• আল্লাহ সর্বশক্তিমান
• আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নেই
• আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর প্রেরিত দূত
• নামাজের জন্য এসো
• সাফল্যের জন্য এসো
• আল্লাহ্ মহান
• আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই
• আছছালা-তু খায়রুম মিনান নাঊম” - “ঘুম হতে নামাজ উত্তম”( শুধুমাত্র ফজর নামাজের সময়)
• আল্লাহ সর্বশক্তিমান
• আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নেই
• আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর প্রেরিত দূত
• নামাজের জন্য এসো
• সাফল্যের জন্য এসো
• নামাজ আরম্ভ হলো
• আল্লাহ্ মহান
• আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই
মক্কায় অবস্থানকালে মহানবী (ﷺ) তথা মুসলিমগণ বিনা আযানে নামায পড়েছেন। অতঃপর মদ্বীনায় হিজরত করলে হিজরী ১ম (মতান্তরে ২য়) সনে আযান ফরয হয়।
[ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ২/৭৮]
সকল মুসলমানকে একত্রে সমবেত করে জামাআতবদ্ধভাবে নামায পড়ার জন্য এমন এক জিনিসের প্রয়োজন ছিল, যা শুনে বা দেখে তাঁরা জমা হতে পারতেন। এ জন্যে তাঁরা পূর্ব থেকেই মসজিদে উপস্থিত হয়ে নামাযের অপেক্ষা করতেন। এ মর্মে তাঁরা একদিন পরামর্শ করলেন, কেউ বললেন নাসারাদের ঘন্টার মত আমরাও ঘন্টা ব্যবহার করব। কেউ কেউ বললেন, বরং ইয়াহুদীদের শৃঙ্গের মত শৃঙ্গ ব্যবহার করব। হযরত উমার (রাঃ) বললেন, ‘বরং নামাযের প্রতি আহ্বান করার জন্য একটি লোককে (গলি-গলি) পাঠিয়ে দিলে কেমন হয়?’ কিন্তু মহানবী (ﷺ) বললেন, “হে বিলাল! ওঠ, নামাযের জন্য আহ্বান কর।
[বুখারী ৬০৪, মুসলিম, সহীহ]
কেউ বললেন, ‘নামাযের সময় মসজিদে একটি পতাকা উত্তোলন করা হোক। লোকেরা তা দেখে একে অপরকে নামাযের সময় জানিয়ে দেবে। কিন্তু মহানবী (ﷺ) এ সব পছন্দ করলেন না।
[আবূদাঊদ, সুনান ৪৯৮নং]
পরিশেষে তিনি একটি ঘন্টা নির্মাণের আদেশ দিলেন। এই অবসরে আব্দুল্লাহ বিন যায়দ (রাঃ) স্বপ্নে দেখলেন, এক ব্যক্তি ঘন্টা হাতে যাচ্ছে। আব্দুল্লাহ বলেন, আমি তাকে বললাম, হে আল্লাহর বান্দা! ঘন্টাটি বিক্রয় করবে?’ লোকটি বলল, ‘এটা নিয়ে কি করবে?’ আমি বললাম, ‘ওটা দিয়ে লোকেদেরকে নামাযের জন্য আহ্বান করব। লোকটি বলল, আমি তোমাকে এর চাইতে উত্তম জিনিসের কথা বলে দেব না কি? আমি বললাম অবশ্যই।
তখন ঐ ব্যক্তি আব্দুল্লাহকে আযান ও ইকামত শিখিয়ে দিল। অতঃপর সকাল হলে তিনি রসূল (ﷺ) এর নিকট উপস্থিত হয়ে স্বপ্নের কথা খুলে বললেন। সব কিছু শুনে মহানবী (ﷺ) বললেন, “ইনশাআল্লাহ! এটি সত্য স্বপ্ন। অতএব তুমি বিলালের সাথে দাঁড়াও এবং স্বপ্নে যেমন (আযান) শুনেছ ঠিক তেমনি বিলালকে শুনাও; সে ঐ সব বলে আযান দিক। কারণ, বিলালের আওয়াজ তোমার চেয়ে উচ্চ।”
সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ (রাঃ) সর্বপ্রথম পূর্বরাতে স্বপ্নে দেখা আযানের কালেমা সমূহ সকালে এসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকটে বর্ণনা করেন। পরে বেলালের কণ্ঠে একই আযান ধ্বনি শুনে হযরত ওমর (রাঃ) বাড়ী থেকে বেরিয়ে চাদর ঘেঁষতে ঘেঁষতে ছুটে এসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলেন –
وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ لَقَدْ رَأَيْتُ مِثْلَ مَا أَرَى فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فَلِلَّهِ الْحَمْدُ»
অর্থ:
যিনি আপনাকে ‘সত্য’ সহকারে প্রেরণ করেছেন, তাঁর কসম করে বলছি আমিও অনুরূপ স্বপ্ন দেখেছি’। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ‘ফালিল−ল্লা-হিল হাম্দ’বলে আল্লাহর প্রশংসা করেন।
[আবুদাঊদ হা/৪৯৫; মিশকাত হা/৬৫০]
একটি বর্ণনা মতে ঐ রাতে ১১ জন সাহাবী একই আযানের স্বপ্ন দেখেন’।
[মিরক্বাত শরহ মিশকাত ‘আযান’ অনুচ্ছেদ ২/১৪৯ পৃঃ]
উল্লেখ্য যে, ওমর ফারূক (রাঃ) ২০ দিন পূর্বে উক্ত স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ আগেই বলেছে দেখে লজ্জায় তিনি নিজের কথা প্রকাশ করেননি।
[আবুদাঊদ (আওনুল মা‘বূদ সহ) হা/৪৯৪ ‘আযানের সূচনা’ অনুচ্ছেদ]
আযান ফরয এবং তা দেওয়া হল ফ র্যে কিফায়াহ্। আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, নামাযের সময় উপস্থিত হলে তোমাদের একজন আযান দেবে এবং তোমাদের মধ্যে যে বড় সে ইমামতি করবে।
[বুখারী ৬২৮নং, মুসলিম, নাসাঈ, সুনান, দারেমী, সুনান]
আযান ইসলামের অন্যতম নিদর্শন ও প্রতীক। কোন গ্রাম বা শহরবাসী তা ত্যাগ করলে ইমাম (রাষ্ট্রপ্রধান) তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবেন। যেমন মহানবী (ﷺ) অভিযানে গেলে কোন জনপদ থেকে আযানের ধ্বনি শুনলে তাদের উপর আক্রমণ করতেন না।
[বুখারী ৬১০ নং, মুসলিম, সহীহ]
সফরে একা থাকলে অথবা মসজিদ খুবই দূর হলে এবং আযান শুনতে না পাওয়া গেলে একাই আযান ও ইকামত দিয়ে নামায পড়া সুন্নত।
[ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্, সঊদী উলামা-কমিটি ১/২৫৫]
আযান দেওয়ায় (মুআযযেনের জন্য) রয়েছে বড় সওয়াব ও ফযীলত। মহান আল্লাহ বলেন, “সে ব্যক্তি অপেক্ষা আর কার কথা উৎকৃষ্ট, যে ব্যক্তি আল্লাহর দিকে মানুষকে আহ্বান করে, সৎকাজ করে এবং বলে আমি একজন ‘মুসলিম’ (আত্মসমর্পণকারী)?
[কুরআন মাজীদ ৪১/৩৩]
প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন, “লোকে যদি আযান ও প্রথম কাতারের মাহাত্ম জানত, অতঃপর তা লাভের জন্য লটারি করা ছাড়া আর অন্য কোন উপায় না পেত, তাহলে তারা লটারিই করত।”
[বুখারী ৬১৫, মুসলিম, সহীহ ৪৩৭নং]
আল্লাহ প্রথম কাতারের উপর রহ্মত বর্ষণ করেন এবং ফিরিশ্তাগণ তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকেন। মুআযযিনকে তার আযানের আওয়াযের উচ্চতা অনুযায়ী ক্ষমা করা হয়। তার আযান শ্রবণকারী প্রত্যেক সরস বা নীরস বস্তু তার কথার সত্যায়ন করে থাকে। তার সাথে যারা নামায পড়ে তাদের সকলের নেকীর সমপরিমাণ তার নেকী লাভ হয়।
[আহ্মদ, নাসাঈ, সহীহ তারগীব ২২৮নং]
