কোরবানি

qurbani
. ইসলামে কোরবানি কি?

কোরবানি (আরবি: قربانى , কুরবান অথবা আদ্বহা বা আযহা أضحية কে ইসলামী আইন হিসাবে উল্লেখ করা হয়, যা ঈদ উল আযহার সময় পশু উৎসর্গের অনুষ্ঠান। ইসলামি মতে কোরবানি হচ্ছে নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট ব্যক্তির আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পুরস্কার লাভের আশায় নির্দিষ্ট পশু জবেহ করা। জিলহজ মাসের ১০ তারিখ সকাল থেকে ১২ তারিখ সন্ধ্যাা পর্যন্ত আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য পশু জবাই করাকে ইসলামে কোরবানি বলে।

কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে কোরবানি

আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ দিয়েছেন:

فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَٱنۡحَرۡ

“তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর এবং (পশু) কোরবানি কর”

আর আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নির্দেশ পালন ওয়াজিব]

[সূরা কাউছার, আয়াত: ২]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

 

مَنْ  مَنْ كَانَ لَهُ سَعَةٌ وَلَمْ يُضَحِّ فَلاَ يَقْرَبَنَّ مُصَلاَّنَا

“যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারে না আসে” যারা কোরবানি পরিত্যাগ করে তাদের প্রতি এ হাদিস একটি সতর্ক-বাণী। তাই কোরবানি ওয়াজিব।

[আহমদ, ইবনু মাজাহ: ৩১২৩] 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

 

 يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ عَلَى كُلِّ أَهْلِ بَيْتٍ فِي كُلِّ عَامٍ أُضْحِيَّةً وَعَتِيرَةً

হে মানব সকল ! প্রত্যেক পরিবারের দায়িত্ব হল প্রতি বছর কোরবানি দেয়া।

[ইবনু মাজাহ: ৩১২৫]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

مَنْ كَانَ لَهُ ذِبْحٌ يَذْبَحُهُ فَإِذَا أُهِلَّ هِلاَلُ ذِي الْحِجَّةِ فَلاَ يَأْخُذَنَّ مِنْ شَعْرِهِ وَلاَ مِنْ أَظْفَارِهِ شَيْئًا حَتَّى يُضَحِّيَ

“তোমাদের মাঝে যে কোরবানি করতে চায়, যিলহজ মাসের চাঁদ দেখার পর সে যেন কোরবানি সম্পন্ন করার আগে তার কোনো চুল ও নখ না কাটে”

[মুসলিম: ১৯৭৭]

qurbani
. হাবিল ও কাবিলের কোরবানির ইতিহাস

ইসলামে কোরবানির ইতিহাস বেশ প্রাচীন। আল কুরআনে হাবিল এবং কাবিলের উল্লেখ পাওয়া যায়। হাবিল প্রথম মানুষ যে আল্লাহর জন্য একটি পশু কোরবানি করেন । ইবনে কাসির বর্ণনা করেছেন যে, হাবিল একটি ভেড়া এবং তার ভাই কাবিল তার ফসলের কিছু অংশ স্রষ্টার উদ্দেশ্যে নিবেদন করে। আল্লাহর নির্ধারিত পদ্ধতি ছিল যে আগুন আকাশ থেকে নেমে আসবে এবং গ্রহণযোগ্য কোরবানি গ্রহণ করবে।



তদনুসারে, আগুন নেমে আসে এবং হাবিলের জবেহকৃত পশুটির কোরবানি গ্রহণ করে। অন্যদিকে কাবিলের ফসল কোরবানি প্রত্যাখ্যান করে। কাবিল এই ঘটনায় ঈর্ষান্বিত হয় ও সামাজিভাবে অপমানবোধ করে কোরবানি কবুল না হওয়ার বিষয়টি তার ভাই হাবিলকে হত্যা করে, যা মানব ইতিহাসের প্রথম হত্যাকাণ্ড হিসেবে পরিচিত। কাবিল তার কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত না হওয়ায় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেননি।



কোরবানি ইতিহাস খুবই প্রাচীন। সেই আদি পিতা আদম (আলাইহিস সালাম)-এর যুগ থেকেই কোরবানি বিধান চলে আসছে। আদম (আলাইহিস সালাম)-এর দুই ছেলে হাবীল ও কাবীলের কোরবানি পেশ করার কথা আমরা মহাগ্রন্থ আল-কুরআন থেকে জানতে পারি।


মহান আল্লাহ বলেন:

وَاتۡلُ عَلَيۡهِمۡ نَبَاَ ابۡنَىۡ اٰدَمَ بِالۡحَـقِّ​ۘ اِذۡ قَرَّبَا قُرۡبَانًا فَتُقُبِّلَ مِنۡ اَحَدِهِمَا وَلَمۡ يُتَقَبَّلۡ مِنَ الۡاٰخَرِؕ قَالَ لَاَقۡتُلَـنَّكَ​ؕ قَالَ اِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللّٰهُ مِنَ الۡمُتَّقِيۡنَ‏

অর্থাৎ, আদমের দুই পুত্রের (হাবিল ও কাবিলের) বৃত্তান্ত তুমি তাদেরকে যথাযথভাবে শুনিয়ে দাও, যখন তারা উভয়ে কোরবানি করেছিল, তখন একজনের কোরবানি কবুল হল এবং অন্য জনের কোরবানি কবুল হল না। তাদের একজন বলল, আমি তোমাকে অবশ্যই হত্যা করব। অপরজন বলল, আল্লাহ তো সংযমীদের কোরবানিই কবুল করে থাকেন। কোরবানির বিধান প্রত্যেক জাতির জন্যই ছিল। 

[সূরা মাইদাহ, আয়াত: ২৭]

qurbani
. ইব্রাহিম (আঃ) এর কোরবানি

ইসলামের বিভিন্ন বর্ণনা অনুযায়ী, মহান আল্লাহ তা আলা ইসলামের রাসুল হযরত ইব্রাহীম কে স্বপ্নযোগে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বস্তুটি কোরবানি করার নির্দেশ দেনঃ “তুমি তোমার প্রিয় বস্তু আল্লাহর নামে কোরবানি কর। ইব্রাহীম স্বপ্নে এ আদেশ পেয়ে ১০টি উট কোরবানি করলেন। পুনরায় তিনি একই স্বপ্ন দেখলেন। ইব্রাহীম আবার ১০০টি উট কোরবানি করেন।

