ফরয নামায ছাড়া অন্যান্য নামায দুই প্রকার। প্রথম প্রকার হল সেই নামায, যা (সময় ও রাকআত সংখ্যা দ্বারা) নির্দিষ্ট নয়। এ নামায নিষিদ্ধ সময় ছাড়া যে কোন সময়ে অনির্দিষ্ট রাকআতে পড়া যায়। আর দ্বিতীয় প্রকার হল সেই নামায, যা (সময় ও রাকআত সংখ্যা দ্বারা) নির্দিষ্ট। যে নামাযের নির্দিষ্ট সময় ও রাকআত সংখ্যা মহানবী (ﷺ) কর্তৃক প্রমাণিত আছে। এই শ্রেণীর নামায আবার দুই প্রকার; সুন্নাতে মুআক্কাদাহ ও গায়র মুআক্কাদাহ।
যে নামায পড়া বাধ্যতামূলক নয়, যা ত্যাগ করলে গুনাহ হয় না কিন্তু পড়লে সওয়াব হয় সেই শ্রেণীর নামাযের বড় মাহাত্ম রয়েছে শরীয়তে।
রসূল (ﷺ) বলেন, “কিয়ামতের দিন বান্দার নিকট থেকে তার আমলসমূহের মধ্যে যে আমলের হিসাব সর্বাগ্রে নেওয়া হবে, তা হল নামায। নামায ঠিক হলে সে পরিত্রাণ ও সফলতা লাভ করবে। নচেৎ (নামায ঠিক না হলে) ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সুতরাং (হিসাবের সময়) ফরয নামাযে কোন কমতি দেখা গেলে আল্লাহ তাবারাকা অতাআলা ফিরিশ্তাদের উদ্দেশ্যে বলবেন, ‘দেখ, আমার বান্দার কোন নফল (নামায) আছে কি না।’ অতএব তার নফল নামায দ্বারা ফরয নামাযের ঘাটতি পূরণ করা হবে। অতঃপর আরো সকল আমলের হিসাব অনুরুপ গ্রহণ করা হবে।”
[আবূদাঊদ, সুনান ৭৭০, তিরমিযী, সুনান ৩৩৭, সইবনে মাজাহ্, সুনান ১১৭নং, সহিহ তারগিব - ১/১৮৫]
মহানবী (ﷺ) বলেন, আল্লাহ বলেন, “যে ব্যক্তি আমার ওলীর বিরুদ্ধে শত্রুতা পোষণ করবে, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করব। বান্দা যা কিছু দিয়ে আমার নৈকট্য লাভ করে থাকে তার মধ্যে আমার নিকট প্রিয়তম হল সেই ইবাদত, যা আমি তার উপর ফরয করেছি। আর সে নফল ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে। পরিশেষে আমি তাকে ভালোবাসি। অতঃপর আমি তার শোনার কান হয়ে যাই, তার দেখার চোখ হয়ে যাই, তার ধরার হাত হয়ে যাই, তার চলার পা হয়ে যাই! সে আমার কাছে কিছু চাইলে আমি অবশ্যই তাকে তা দান করি। সে আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করলে আমি অবশ্যই তাকে আশ্রয় দিয়ে থাকি। আর আমি যে কাজ করি তাতে কোন দ্বিধা করি না -যতটা দ্বিধা করি এজন মুমিনের জীবন সম্পর্কে; কারণ, সে মরণকে অপছন্দ করে। আর আমি তার (বেঁচে থেকে) কষ্ট পাওয়াকে অপছন্দ করি।”
[বুখারী ৬৫০২নং]
উল্লেখ্য যে, আল্লাহ বান্দার কান, চোখ, হাত ও পা হওয়ার অর্থ হল, বান্দা আল্লাহর সন্তুষ্টি মতেই এ সবকে ব্যবহার করে। যাতে ব্যবহার করলে তিনি অসন্তুষ্ট, তাতে সে ঐ সকল অঙ্গকে ব্যবহার করে না।
ফরয নামায বিধিবদ্ধ হয়েছে দ্বীনের প্রচার ও তার প্রতীকের বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর উদ্দেশ্যে। তাই ফরয নামায প্রকাশ্যভাবে লোক মাঝে প্রতিষ্ঠা করা হয়। পক্ষান্তরে নফল নামায বিধিবদ্ধ হয়েছে নিছক মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে তাঁর নৈকট্য লাভ করার লক্ষ্যে। সুতরাং নফল নামায যত গুপ্ত হবে, তত লোকচক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ তথা ‘রিয়া’ থেকে অধিক দূর ও পবিত্র হবে।