কিয়ামতের দিন মুআযযিনগণের গর্দান অন্যান্য লোকেদের চেয়ে লম্বা হবে।”
[মুসলিম, সহীহ৩৮৭নং]
“যে ব্যক্তি বারো বৎসর আযান দেবে তার জন্য জান্নাত ওয়াজেব হয়ে যাবে। আর প্রত্যেক দিন আযানের দরুন তার আমল নামায় ষাটটি নেকী লিপিবদ্ধ করা হবে এবং তার ইকামতের দরুন লিপিবদ্ধ হবে ত্রিশটি নেকী।
[ইবনে মাজাহ্, দারাকুত্বনী,হাকেম, সহীহ তারগীব ২৪০নং]
যে কোন মানুষ, জ্বিন বা অন্য কিছু মুআযযিনের আযানের শব্দ শুনতে পাবে, সেই মুআযযিনের জন্য কিয়ামতের দিন সাক্ষ্য প্রদান করবে।
[বুখারী ৬০৯ নং]
ভয়, শত্রুতা প্রভৃতির কারণে মসজিদে যেতে বাধা থাকলে, মসজিদ বহু দূরে হলে (এবং আযান শুনতে না পেলে), সফরে কোন নির্জন প্রান্তরে থাকলে, যে জায়গায় থাকবে সেই জায়গাতেই নামাযের সময় হলে আযান-ইকামত দিয়ে নামায আদায় করতে হবে। একা হলে আযান ওয়াজেব না হলেও সুন্নত অবশ্যই বটে।
মহানবী (ﷺ) বলেন, “যখন সফরে থাকবে, তখন তোমরা আযান দিও এবং ইকামত দিও। আর তোমাদের মধ্যে যে বড় সে ইমামতি করো।
[বুখারী, মিশকাত ৬৮২নং]
তাছাড়া আল্লাহর নবী (ﷺ) এবং সাহাবাগণ সফরে থাকলে ফাঁকা মাঠে আযান দিয়ে নামায পড়েছেন।
[মুসলিম, সহীহ ৬৮১নং, প্রমুখ]
মহানবী (ﷺ) বলেন, “তোমার প্রতিপালক বিস্মিত হন পর্বত চূড়ায় সেই ছাগলের রাখালকে দেখে যে নামাযের জন্য আযান দিয়ে (সেখানেই) নামায আদায় করে; আল্লাহ আযযা অজাল্ল্ বলেন, “তোমরা আমার এই বান্দাকে লক্ষ্য কর, (এমন জায়গাতেও) আযান দিয়ে নামায কায়েম করছে! সে আমাকে ভয় করে। আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম এবং জান্নাতে প্রবেশ করালাম।
[আবূদাঊদ, সুনান, নাসাঈ, সুনান, সহিহ তারগিব ২৩৯ নং]
তিনি বলেন, “কোন ব্যক্তি যখন কোন বৃক্ষ-পানিহীন প্রান্তরে থাকে, অতঃপর সেখানে নামাযের সময় উপস্থিত হয়, তখন সে যেন ওযু করে। পানি না পেলে যেন তায়াম্মুম করে। অতঃপর সে যদি শুধু ইকামত দিয়ে নামায পড়ে, তাহলে তার সাথে তার সঙ্গী দুই ফিরিশ্তা নামায পড়েন। কিন্তু সে যদি আযান দিয়ে ও ইকামত দিয়ে নামায পড়ে, তাহলে তার পশ্চাতে আল্লাহর এত ফিরিশ্তা নামায পড়েন, যাদের দুই প্রান্ত নজরে আসে না!”
[আব্দুর রাযযাক, মুসান্নাফ, সহিহ তারগিব ২৪১নং]
আর একদা তিনি আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহ্মানকে মরুভূমিতে ছাগপালে থাকাকালে নামাযের জন্য উচ্চশব্দে আযান দিতে আদেশ করেছিলেন।
[বুখারী প্রমুখ, মিশকাত ৬৫৬নং]
মসজিদে কেউ আযান না দিলে এবং শহরে বা গ্রামে থাকতে সকলের নামায কাযা হলে অথবা সফরে পুরো জামাআতের বা একাকীর নামায কাযা হলে অসময়েও আযান-ইকামত দিয়ে নামায পড়া কর্তব্য।
একদা মহানবী (ﷺ) সাহাবাসহ্ সফরে থাকাকালীন তাঁদের ফজরের নামায কাযা হয়ে যায়। সূর্য ওঠার পর তেজ হয়ে এলে ঐ স্থান ত্যাগ করে অন্য স্থানে গিয়ে বিলাল (রাঃ) আযান দেন। অতঃপর যথা নিয়মে ফজরের নামায আদায় করেন।
[মুসলিম, সহীহ ৬৮১নং, প্রমুখ]