 


এরপরেও তিনি একই স্বপ্ন দেখে ভাবলেন, আমার কাছে তো এ মুহূর্তে প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আ.) ছাড়া আর কোনো প্রিয় বস্তু নেই। তখন তিনি পুত্রকে কোরবানির উদ্দেশ্যে আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। যখন ইব্রাহীম আরাফাত পর্বতের উপর তাঁর পুত্রকে কোরবানি দেয়ার জন্য গলদেশে ছুরি চালানোর চেষ্টা করেন, তখন তিনি বিস্মিত হয়ে দেখেন যে তাঁর পুত্রের পরিবর্তে একটি প্রাণী কোরবানি হয়েছে এবং তাঁর পুত্রের কোন ক্ষতি হয়নি। এই ঘটনাকে স্মরণ করে সারা বিশ্বের মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য প্রতি বছর এই দিবসটি ঈদ উল আধহা নামে উদ্‌যাপন করে।

মহান আল্লাহ বলেন:

وَلِكُلِّ اُمَّةٍ جَعَلۡنَا مَنۡسَكًا لِّيَذۡكُرُوا اسۡمَ اللّٰهِ عَلٰى مَا رَزَقَهُمۡ مِّنۡۢ بَهِيۡمَةِ الۡاَنۡعَامِ ؕ فَاِلٰهُكُمۡ اِلٰـهٌ وَّاحِدٌ فَلَهٗۤ اَسۡلِمُوۡا​ ؕ وَبَشِّرِ الۡمُخۡبِتِيۡنَ ۙ‏

অর্থাৎ, আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কোরবানি বিধান দিয়েছি; যাতে আমি তাদেরকে জীবনোপকরণ সবরূপ যে সব চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছি সেগুলির উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। তোমাদের উপাস্য একমাত্র উপাস্য। সুতরাং তোমরা তাঁরই নিকট আত্মসমর্পণ কর। আর সুসংবাদ দাও বিনীতগণকে; যাদের হূদয় ভয়ে কম্পিত হয় আল্লাহর নাম স্মরণ করা হলে, যারা তাদের বিপদ-আপদে ধৈর্যধারণ করে, নামায কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রুযী দিয়েছি তা হতে ব্যয় করে।

[সূরা হাজ্জ: ৩৪-৩৫]

ইব্রাহীম (আঃ) এর কোরবানি আদর্শ হওয়ার ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন:

َلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ السَّعْيَ قَالَ يَا بُنَيَّ إِنِّي أَرَى فِي الْمَنَامِ أَنِّي أَذْبَحُكَ فَانظُرْ مَاذَا تَرَى قَالَ يَا أَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُ سَتَجِدُنِي إِن شَاء اللهُ مِنَ الصَّابِرِينَ- فَلَمَّا أَسْلَمَا وَتَلَّهُ لِلْجَبِينِ- وَنَادَيْنَاهُ أَنْ يَا إِبْرَاهِيمُ- قَدْ صَدَّقْتَ الرُّؤْيَا إِنَّا كَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ- إِنَّ هَذَا لَهُوَ الْبَلَاء الْمُبِينُ  وَفَدَيْنَاهُ بِذِبْحٍ عَظِيمٍ - وَتَرَكْنَا عَلَيْهِ فِي الْآخِرِينَ

অর্থাৎ, অতঃপর সে (ইসমাঈল) যখন পিতা ইব্রাহীম (আঃ) এর সাথে কাজ করার বয়সে উপনীত হল, তখন ইব্রাহীম তাকে বলল, ‘হে বেটা! আমি স্বপ্নে দেখি যে, তোমাকে যবেহ করছি; এখন তোমার অভিমত কি দেখ।’ সে বলল, ‘আব্বা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, আপনি তা পালন করুন। ইনশাআল্লাহ, আপনি আমাকে ধৈর্যশীলরূপে পাবেন। অনন্তর পিতা-পুত্র উভয়েই যখন আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইব্রাহীম তাকে যবেহ করার জন্য অধোমুখে শায়িত করল, তখন আমি ডেকে বললাম, ‘হে ইব্রাহীম! তুমি তো স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করে দেখালে। আমি এভাবেই সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। নিশ্চয় এটা এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আর আমি তার পরিবর্তে যবেহ করার জন্য এক মহান জন্তু দিয়ে তাকে মুক্ত করে নিলাম। আর তার জন্য এ বিষয়টি পরবর্তীদের জন্য স্মরণীয় করে রাখলাম।

[সূরা সাফফাত: ১০২-১০৮]

qurbani
. নবী করিম (সা.) এর কোরবানি

সাহাবায়ে কেরাম রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন:

‘হে আল্লাহর রাসুল! কোরবানি প্রথাটা কী?’ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, ‘এটা তোমাদের পিতা ইব্রাহিম (আ.)-এর সুন্নত।’ সাহাবায়ে কেরাম পুনরায় জিজ্ঞেস করেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! এতে আমাদের কী লাভ রয়েছে?’ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, ‘কোরবানির পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি পাওয়া যাবে।’ সাহাবায়ে কেরাম পুনরায় জিজ্ঞেস করেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! সওফ তথা দুম্বা, ভেড়া ও উটের পশমের বিনিময়ে কি এ পরিমাণ সওয়াব পাওয়া যাবে?’ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, ‘হ্যাঁ, প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি দেওয়া হবে।’ 

[ইবনু মাজাহ: ৩১২৭]

রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতিবছরই কোরবানি করেছেন। লক্ষণীয় যে আরবি পরিভাষা মতে, ‘জবেহ’ হয় গরু, মহিষ, ভেড়া, দুম্বা ও ছাগলের ক্ষেত্রে। আর ‘নহর’ হয় উটের ক্ষেত্রে। মহানবী (সা.) সাধারণত প্রতিবছর দুটি ভেড়া জবেহ করতেন। একটি নিজের জন্য, অন্যটি উম্মতের জন্য। হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী করিম (সা.) দুটি ভেড়া কোরবানি দিতেন। আর আমি দুটি ভেড়া কোরবানি দিতাম।’

[সহীহ বুখারি: ৫৫৫৩]

