নেওয়া যায়

কোরবানি দেওয়া পশুর মাংস বন্টন

কোরবানির গোশত নিজে খাবে, আত্মীয়স্বজনকে দেবে এবং ফকির মিসকিনকে খয়রাত করবে কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ খয়রাত করা উত্তম এক্ষেত্রে ত্রুটি করা উচিত নয় তবে কেউ যদি সামান্য খয়রাত করে, তা হলেও কোনো গুনাহ হবে না

কোরবানিকৃত পশুর চামড়া বিতরণ 

কোরবানির পশু জবাই করার নিয়ম

কোরবানি দাতা যদি নিজে জবাই করার সাহস রাখে এবং জবাইয়ের হুকুম- আহকাম সম্পর্কে অবগত থাকে, তাহলে নিজের পশু নিজ হাতে কোরবানি করাই উত্তম। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজের কোরবানি নিজ হাতে জবাই করতেন। হাদীসে আছে, আনাস (রাঃ) বলেন-

نَحَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِهِ سَبْعَ بُدْنٍ قِيَامًا وَضَحَى بِالْمَدِينَةِ كَبُشَيْنِ أَمْلَحَيْنِ أَقْرَنَيْنِ

কোরবানির পশু জবাই করার নিয়ম এবং উত্তম উপায়: 

নিজের কোরবানি নিজ হাতে জবাই করার সামর্থ্য না থাকলে উপস্থিত থেকে কাউকে দিয়ে জবাই করানো ভালো।আবু সাঈদ খুদরী থেকে বর্ণিত হাদীসে আছে-

قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِفَاطِمَةَ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهَا : قُوْمِي إِلَى أُضْحِيَّتِكِ فَاشْهَدِيْهَا فَإِنَّ لَكِ بِأَوَّلِ قَطْرَةٍ تَقْطُرُ مِنْ دَمِهَا يُغْفَرُ لَكِ مَا سَلَفَ مِنْ ذُنُوبِكِ قَالَتْ : يَا رَسُولَ اللهِ هَذَا لَنَا أَهْلِ الْبَيْتِ خَاصَّةً أَوْ لَنَا وَلِلْمُسْلِمِينَ عَامَّةً؟ قَالَ : بَلْ لَنَا وَلِلْمُسْلِمِينَ عَامَّةً

একটি হাদীসে আছে, রাসূল (সাঃ) বলেছেন-

إِنَّ اللَّهَ كَتَبَ الإِحْسَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ فَإِذَا قَتَلْتُمْ فَأَحْسِنُوا الْقِتْلَةَ وَإِذَا ذَبَحْتُمْ فَأَحْسِنُوا الدُّبْحَةَ وَلْيُحِدَّ أَحَدُكُمْ شَفْرَتَهُ وَلْيُرِحْ ذَبِيحَتَهُ

জবাইয়ের সময় লক্ষণীয় কিছু বিষয়:

পশু জবাই করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলেই জবাইয়ের সময় পশুর সাথে যেনতেন আচরণ উচিত নয়। পশুকে ভীতসন্ত্রস্ত করা, শোয়ানোর পর টেনে-হিঁচড়ে এদিক-সেদিক নেওয়া, পা ধরে টানাটানি করা, ছোট পশুর উপর বিনা প্রয়োজনে চড়ে বসা, পশু শোয়ানোর পর জবাই করতে বিলম্ব করা ইত্যাদি নির্দয় আচরণের শামিল। এজন্যে জবাইয়ের সময় নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি খুব খেয়াল রাখা চাই- <ul><li>জবাইয়ের আগে স্বাভাবিকভাবে পশুকে দানাপানি খাওয়াতে থাকবে। পশুকে ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত রাখা মাকরূহ</li></ul> <ul><li>টেনে-হিঁচড়ে জবাইয়ের স্থানে নিয়ে যাওয়া মাকরূহ।</li></ul> <ul><li>পরিপূর্ণ প্রস্তুতির সাথে সহজভাবে পশুকে জমিনে ফেলবে। অনর্থক কঠোরতা করা মাকরূহ।</li></ul> <ul><li>বাম কাতে কেবলামুখী করে শোয়াবে, যাতে খুব সহজে জান বের হতে পারে। এর খেলাফ করা মাকরূহ।</li></ul> <ul><li>বড় পশুর চার পা থেকে তিন পা বেঁধে নিবে।</li></ul> <ul><li>আগেই ছুরি ধার দিয়ে নিবে। ভোঁতা ছুরি দিয়ে জবাই করা মাকরূহ।</li></ul>