যেমন খন্দকের যুদ্ধের সময় একদা সকলের চার ওয়াক্তের নামায ক্বাযা হলে, এশার পর আযান দিয়ে যোহ্র, আসর, মাগরিব ও এশার নামায আদায় করেছিলেন।
[আহমাদ, মুসনাদ প্রমুখ, ইর: ১/২৫৭]
নামাযের সময় বাকী থাকলে এবং আযানের যথা সময় পার হয়ে গেলে খুব দেরীতে হলেও আযান দিয়েই নামায পড়তে হবে। অবশ্য গ্রামে বা শহরে অন্যান্য মসজিদে আযান হয়ে থাকলে যে মসজিদে আযান দিতে খুব দেরী হয়ে গেছে সে মসজিদে আযান না দিলেও চলবে। তবে দেরী সামান্য হলে আযান দেওয়াই উত্তম। কিন্তু গ্রামে এ ছাড়া অন্য মসজিদ না থাকলে খুব দেরী হয়ে গেলেও আযান দেওয়া জরুরী।
[ইবনে বায, রিসালাতুন ইলা মুআযযিন ৬৭পৃ:, তুহ্ফাতুল ইখওয়ান, ইবনে বায ৭৭পৃ:]
হযরত আয়েশা (রাঃ) এর আযান ও ইকামত দেওয়ার ব্যাপারে বর্ণিত হাদীস সহীহ নয়। অবশ্য বাইহাকীতে আছে, আম্র বিন আবী সালামাহ্ বলেন, আমি সওবানকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, ‘মেয়েরা কি ইকামত দিতে পারে?’ উত্তরে তিনি তাঁর পিতা হতে বর্ণনার কথা উল্লেখ করে বললেন, ‘মকহুল বলেছেন, যদি মহিলারা আযান-ইকামত দেয় তবে তা আফযল। আর যদি শুধু ইকামত দেয়, তবে তাও যথেষ্ট।’ সওবান বলেন, যুহ্রী উরওয়া হতে এবং তিনি হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি (আয়েশা) বলেছেন, ‘আমরা বিনা ইকামতেই নামায পড়তাম।
ইমাম বাইহাকী বলেন, প্রথমোক্ত আসারের সাথে -যদি এই আসার সহীহ হয় তাহলে উভয়ের মধ্যে- পরস্পর বিরোধিতা নেই। কারণ, হতে পারে যে, জায়েয বর্ণনার উদ্দেশ্যে তিনি উভয় প্রকারের আমল (কখনো এরুপ, কখনো ঐরুপ) করেছেন। আর আল্লাহই অধিক জানেন।’
আল্লামা আলবানী বলেন, এ ব্যাপারে সঠিক অভিমত হল নবাব সিদ্দীক হাসান খানের; তিনি বলেছেন, আর প্রকাশ যে, মহিলারা আমলে পুরুষদের মতই। কারণ, মহিলারা পুরুষদের সহোদরা। পুরুষদেরকে যা করতে আদেশ হয়, সে আদেশ মহিলাদের উপরেও বর্তায়। পক্ষান্তরে তাদের পক্ষে আযান-ইকামত ওয়াজেব না হওয়ার ব্যাপারে কোন গ্রহণযোগ্য দলীল নেই। আযান না থাকার ব্যাপারে বর্ণিত হাদীসের সনদের কিছু বর্ণনাকারী পরিত্যক্ত; যাদের হাদীস দলীলযোগ্য নয়। সুতরাং মহিলাদেরকে সাধারণ এ নির্দেশ থেকে খারিজ করার মত কোন নির্ভরযোগ্য দলীল থাকলে উত্তম; নচেৎ ওরাও পুরুষদের মতই।
[আর-রওযাতুন নাদিয়্যাহ্ ১/৭৯, সিলসিলাহ যায়ীফাহ, আলবানী ২/২৭১]
আবূ রাফে (রাঃ) বলেন, আমি আল্লাহর রসূল (ﷺ) কে দেখেছি, ফাতেমা (রাঃ) হাসান বিন আলীকে প্রসব করলে তিনি তাঁর (হাসানের) কানে নামাযের আযান দিলেন।
[আবূদাঊদ, সুনান ৫১০৫, তিরমিযী, সুনান ১৫৬৬, মিশকাত ৪১৫৭ নং]
সুতরাং ছেলে-মেয়ে সকলের কানে ঐ সময় নামাযের জন্য আযান দেওয়ার মতই আযান দেওয়া সুন্নত। (মতান্তরে হাদীসটি যয়ীফ, অতএব এ সময় আযান সুন্নত নয়।) পক্ষান্তরে ডান কানে আযান এবং বাম কানে ইকামত দিলে ‘উম্মুস সিবয়্যান (ভূত,পেত) বা এক প্রকার রোগ কোন ক্ষতি করতে না পারারহাদীসটি জাল।
[সিলসিলাহ যায়ীফাহ, আলবানী ৩২১নং, জামে ৫৮৮১, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ১১৭৪নং]