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا غُنْدَرٌ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ زُبَيْدٍ الإِيَامِيِّ، عَنِ الشَّعْبِيِّ، عَنِ الْبَرَاءِ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ إِنَّ أَوَّلَ مَا نَبْدَأُ بِهِ فِي يَوْمِنَا هَذَا أَنْ نُصَلِّيَ ثُمَّ نَرْجِعَ فَنَنْحَرَ، مَنْ فَعَلَهُ فَقَدْ أَصَابَ سُنَّتَنَا، وَمَنْ ذَبَحَ قَبْلُ فَإِنَّمَا هُوَ لَحْمٌ قَدَّمَهُ لأَهْلِهِ، لَيْسَ مِنَ النُّسُكِ فِي شَىْءٍ ‏"‏‏.‏ فَقَامَ أَبُو ب

মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ)...বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমাদের এ দিনে আমরা সর্ব প্রথম যে কাজটি করবো তা হল সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবো। এরপর ফিরে এসে আমরা কোরবানি করবো। যে ব্যাক্তি এভাবে তা আদায় করল সে আমাদের নীতি অনুসরণ করল। আর যে ব্যাক্তি আগেই যবাহ করল, তা এমন গোশতরুপে গন্য যা সে তার পরিবার পরিজনের জন্য আগাম ব্যবস্থা করল। এটা কিছুতেই কোরবানি বলে গন্য নয়। 

[সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন: ৫১৪৭]

qurbani
. কোন ব্যক্তির উপর কোরবানি ফরজ

مَنْ مَنْ كَانَ لَهُ سَعَةٌ وَلَمْ يُضَحِّ فَلاَ يَقْرَبَنَّ مُصَلاَّنَا

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানী করে না, সে যেন আমাদের ঈদের মাঠের কাছেও না আসে।

[সুনান ইবনু মাজাহ: ৩১২৩]

প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন মুসলিম নর-নারী, যে কোরবানির দিনগুলোতে সাড়ে সাত ভরি সোনা, সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা বা ওই পরিমাণ রুপার সমমূল্যের নগদ অর্থ অথবা বর্তমানে বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজনে আসে না এমন জমি, প্রয়োজনাতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও একান্নভুক্ত পরিবারের মধ্যে একাধিক ব্যক্তির কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে তাদের প্রত্যেকের ওপর ভিন্ন ভিন্ন কোরবানি ওয়াজিব।

প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য নিজের পক্ষ থেকে কোরবানি করা ওয়াজিব। তার স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও বাবা-মায়ের পক্ষ থেকে কোরবানি করা ওয়াজিব নয়।

নবী করিম (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, ‘কোরবানির দিন কোরবানির চেয়ে উত্তম আমল নেই। কিয়ামতের দিন কোরবানির পশুকে শিং, পশম ও খুরসহ পেশ করা হবে এবং কোরবানির জন্তুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই আল্লাহতায়ালার কাছে তা কবুল হয়ে যায়। তাই তোমরা খুব আনন্দ চিত্তে কোরবানি কর।

[কিফায়াতুল মুফতি: ৮/১৭৮]

حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ عَمَّارٍ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ عَيَّاشٍ، حَدَّثَنَا ابْنُ عَوْنٍ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ سِيرِينَ، قَالَ سَأَلْتُ ابْنَ عُمَرَ عَنِ الضَّحَايَا، أَوَاجِبَةٌ هِيَ قَالَ ضَحَّى رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ وَالْمُسْلِمُونَ مِنْ بَعْدِهِ وَجَرَتْ بِهِ السُّنَّةُ ‏‏

মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনে উমার (রাঃ) এর নিকট কোরবানী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম যে, তা ওয়াজিব কি না? তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরবানী করেছেন, তাঁর পরে মুসলিমরাও কোরবানি করেছে এবং এ সুন্নাত অব্যাহতভাবে প্রবর্তিত হয়েছে।

[সুনান ইবনু মাজাহ: ৩১২৪]

حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا مُعَاذُ بْنُ مُعَاذٍ، عَنِ ابْنِ عَوْنٍ، قَالَ أَنْبَأَنَا أَبُو رَمْلَةَ، عَنْ مِخْنَفِ بْنِ سُلَيْمٍ، قَالَ كُنَّا وُقُوفًا عِنْدَ النَّبِيِّ ـ صلى الله عليه وسلم بِعَرَفَةَ فَقَالَ ‏ "‏ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ عَلَى كُلِّ أَهْلِ بَيْتٍ فِي كُلِّ عَامٍ أُضْحِيَّةً وَعَتِيرَةً ‏"‏ ‏.‏ أَتَدْرُونَ مَا الْعَتِيرَةُ هِيَ الَّتِي يُسَمِّيهَا النَّاسُ الرَّجَبِيَّةَ ‏‏

মিখনাফ ইবনে সুলাইম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আরাফাতের ময়দানে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট অবস্থানরত ছিলাম। তখন তিনি বলেনঃ হে জনগণ! প্রতিটি পরিবারের পক্ষ থেকে প্রতি বছর একটি কোরবানী ও একটি আতীরা রয়েছে। তোমরা কি জানো আতীরা কী? তা হলো, যাকে তোমরা রাজাবিয়া বলো।

[সুনান ইবনু মাজাহ: ৩১২৫]

qurbani
. কোরবানির পশু নির্বাচন

আল্লাহ তা'আলা বলেন:

وَ لِکُلِّ اُمَّۃٍ جَعَلۡنَا مَنۡسَکًا لِّیَذۡکُرُوا اسۡمَ اللّٰهِ عَلٰی مَا رَزَقَهُمۡ مِّنۡۢ بَهِیۡمَۃِ الۡاَنۡعَامِ ؕ فَاِلٰـهُکُمۡ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ فَلَهٗۤ اَسۡلِمُوۡا ؕ وَ بَشِّرِ الۡمُخۡبِتِیۡنَ

“আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কোরবানির বিধান দিয়েছি; যাতে আমি তাদেরকে জীবনোপকরণ স্বরূপ যে সব চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছি সেগুলোর ওপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে”

[সুরা হজ: আয়াত ৩৪]

  • ইসলামি শরিয়ত কোরবানির পশুর যে শ্রেণি ও বয়স নির্ধারণ করে পশু সেই শ্রেণি বা বয়সের হতে হবে
  • ইসলামি বিধান মতে মোট ৬ ধরনের পশু দিয়ে কোরবানি করা যায়। তাহলো- উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা।
  • এ পশুগুলোকে সুনির্দিষ্ট কিছু দোষ বা খুঁত থেকে মুক্ত থাকতে হবে।
  • কোরবানির জন্য পশু