<ul><li>ছুরি যদি ধার দিতে হয়, তাহলে পশু থেকে আড়ালে ধার দিবে। কেননা, পশুর সামনে ছুরি ধার করা মাকরূহ।</li></ul> <ul><li>শোয়ানোর আগেই ছুরি ধার করে নিবে। পশু শোয়ানোর পর ছুরি ধার করা মাকরূহ।</li></ul> <ul><li>এক পশুর সামনে অপর পশু জবাই করা মাকরূহ।</li></ul> <ul><li>এত জোরে ছুরি চালানো উচিত নয় যাতে, মাথা আলাদা হয়ে যায়, অথবা ঘাড়ের মধ্যকার হারাম মগজ (সাদা রগ) পর্যন্ত ছুরি চলে যায়। এমনটা করা মাকরূহ।</li></ul> <ul><li>ঘাড়ের উপর থেকে জবাই করা মাকরূহ ও নিষিদ্ধ। কেননা, এভাবে অনর্থক পশুকে কষ্ট দেওয়া হয়।</li></ul> <ul><li> জবাইয়ের পর পশু ঠান্ডা হওয়ার আগে মাথা কেটে আলাদা করা বা চামড়া খুলতে শুরু করা মাকরূহ।</li></ul> এসব বিষয় শুধু কোরবানির পশুর সাথে বিশিষ্ট নয়; বরং যে কোনো পশু জবাইয়ের ক্ষেত্রে এসব বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখা বাঞ্ছনীয়।&nbsp;

জবাইয়ের সরঞ্জাম

ছুরি, চাকু, তলোয়ার, বাঁশের নেইল ও ধারালো পাথর দ্বারা পশু জবাই করা জায়েয। শর্ত হচ্ছে বস্তুটিতে রগ কাটার ধার থাকতে হবে এবং রগ কেটে প্রবহমান রক্ত বের করতে হবে। তবে দাঁত ও নখ দিয়ে জবাই করা জায়েয নয়।

মাসয়ালা:&nbsp;ধারালো বস্তু দিয়ে রগ না কেটে কোনো ভারী জিনিস দ্বারা জখম করলে পশু হালাল হবে না। জখম থেকে যদি রক্ত বেরও হয়, তবুও জায়েয হবে না।মাসয়ালা:&nbsp;গলায় চারটি রগ আছে- শ্বাসনালি, খাদ্যনালি আর দুটি রক্তনালি। এই চারটি রগের অন্তত তিনটি কাটা ফরয। একটি বা দুটি কাটলে পশু হালাল হবে&nbsp;না।মাসয়ালা:&nbsp;পাক জায়গায় পশু জবাই করা বাঞ্ছনীয়। নাপাক স্থানে পশু জবাই করা উচিত নয়।মাসয়ালা:&nbsp;ধারালো পাথর ও বাঁশের নেইল দ্বারা জবাই করার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের মানুষের নেই। এজন্যে এগুলো দিয়ে পশু জবাই করতে গিয়ে খামোখা পশুকে কষ্ট দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করা বোকামি সাব্যস্ত হবে।

জবাইয়ের সময় বিসমিল্লাহ বলা

শরীয়তের দৃষ্টিতে যেসব পশু হালাল, সেগুলো খাওয়া জায়েয হওয়ার জন্যে জবাই শর্ত। আর জবাই সহীহ হওয়ার জন্যে বিসমিল্লাহ বলা শর্ত। যদি কেউ জবাইয়ের সময় ইচ্ছা করে বিসমিল্লাহ ছেড়ে দেয়, তাহলে পশু মুরদার সাব্যস্ত হবে এবং সেটা খাওয়া জায়েয হবে না।

কোরবানির সাথে ভাগে আকিকা দেয়া 

কেউ কেউ কোরবানির পশুর সাথে আকীকা দিলে আকীকা সহীহ হবে না বলে মত দেন। কিন্তু নির্ভরযোগ্য আলেমগণ এ মতটি গ্রহণ করেননি। কোনো হাদীসে কোরবানির সাথে আকীকা করতে নিষেধ করা হয়নি; বরং কোরবানির সাথে

মুসাফির ও মহিলাদের কোরবানি করা

حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الْقَاسِمِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم دَخَلَ عَلَيْهَا وَحَاضَتْ بِسَرِفَ، قَبْلَ أَنْ تَدْخُلَ مَكَّةَ وَهْىَ تَبْكِي فَقَالَ ‏"‏ مَا لَكِ أَنَفِسْتِ ‏"‏‏.‏ قَالَتْ نَعَمْ‏.‏ قَالَ ‏"‏ إِنَّ هَذَا أَمْرٌ كَتَبَهُ اللَّهُ عَلَى بَنَاتِ آدَمَ، فَاقْضِي مَا يَقْضِي الْحَاجُّ غَيْرَ أَنْ لاَ تَطُوفِي بِالْبَيْتِ ‏"‏‏.‏ فَلَمَّا كُنَّا بِمِنًى أُتِيتُ بِلَحْمِ بَقَرٍ،

কোরবানির পশু জবাইয়ের দোয়া

উচ্চারণ : ইন্নি ওয়াজ জাহতু ওয়াজ হিয়া লিল্লাযি ফাতারাছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকিন। ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহ ইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। লা শারিকা লাহু ওয়া বিজালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন।...বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার।

وجهت وجهي للذي فطر السموات والأرض حنيفا وما أنا من المشركين، إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ، لَا شَرِيكَ لَهُ ۖ وَبِذَٰلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ، بسم الله الله أكبر.

পশু কিবলার দিকে ফিরিয়ে যে দোয়া পড়বে

আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা।

اللهم مِنكَ وَلَكَ

পশু জবেহ করার সময় এই দোয়া পড়বে

উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার

এরপর  পড়বে

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিন্নি কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মাদিন ওয়া খলিলিকা ইবরাহিমা আলাইহিমাস সালাম।’

اللهم تقبل منا كما تقبل من حبيقك محمد وخليلك إبراهيم عليه السلام