শয়তান জিন মানুষকে ভয় দেখায়। ভয় পেয়ে আযান দিলে জিন বা শয়তান বা ভূত সব পালিয়ে যায়।
সুহাইল বলেন, একদা আমার আব্বা আমাকে বনী হারেসায় পাঠান। আমার সঙ্গে ছিল এক সঙ্গী। এক বাগান হতে কে যেন নাম ধরে আমার সঙ্গীকে ডাক দিল। আমার সঙ্গী বাগানে খুঁজে দেখল; কিন্তু কাউকে দেখতে পেল না। ফিরে এলে আব্বার নিকট সে কথা উল্লেখ করলাম। আব্বা বললেন, যদি জানতাম যে, তুমি এই দেখতে পাবে, তাহলে তোমাকে পাঠাতাম না। তবে শোন! যখন (এই ধরনের) কোন শব্দ শুনবে, তখন নামাযের মত আযান দিও। কারণ, আমি আবূ হুরাইরা (রাঃ) কে আল্লাহর রসূল (ﷺ) হতে হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, “নামাযের আযান দেওয়া হলে শয়তান পাদতে পাদতে পালিয়ে যায়!”
[মুসলিম, সহীহ ৩৮৯নং]
আযান হয়ে গেলে বিনা ওজরে নামায না পড়ে মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়া বৈধ নয়।
মহানবী (ﷺ) বলেন, “মসজিদে অবস্থানকালে আযান হলেই তোমাদের কেউ যেন নামায না পড়া পর্যন্ত মসজিদ থেকে বের না হয়।
[আহমাদ, মুসনাদ, মিশকাত ১০৭৪ নং]
এক ব্যক্তি আযানের পর মসজিদ হতে বের হয়ে গেলে আবূ হুরাইরা তার প্রতি ইঙ্গিত করে বললেন, ‘এ লোকটা তো আবুল কাসেম (ﷺ) এর নাফরমানী করল।’
[মুসলিম, আবূদাঊদ, সুনান ৫৩৬ নং, তিরমিযী, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান, দারেমী, সুনান, বায়হাকী]
আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তির মসজিদে থাকা অবস্থায় আযান হয়, অতঃপর বিনা কোন প্রয়োজনে বের হয়ে যায় এবং ফিরে আসার ইচ্ছা না রাখে সে ব্যক্তি মুনাফিক।
[ইবনে মাজাহ্, সুনান, সহিহ তারগিব ১৫৭নং]
আযান ও ইকামতের মাঝে কতটা বিরতি থাকবে সে ব্যাপারে হাদীস শরীফে কোন স্পষ্ট ইঙ্গিত ও উল্লেখ পাওয়া যায় না। তবে আযান হয় জামাআত ডাকার জন্য। আর এটাই স্বাভাবিক যে, আযানের পর অনেকে ওযু করবে। সুতরাং ওযু করার মত সময় দিতে হবে। তাছাড়া ফরয নামাযের পূর্বে যে সুন্নাতে রাতেবাহ্ বা মুআক্কাদাহ আছে তাও পড়ার জন্য সময় দিতে হবে। মহানবী (ﷺ) বলেন, প্রত্যেক আযান ও ইকামতের মাঝে নামায আছে। এইরুপ তিনবার বলার পর শেষে বললেন, “যে চাইবে তার জন্য।
[বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৬৬২নং]
মাগরেবের আযানের পরেও সত্বর জামাআত শুরু করা উচিৎ নয়। যদিও সময় সংকীর্ণ তবুও জামাআত হওয়ার পূর্বে নামায আছে। সুতরাং যার সেই নামায পড়ার ইচ্ছা তাকে সেই নামায পড়তে সময় দেওয়া উচিৎ।
আনাস (রাঃ) বলেন, আমরা মদ্বীনায় ছিলাম। মুআযযিন যখন মাগরেবের আযান দিত, তখন লোকেরা প্রতিযোগিতার সাথে মসজিদের খাম্বাগুলোর পশ্চাতে ২ রাকআত নামায পড়তে লেগে যেত। এমনকি যদি কোন অজানা লোক এসে মসজিদে প্রবেশ করত, তাহলে এত লোকের নামায পড়া দেখে সে মনে করত, হয়তো মাগরেবের জামাআত হয়ে গেছে। (এবং ওরা পরের সুন্নত পড়ছে।)
[মুসলিম, মিশকাত ১১৮০ নং]