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ نُمَيْرٍ، حَدَّثَنَا حَفْصُ بْنُ غِيَاثٍ، عَنْ جَعْفَرِ بْنِ مُحَمَّدٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، قَالَ ضَحَّى رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ بِكَبْشٍ أَقْرَنَ فَحِيلٍ يَأْكُلُ فِي سَوَادٍ وَيَمْشِي فِي سَوَادٍ وَيَنْظُرُ فِي سَوَادٍ ‏‏

কোরবানি করার জন্য উত্তম পশু। আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিং-বিশিষ্ট হৃষ্টপুষ্ট এবং মুখমণ্ডল , চোখ ও পা কালো বর্ণের একটি মেষ কোরবানি করেন।

[তিরমিজি: ১৪৯৬, নাসায়ী: ৪৩৯০, আবূ দাউদ: ২৭৯৬]

حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ شُعَيْبٍ، أَخْبَرَنِي سَعِيدُ بْنُ عَبْدِ الْعَزِيزِ، حَدَّثَنَا يُونُسُ بْنُ مَيْسَرَةَ بْنِ حَلْبَسٍ، قَالَ خَرَجْنَا مَعَ أَبِي سَعِيدٍ الزُّرَقِيِّ - صَاحِبِ رَسُولِ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ - إِلَى شِرَاءِ الضَّحَايَا ‏.‏ قَالَ يُونُسُ فَأَشَارَ أَبُو سَعِيدٍ إِلَى كَبْشٍ أَدْغَمَ لَيْسَ بِالْمُرْتَفِعِ وَلاَ الْمُتَّضِعِ

ইউনুস ইবনে মাইসারা ইবনে হালবাস (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবী আবূ সাঈদ আয-যুরাকী (রাঃ) এর সাথে কোরবানি পশু ক্রয় করতে গেলাম। ইউনুস আরো বলেন, আবূ সাঈদ (রাঃ) একটি সামান্য কালো বর্ণের মেষের দিকে ইশারা করেন, যা খুব উঁচুও ছিলো না, বেঁটেও ছিলো না। তিনি আমাকে বলেন, এই মেষটি আমার জন্য ক্রয় করো। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মেষের সাথে এর একটা সাদৃশ্য আছে।

[সুনান ইবনু মাজাহ: ৩১২৯]

حَدَّثَنَا الْعَبَّاسُ بْنُ عُثْمَانَ الدِّمَشْقِيُّ، حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ بْنُ مُسْلِمٍ، حَدَّثَنَا أَبُو عَائِذٍ، أَنَّهُ سَمِعَ سُلَيْمَ بْنَ عَامِرٍ، يُحَدِّثُ عَنْ أَبِي أُمَامَةَ الْبَاهِلِيِّ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ ‏ ‏ خَيْرُ الْكَفَنِ الْحُلَّةُ وَخَيْرُ الضَّحَايَا الْكَبْشُ الأَقْرَنُ ‏

আবূ উমামা আল-বাহিলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ উত্তম কাফন একজোড়া কাপড় (লুংগি ও চাদর) এবং উত্তম কোরবানি হলো শিং-বিশিষ্ট মেষ।

[তিরমিজি: ১৫১৭, মিশকাত: ১৬৪২]

qurbani
. কোরবানির পশু জবাই করার উত্তম উপায়

কোরবানি পশু জবেহ করার জন্য রয়েছে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর নিজের কোরবানির পশু তাঁর নিজ হাতে জবাই করেছেন। যার যার কোরবানির পশু তাদের নিজ হাতে জবাই করার কথাও এসেছে হাদিসে। কোরবানির পশু জবাইয়ের রয়েছে নিয়ম-পদ্ধতি ও দোয়া।

  • পশু জবেহ করার সময় 'بِسْمِ الله বিসমিল্লাহ' বলে জবেহ করা।
  • আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে যেন পশু জবেহ করা না হয় সে বিষয়টি খেয়াল রাখা।
  • পশু জবেহ করার সময় একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে, পশুর খাদ্যনালী, শ্বাসনালী আর দুই পাশে থাকা দুটি নালী কেটে দেয়া। এ নালীগুলে কাটা হয়ে গেলেই পশু জবেহ বিশুদ্ধ হয়ে যায়।
  • পশু জবেহ করার জন্য ছুরি ভালোভাবে ধার দিয়ে নিতে হবে। যাতে জবেহ করার সময় পশুর কষ্ট না হয়।
  • একটি পশুর সামনে অন্য পশুর জবেহ না করা। পশুর সামনে ছুরি-চাকুতে ধার না দেওয়া। এতে পশু ভয় পেয়ে যায়। এটি পশুকে কষ্ট দেওয়ারও শামিল।
  • কোরবানি করার সময় পশুকে পশুর বাম কাতে শোয়ানো। সে সময় পশুর পাগুলো পশ্চিম দিকে থাকবে।

কুরবানির পশু জবাই করার দোয়া

উচ্চারণঃ ইন্নি ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাজ ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়ালআরদা হানীফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন। ইন্না সালাতী ওয়ানুসুকী ওয়ামাহইয়ায়া ওয়ামামাতী লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন। লা শারীকালাহু ওয়াবিজালিকা উমিরতু ওয়াআনা আওয়ালুল মুসলিমীন। আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়ালাকা।...বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার।

إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضَ حَنِيفًا، وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ، إِنَّ صَلَاتِي، وَنُسُكِي، وَمَحْيَايَ، وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ، لَا شَرِيكَ لَهُ، وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ، وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ، اللَّهُمَّ مِنْكَ، وَلَكَ....بِسْمِ اللهِ اَللهُ اِكِبَر

অর্থঃ নিশ্চয়ই আমি দৃঢ়ভাবে সেই মহান সত্তার অভিমুখী হলাম, যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। আমি মুশরিকদের অন্তর্গত নই। নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ সবই বিশ্ব প্রতিপালক মহান আল্লাহর জন্য নিবেদিত। তাঁর কোনো শরিক নেই। আমি এ কাজের জন্য আদিষ্ট হয়েছি। আর আমি আত্মসমর্পণকারীদের একজন। আল্লাহর নামে, আল্লাহ সবচেয়ে

মহান।

[সুনানে আবু দাউদ: ২৭৯৫, সুনান ইবনু মাজাহ: ৩১২১]