[ফাইযুল ক্বাদীর ৪/২২০]
আর সে জন্যই নফল নামায স্বগৃহে গোপনে পড়া উত্তম। তাছাড়া নফল নামায ঘরে পড়লে নামাযের তরীকা ও গুরুত্ব পরিবার-পরিজনের কাছে প্রকাশ পায়। আর এ জন্য হুকুম হল, “তোমরা ঘরে নামায পড় এবং তা কবর বানিয়ে নিও না।”
[বুখারী ৪৩২, মুসলিম, সহীহ ৭৭৭, আবূদাঊদ, সুনান ১৪৪৮, তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান, জামে ৩৭৮৪নং]
অর্থাৎ, কবরে বা কবরস্থানে যেমন নামায নেই বা হয় না সেইরুপ নিজের ঘরকেও নামাযহীন করে রেখো না। মহানবী (ﷺ) আরো বলেন, “তোমরা স্বগৃহে নামায পড় এবং তাতে নফল পড়তে ছেড়ো না।” [সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ১৯১০, জামে ৩৭৮৬নং]
আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, “তোমাদের কেউযখন মসজিদে (ফরয) নামায সম্পন্ন করে তখন তার উচিৎ, সে যেন তার নামাযের কিছু অংশ (সুন্নত নামায) নিজের বাড়ির জন্য রাখে। কারণ বাড়িতে পড়া ঐ কিছু নামাযের মধ্যে আল্লাহ কল্যাণ নিহিত রেখেছেন।”
[মুসলিম, সহীহ ৭৭৮নং]
মহানবী (ﷺ) বলেন, “হে মানবসকল! তোমরা স্বগৃহে নামায আদায় কর। যেহেতু ফরয নামায ছাড়া মানুষের শ্রেষ্ঠতম নামায হল তার স্বগৃহে পড়া নামায।”
[নাসাঈ, সুনান, ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ, সহিহ তারগিব ৪৩৭]
নবী মুবাশ্শির (ﷺ) বলেন, “যেখানে লোকে দেখতে পায় সেখানে মানুষের নফল নামায অপেক্ষা যেখানে লোকে দেখতে পায় না সেখানের নামায ২৫ টি নামাযের বরাবর।”
[আবূ য়্যা’লা, জামে ৩৮২১]
আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, “লোকচক্ষুর সম্মুখে (নফল) নামায পড়া অপেক্ষা মানুষের স্বগৃহে নামায পড়ার ফযীলত ঠিক সেইরুপ, যেরুপ নফল নামায অপেক্ষা ফরয নামাযের ফযীলত বহুগুণে অধিক।
[বায়হাকী, সহিহ তারগিব ৪৩৮]
এমন কি মদ্বীনাবাসীর জন্যও মসজিদে নববীতে নফল নামায পড়ার চাইতে নিজ নিজ ঘরে পড়া বেশী উত্তম।
[আবূদাঊদ, সুনান, জামে ৩৮১৪]
নফল নামায সাধারণত: একার নামায। তাই তাতে ইচ্ছামত লম্বা ক্বিরাআত করা যায়। বরং এই নামাযে কিয়াম লম্বা করা মুস্তাহাব। মহানবী (ﷺ)-কে জিজ্ঞাসা করা হল যে, সবচেয়ে উত্তম নামায কি? উত্তরে তিনি বললেন, “লম্বা কিয়াম বিশিষ্ট নামায।”
[আবূদাঊদ, সুনান ১৪৪৯]
আর এ কথা বিদিত যে, মহানবী (ﷺ) তাহাজ্জুদের নামাযে এত লম্বা কিয়াম করতেন যে, তাতে তাঁর পা ফুলে যেত। সাহাবাগণ বলেছিলেন, আল্লাহ আপনার আগের-পরের সকল গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন তবুও আপনি কেন অনুরুপ নামায পড়েন? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, “আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হ্ব না?”
[বুখারী, মুসলিম, আহমাদ, মুসনাদ, তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান ইবনে মাজাহ্, সুনান, মিশকাত ১২২০]