আদম ইবনু আবূ ইয়াস (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত

حَدَّثَنَا آدَمُ بْنُ أَبِي إِيَاسٍ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، حَدَّثَنَا قَتَادَةُ، عَنْ أَنَسٍ، قَالَ ضَحَّى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بِكَبْشَيْنِ أَمْلَحَيْنِ، فَرَأَيْتُهُ وَاضِعًا قَدَمَهُ عَلَى صِفَاحِهِمَا يُسَمِّي وَيُكَبِّرُ، فَذَبَحَهُمَا بِيَدِهِ‏.‏

তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটি সাদা-কালো বর্ণের ভেড়া দ্বারা কোরবানি করেছেন। তখন আমি তাকে দেখতে পাই তিনি ভেড়া দু-টোর পার্শ্বদেশে পা রেখে বিসমিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার পড়ে নিজের হাতে সে দুটোকে যবাহ করেন।

[সহীহ বুখারী ইসলামিক ফাউন্ডেশন: ৫১৬০]

حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا أَبُو عَوَانَةَ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَنَسٍ، قَالَ ضَحَّى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بِكَبْشَيْنِ أَمْلَحَيْنِ أَقْرَنَيْنِ، ذَبَحَهُمَا بِيَدِهِ، وَسَمَّى وَكَبَّرَ وَوَضَعَ رِجْلَهُ عَلَى صِفَاحِهِمَا‏‏

যবাহ করার সময় “আল্লাহু আকবার” বলা। কুতায়বা (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটি সাদা-কালো বর্ণের শিংবিশিষ্ট ভেড়া কোরবানি করেন। তিনি ভেড়া দুটির পার্শ্বদেশে তার কদম মুবারক স্থাপন করে বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে নিজ হাতেই সেই দুটিকে যবাহ করেন।

[সহীহ বুখারী ইসলামিক ফাউন্ডেশন: ৫১৬৭]

qurbani
. মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোরবানি

মৃতের পক্ষ থেকে কোরবানি করা জায়েজ। মৃত ব্যক্তি যদি ওসিয়ত না করে থাকে তবে সেটি নফল কোরবানি হিসেবে গণ্য হবে। কোরবানির স্বাভাবিক গোশতের মতো তা নিজেরাও খেতে পারবে এবং আত্মীয়-স্বজনকেও দিতে পারবে। আর যদি মৃত ব্যক্তি কোরবানি ওসিয়ত করে গিয়ে থাকে তবে এর গোশত নিজেরা খেতে পারবে না। গরীব-মিসকীনদের মাঝে সদকা করে দিতে মূলত কুরবানির প্রচলন জীবিত ব্যক্তিদের জন্য। যেমন আমরা দেখি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবিগণ নিজেদের পক্ষে কুরবানি করেছেন। হবে।

[মুসনাদে আহমাদ ১/১০৭, হাদিস ৮৪৫]

যেমন মৃত ব্যক্তির জন্য সদকার বিষয়ে হাদিসে এসেছে:

عن عائشة- رضى الله عنها- أن رجلا أتى النبى صلى الله عليه وسلم فقال يا رسول الله: إن أمي افتلتت نفسها ولم توصى، وأظنها لو تكلمت تصدقت، أفلها أجر إن تصدقت عنها ؟ قال: نعم  

আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত: এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল—হে রাসূল! আমার মা হঠাৎ মারা গেছেন। কোনো অসিয়ত করে যেতে পারেন নি। আমার মনে হয় তিনি কোনো কথা বলতে পারলে অসিয়ত করে যেতেন। আমি যদি এখন তার পক্ষ থেকে সদকা করি তাতে কি তার সওয়াব হবে ? তিনি উত্তর দিলেন: হ্যাঁ।

[ সহীহ বুখারি: ১৩৩৮]

মৃত ব্যক্তির জন্য এ ধরনের সদকা ও কল্যাণমূলক কাজের যেমন যথেষ্ট প্রয়োজন ও তেমনি তা তাঁর জন্য উপকারী। এমনিভাবে একাধিক মৃত ব্যক্তির জন্য সওয়াব প্রেরণের উদ্দেশ্যে একটি কুরবানি করা জায়েয আছে। অবশ্য যদি কোনো কারণে মৃত ব্যক্তির জন্য কুরবানি ওয়াজিব হয়ে থাকে তাহলে তার জন্য পূর্ণ একটি কুরবানি করতে হবে।

অনেক সময় দেখা যায়, ব্যক্তি নিজেকে বাদ দিয়ে মৃত ব্যক্তির জন্য কুরবানি করেন। এটা মোটেই ঠিক নয়। ভাল কাজ নিজেকে দিয়ে শুরু করতে হয় তারপর অন্যান্য জীবিত ও মৃত ব্যক্তির জন্য করা যেতে পারে।

যেমন হাদিসে এসেছে



عن عائشة وأبي هريرة -رضى الله عنهما- أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان إذا أراد أن يضحي، اشترى كبشين عظيمين سمينين أقرنين أملحين موجوئين، [مخصيين] فذبح أحدهما عن أمته، لمن شهد لله بالتوحيد، وشهد له بالبلاغ، وذبح آخر عن محمد، وعن آل محمد- صلى الله عليه وسلم- . [صحيح ابن ماجة [صححه الألباني]

আয়েশা (রাঃ) ও আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কুরবানি দিতে ইচ্ছা করলেন তখন দুটো দুম্বা ক্রয় করলেন। যা ছিল বড়, হৃষ্টপুষ্ট, শিং ওয়ালা, সাদা-কালো বর্ণের এবং খাসি। একটি তিনি তার ঐ সকল উম্মতের জন্য কোরবানি করলেন; যারা আল্লাহর একত্ববাদ ও তার রাসূলের রিসালাতের সাক্ষ্য দিয়েছে, অন্যটি তার নিজের ও পরিবার বর্গের জন্য কোরবানি করেছেন।

[ইবনে মাজাহ: ২৫৩১]

qurbani
. কোরবানি দেওয়া পশুর মাংস বন্টন

কোরবানির মাংস বিতরণের মুস্তাহাব ও উত্তম পদ্ধতি হলো সমস্ত মাংস তিন অংশে ভাগ করা। একাংশ নিজের ও পরিবারের জন্য রাখা, আরেক অংশ স্বজনদের উপহার দেওয়া ও আরেক অংশ এতিম, অসহায় ও দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা।

বিশিষ্ট সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) রাসুল (সা.)-এর কোরবানির গোশত বণ্টন সম্পর্কে বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃ) কোরবানির মাংস তিন ভাগ করে একভাগ নিজ পরিবারের জন্য রাখতেন, এক ভাগ গরিব প্রতিবেশীকে দিতেন আর এক ভাগ অন্য গরিবদের দান করতেন

[আল ওযায়েফ, আবু মুসা আলআসবাহানি, মুগনি ইবনে কুদামা ১৩/৩৭৯-৩৮০]

حَدَّثَنَا مُعَاذُ بْنُ فَضَالَةَ، حَدَّثَنَا هِشَامٌ، عَنْ يَحْيَى، عَنْ بَعْجَةَ الْجُهَنِيِّ، عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ الْجُهَنِيِّ، قَالَ قَسَمَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بَيْنَ أَصْحَابِهِ ضَحَايَا، فَصَارَتْ لِعُقْبَةَ جَذَعَةٌ‏. فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ صَارَتْ جَذَعَةٌ‏.‏ قَالَ ضَحِّ بِهَا ‏‏

মু’আয ইবনু ফাযালা (রাঃ) ... উকবা ইবনু আমির জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীগনের মধ্যে কতগুলো কোরবানি পশু বণ্টন করলেন। তখন উকবা (রাঃ) এর ভাগে পড়ল একটি বকরীর বাচ্চা। উকবা (রাঃ) বলেন, তখন আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার ভাগে এসেছে একটি বকরীর বাচ্চা। তিনি বললেনঃ সেটিই কোরবানি করে নাও।

[সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন: ৫১৪৯]

حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، قَالَ حَدَّثَنِي سُلَيْمَانُ، عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ، عَنِ الْقَاسِمِ، أَنَّ ابْنَ خَبَّابٍ، أَخْبَرَهُ أَنَّهُ، سَمِعَ أَبَا سَعِيدٍ، يُحَدِّثُ أَنَّهُ كَانَ غَائِبًا، فَقَدِمَ فَقُدِّمَ إِلَيْهِ لَحْمٌ‏.‏ قَالَ وَهَذَا مِنْ لَحْمِ ضَحَايَانَا‏.‏ فَقَالَ أَخِّرُوهُ لاَ أَذُوقُهُ‏.‏ قَالَ ثُمَّ قُمْتُ فَخَرَجْتُ حَتَّى آتِيَ أَخِي قَتَادَةَ ـ وَكَانَ أَخَاهُ لأُمِّهِ، وَكَانَ بَدْرِيًّا ـ فَذَكَرْتُ ذَلِكَ لَهُ فَقَالَ إِنَّهُ

ইসমাঈল (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বর্ণনা করেন যে, তিনি (দীর্ঘ দিন) বাইরে ছিলেন, পরে ফিরে আসলে তার সামনে মাংস পরিবেশন করা হল। তিনি বললেনঃ এটি কি আমাদের কোরবানি গোশত? এরপর তিনি বললেনঃ এটি সরিয়ে নাও, আমি তা খাব না। তিনি বলেন এরপর আমি উঠে গেলাম এবং ঘর থেকে বেরিয়ে আমার ভাই আবূ কাতাদা ইবনু নুমান এর নিকট এলাম। আবূ কাতাদা (রাঃ) ছিলেন তার বৈপিত্রেয় ভাই এবং তিনি ছিলেন বদরী সাহাবী। তিনি বলেন, এরপর আমি তার কাছে ব্যাপারটি উল্লেখ করলে তিনি বললেনঃ তোমার অনুপহিস্থিতে এরুপ বিধান জারী হয়েছে।

[সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন: ৫১৭০] 

حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، قَالَ حَدَّثَنِي سُلَيْمَانُ، عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ، عَنِ الْقَاسِمِ، أَنَّ ابْنَ خَبَّابٍ، أَخْبَرَهُ أَنَّهُ، سَمِعَ أَبَا سَعِيدٍ، يُحَدِّثُ أَنَّهُ كَانَ غَائِبًا، فَقَدِمَ فَقُدِّمَ إِلَيْهِ لَحْمٌ‏.‏ قَالَ وَهَذَا مِنْ لَحْمِ ضَحَايَانَا‏.‏ فَقَالَ أَخِّرُوهُ لاَ أَذُوقُهُ‏.‏ قَالَ ثُمَّ قُمْتُ فَخَرَجْتُ حَتَّى آتِيَ أَخِي قَتَادَةَ ـ وَكَانَ أَخَاهُ لأُمِّهِ، وَكَانَ بَدْرِيًّا ـ فَذَكَرْتُ ذَلِكَ لَهُ فَقَالَ إِنَّهُ قَدْ حَدَثَ بَعْدَكَ أَمْرٌ‏.‏

ইসমাঈল (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বর্ণনা করেন যে, তিনি (দীর্ঘ দিন) বাইরে ছিলেন, পরে ফিরে আসলে তার সামনে মাংস পরিবেশন করা হল। তিনি বললেনঃ এটি কি আমাদের কোরবানি গোশত? এরপর তিনি বললেনঃ এটি সরিয়ে নাও, আমি তা খাব না। তিনি বলেন এরপর আমি উঠে গেলাম এবং ঘর থেকে বেরিয়ে আমার ভাই আবূ কাতাদা ইবনু নুমান এর নিকট এলাম। আবূ কাতাদা (রাঃ) ছিলেন তার বৈপিত্রেয় ভাই এবং তিনি ছিলেন বদরী সাহাবী। তিনি বলেন, এরপর আমি তার কাছে ব্যাপারটি উল্লেখ করলে তিনি বললেনঃ তোমার অনুপহিস্থিতে এরুপ বিধান জারী হয়েছে।

[সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন: ৫১৭০] 

তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

حَدَّثَنَا أَبُو عَاصِمٍ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ أَبِي عُبَيْدٍ، عَنْ سَلَمَةَ بْنِ الأَكْوَعِ، قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏‏ مَنْ ضَحَّى مِنْكُمْ فَلاَ يُصْبِحَنَّ بَعْدَ ثَالِثَةٍ وَفِي بَيْتِهِ مِنْهُ شَىْءٌ ‏"‏‏.‏ فَلَمَّا كَانَ الْعَامُ الْمُقْبِلُ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ نَفْعَلُ كَمَا فَعَلْنَا عَامَ الْمَاضِي قَالَ ‏"‏ كُلُوا وَأَطْعِمُوا وَادَّخِرُوا فَإِنَّ ذَلِكَ الْعَامَ كَانَ بِالنَّاسِ جَهْدٌ فَأَرَدْتُ

তোমাদের মধ্যে যে ব্যাক্তি কোরবানি করেছে, সে যেন তৃতীয় দিবসে এমতাবস্থায় সকাল অতিবাহিত না করে যে, তার ঘরে কোরবানি মাংস কিছু পরিমান অবশ্যই থাকে। এরপর যখন পরবর্তী বছর আসল, তখন সাহাবীগন বললেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা কি সে রূপ করবো যে রূপ গত বছর করেছিলাম? তখন তিনি বললেনঃ তোমরা নিজেরা খাও অন্যকে খাওয়াও এবং সঞ্চয় করে রাখ কেননা, গত বছর তো মানুষের মধ্যে ছিল অভাব অনটন। তাই আমি চেয়েছিলাম যে, তোমরা তাতে সাহায্য কর।

[সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন: ৫১৭১]

ইসমাঈল ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ)..আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত:

حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ حَدَّثَنِي أَخِي، عَنْ سُلَيْمَانَ، عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ، عَنْ عَمْرَةَ بِنْتِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ قَالَتِ الضَّحِيَّةُ كُنَّا نُمَلِّحُ مِنْهُ، فَنَقْدَمُ بِهِ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بِالْمَدِينَةِ فَقَالَ ‏ "‏ لاَ تَأْكُلُوا إِلاَّ ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ ‏"‏‏.‏ وَلَيْسَتْ بِعَزِيمَةٍ، وَلَكِنْ أَرَادَ أَنْ يُطْعِمَ مِنْهُ وَاللَّهُ أَعْلَمُ‏‏

বলেন, মদিনায় অবস্থানের সময় আমরা কুররানীর মাংসের মধ্যে লবন মিশ্রিত করে রেখে দিতাম। এরপর তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে পেশ করতাম। তিনি বলতেনঃ তোমরা তিন দিনের পর খাবে না। তবে এটি জরুরী নয়। বরং তিনি চেয়েছেন যে, তা থেকে যেন অন্যদের খাওয়ান হয়। আল্লাহ অধিক অবগত।

[সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন: ৫১৭২]

qurbani
১০. ঈদের দিনে কর্মকাণ্ড

আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের নির্দেশিত পদ্ধতি অনুসারে আমরা আমাদের ঈদ উদযাপন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি।

  • ঈদের দিন রোযা রাখা নিষেধ
  • ঈদের রাত থেকে তাকবীর পাঠ করা
  • ঈদ উপলক্ষে পরস্পরে শুভেচ্ছা বিনিময় করা
  • ভালো পোশাক ও ভালো খাবারের আয়োজন করা
  • ঈদের নামাযের প্রতি যত্মশীল হওয়া
  • গোসল ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
  • মহিলাদের ঈদগাহে যাওয়া
  • পায়ে হেঁটে ঈদগাহে গমন করা

জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত:

عَن جَابِرٍ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ ﷺ إِذَا كَانَ يَومُ عيدٍ خَالَفَ الطَّريقَ رواه البخاري

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিনে রাস্তা পরিবর্তন করতেন। রাস্তা পরিবর্তনের মানে হচ্ছে, এক রাস্তায় যেতেন আর অন্য রাস্তায় ফিরতেন।

[সহীহ বুখারী: ৯৮৬]

ঈদের দিন বেশি বেশি তাকবীর বলা

তাকবীর হল, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ। ঈদগাহে যাওয়ার সময় বিশেষ গুরুত্বের সাথে তাকবীর বলতে থাকবে। নাফে রাহ. বলেন, ইবনে  (রাঃ) ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের সকালে সশব্দে তাকবীর বলতে বলতে ঈদগাহে যেতেন এবং ইমাম আসা পর্যন্ত তাকবীর বলতে থাকতেন।

[সুনানে দারাকুতনী: ১৭১৬]

عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَدِمَ رَسُولُ اللهِ ﷺ الْمَدِينَةَ وَلَهُمْ يَوْمَانِ يَلْعَبُونَ فِيهِمَا فَقَالَ مَا هَذَانِ الْيَوْمَانِ قَالُوا كُنَّا نَلْعَبُ فِيهِمَا فِى الْجَاهِلِيَّةِ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ إِنَّ اللهَ قَدْ أَبْدَلَكُمْ بِهِمَا خَيْرًا مِنْهُمَا يَوْمَ الأَضْحَى وَيَوْمَ الْفِطْرِ

আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় আগমন করলে দেখলেন, মদীনাবাসীরা দুটি ঈদ পালন করছে। তা দেখে তিনি বললেন, (জাহেলিয়াতে) তোমাদের দুটি দিন ছিল যাতে তোমরা খেলাধূলা করতে। এক্ষণে ঐ দিনের পরিবর্তে আল্লাহ তোমাদেরকে দুটি উত্তম দিন প্রদান করেছেন; ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহার দিন।

[আবূ দাঊদ: ১১৩৬, নাসাঈ: ১৫৫৬]

ঈদের দিন একে অপরের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে শুভেচ্ছা বিনিময় করা সুন্নত।

হাদিস শরিফে এসেছে:

জুবাইর ইবনু নুফাইর  (রাঃ) বর্ণিত, তিনি বলেন- নবীজী (সাঃ) এর সাহাবোয়ে কেরাম ঈদের দিন পরস্পর সাক্ষাৎ হলে বলতেন ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়ামিন কুম’ আল্লাহ আমার এবং আপনার যাবতীয় ভাল কাজ কবুল করুক।

[ফাতহুল কাদির, ২খন্ড, ৫১৭]  

qurbani
১১. ঈদুল আযহার নামাজ

  • ঈদের নামাজের পদ্ধতি স্বাভাবিক নামাজের মতো নয়।
  • ঈদের নামাজ আদায় করা ওয়াজিব।
  • ঈদের নামাজ ছাদবিহীন খোলা জায়গায় আদায় করা সুন্নাত
  • রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খোলা জায়গায় ঈদের নামাজ আদায় করতে
  • যদি খোলা স্থানের ব্যবস্থা না থাকে তবে মসজিদেও ঈদের নামাজ পড়া যাবে।
  • সকল মুসলিম ছেলেদের জন্য এই ঈদের দুই রাকাত নামাজ আদায় করা ওয়াজিব এবং মহিলাদের জন্য এই নামাজ সুন্নৎ। 
  • নামাজ ২ রাকাআত। যা আদায় করা ওয়াজিব এবং জামাআতে আদায় করতে হয়।
  • ঈদের ২ রাকাআত নামাজে অতিরিক্ত ৬ তাকবির দিতে হয়।
  • ঈদের নামাজ শেষে খুতবা মনোযোগ সহকারে শোনা।

হাদিসে এসেছে:

আবদুল্লাহ ইবনু সায়িব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে আমি ঈদগাহে উপস্থিত হলাম। এরপর তিনি আমাদের নামাজ পড়িয়েছেন। অতঃপর তিনি বলেন: “আমরা নামাজ শেষ করেছি। যার ইচ্ছা সে খুতবা শোনার জন্যে বসবে, আর যার চলে যাওয়ার ইচ্ছা, সে চলে যাবে।’ 

[ইবনু মাজাহ: ১০৭৩]

ঈদের নামাজের আগে-পরে ঈদের নামাজের স্থানে যে কোনো ধরনের নফল নামাজ আদায় করা মাকরুহ। ঈদের নামাজের পরে ঈদগাহ থেকে বাড়ি ফিরে দুই রাকাত নফল আদায় করা সুন্নত। হাদিসে এসেছে- আবু সাঈদ খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- নবী করিম (সাঃ) ঈদের নামাজের আগে কোনো নামাজ পড়তেন না। তবে নামাজের পর ঘরে ফিরে করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন।

[সুনান ইবনু মাজাহ: ১২৯৩]

qurbani
১২. সালাত (ঈদের) আদায়ের পরে জবাই করা

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আজকের এই দিন আমরা যা দিয়ে শুরু করব তা হচ্ছে নামায। অতঃপর ফিরে গিয়ে কুরবানী করব। অতএব যে ব্যক্তি এরূপ করবে সে আমাদের সুন্নাহ (তরীকার) অনুবর্তী। আর যে ব্যক্তি (নামাযের পূর্বে) কুরবানী করে নিয়েছে, তাহলে তা মাংসই; যা সে নিজের পরিবারের জন্য পেশ করবে এবং তা কুরবানীর কিছু নয়।

[মুসলিম: ১৯৬১]

حَدَّثَنَا حَجَّاجُ بْنُ الْمِنْهَالِ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، قَالَ أَخْبَرَنِي زُبَيْدٌ، قَالَ سَمِعْتُ الشَّعْبِيَّ، عَنِ الْبَرَاءِ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَخْطُبُ فَقَالَ ‏"‏ إِنَّ أَوَّلَ مَا نَبْدَأُ مِنْ يَوْمِنَا هَذَا أَنْ نُصَلِّيَ، ثُمَّ نَرْجِعَ فَنَنْحَرَ، فَمَنْ فَعَلَ هَذَا فَقَدْ أَصَابَ سُنَّتَنَا، وَمَنْ نَحَرَ فَإِنَّمَا هُوَ لَحْمٌ يُقَدِّمُهُ لأَهْلِهِ، لَيْسَ مِنَ النُّسُكِ فِي شَىْءٍ ‏"‏‏.‏ فَقَا

হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল (রহঃ) ... বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে খুতবা দেওয়ার সময় বলতে শুনেছি আমাদের আজকের এই দিনে সর্ব প্রথম আমরা যে কাজটি করবো তা হল সালাত (নামায/নামাজ) আদায়। এরপর আমরা ফিরে গিয়ে কোরবানি করবো। যে ব্যাক্তি এভাবে করবে সে আমাদের সুন্নাতকে অনুসরণ করবে। আর যে ব্যাক্তি পূর্বেই জবাই করে তা তার পরিবার পরিজনের জন্য অগ্রিম মাংস (হিসেবে গন্য), তা কিছুতেই কোরবানি বলে গণ্য নয়। তখন আবূ বুরদা (রাঃ) বললেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি সালাত আদায়ের পূর্বেই জবাই করে ফেলেছি এবং আমার কাছে একটি বকরীর বাচ্চা আছে। যেটি পূর্ণ এক বছরের বকরীর চাইতে উত্তম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি সেটিকে কোরবানি কর। তোমার পরে এ নিয়ম আর কারো জন্য প্রযোজ্য হবে না কিংবা তিনি বলেছেনঃ আদায় যোগ্য হবে না।  

[সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন: ৫১৬২] 

আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন

حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ أَيُّوبَ، عَنْ مُحَمَّدٍ، عَنْ أَنَسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ مَنْ ذَبَحَ قَبْلَ الصَّلاَةِ فَلْيُعِدْ ‏ فَقَالَ رَجُلٌ هَذَا يَوْمٌ يُشْتَهَى فِيهِ اللَّحْمُ ـ وَذَكَرَ مِنْ جِيرَانِهِ فَكَأَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم عَذَرَهُ ـ وَعِنْدِي جَذَعَةٌ خَيْرٌ مِنْ شَاتَيْنِ فَرَخَّصَ لَهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَلاَ أَدْرِي بَلَغَتِ ال

তিনি বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের পূর্বে জবাই করেছে সে যেন পূনরায় জবাই করে। তখন এক ব্যাক্তি দাঁড়িয়ে বললঃ এটা তো এমন দিন যে দিন গোশত খাওয়ার আগ্রহ হয়। সে তার প্রতিবেশীদের অভাবের কথাও উল্লেখ করল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেন তার ওজর অনুধাবন করলেন। লোকটি বলল আমার কাছে এমন একটি বকরীর বাচ্চা রয়েছে সেটি দুটি মাংসবহুল বকরী অপেক্ষা উত্তম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাকে সেটি কোরবানি করার অনুমতি দিলেন। (বর্ননাকারী বলেনঃ) আমি জানিনা, এ অনুমতি অন্যদের পর্যন্ত পৌছেছে কি না। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভেড়া দু টির দিকে ঝুকলেন অর্থাৎ তিনি সে দুটিকে জবাই করলেন। এরপর লোকজন বকরীয় একটি ক্ষুদ্র পালের দিকে গেল এবং সেগুলোকে জবাই করল।

[সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন: ৫১৬৩]

Powered By দ্বীন