আযান হওয়ার পর এবং ইকামত হওয়ার পূর্বের সময়ে দুআ কবুল হয়ে থাকে। তাই এই সময় দুনিয়া ও আখেরাতের মঙ্গল আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা উচিৎ। মহানবী (ﷺ) বলেন, “আযান ও ইকামতের মাঝে দুআ রদ্দ্ করা হয় না। (অর্থাৎ মঞ্জুর করা হয়।)
[আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান ৫২১নং, তিরমিযী, সুনান]
এক বর্ণনায় আছে, “সুতরাং তোমরা এ সময়ে দুআ কর।
[জামে ৩৪০৫ নং]
তিনি আরো বলেন, “দু’টি সময়ে দুআ (প্রার্থনা)কারীর দুআ রদ্দ্ হয় না; যখন নামাযের ইকামত হয় এবং জিহাদের কাতারে।
[হাকেম, মুস্তাদরাক, মালেক, মুঅত্তা, সহিহ তারগিব ২৬০ নং]
যেমন দুই মুআযযিনের আযান দুই রকম ছিল, তেমনি উভয়ের ইকামতও ছিল দুই রকম; জোড় এবং বিজোড়। বিলাল (রাঃ) কে আযান ডবল ডবল শব্দে এবং ইকামত ‘ক্বাদ ক্বা-মাতিস সলা-হ্ ছাড়া (অন্যান্য) বাক্যাবলীকে একক একক শব্দে বলতে আদেশ করা হয়েছিল।
[বুখারী, মুসলিম, সহীহ প্রমুখ, মিশকাত ৬৪১ নং]
সুতরাং বিলালের উক্ত হাদীসের ভিত্তিতে ইকামত হবে ৯টি বাক্যে; ‘ক্বাদ ক্বামাতিস সালাহ্ ২বার এবং বাকী হবে ১ বার করে।
[আলমুমতে, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ২/৫৯]
কিন্তু আব্দুল্লাহ বিন যায়দকে স্বপ্নে শিখানো হয়েছিল নিম্নরুপ ইকামত, আর এটাই প্রসিদ্ধ:-
اَللهُ أَكْبَر اَللهُ أَكْبَر، أَشْهَدُ أَنْ لاَّ إِلهَ إِلاَّ الله، أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً رَّسُوْلُ الله، حَيَّ عَلَى الصَّلاَة،
حَيَّ عَلَى الْفَلاَح، قَدْ قَامَتِ الصَّلاَة، قَدْ قَامَتِ الصَّلاَة، اَللهُ أَكْبَر اَللهُ أَكْبَر، لاَ إِلهَ إِلاَّ الله،
আল্লাহু আকবার ২ বার। আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ ১ বার। আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্ ১ বার। হাইয়্যা আলাস স্বলাহ্ ১ বার। হাইয়্যা আলাল ফালাহ্ ১ বার। ক্বাদ ক্বামাতিস স্বলাহ্ (অর্থাৎ নামায প্রতিষ্ঠা বা শুরু হল) ২ বার। আল্লাহু আকবার ২বার এবং লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ ১ বার।
[আবূদাঊদ, সুনান ৪৯৯, দারেমী, সুনান ১১৭১, ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ ৩৭০, ইবনে হিব্বান, সহীহ ১৬৭১নং, বায়হাকী ১/৩৯১]
উল্লেখ্য যে, যারা মুআযযিন আবূ মাহ্যূরার মত তারজী’ আযান দেয়, তাদের উচিৎ তাঁর মতই ইকামত দেওয়া। তিনি বলেন, ‘মহানবী (ﷺ) তাঁকে আযানের ১৯টি এবং ইকামতের ১৭টি বাক্য শিখিয়েছেন।’
[আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান, দারেমী, সুনান, মিশকাত ৬৪৪নং]
সুতরাং তাঁর ইকামত ছিল বিলাল (রাঃ) এর আযানের মতই। তবে তাতে ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ্ এর পর অতিরিক্ত ছিল ‘ক্বাদ ক্বামাতিস স্বলাহ্ ২ বার।
[আবূদাঊদ, সুনান ৫০২নং]
ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ্ (রহঃ) বলেন, আহলে হাদীস ও তাঁদের সমর্থকদের নিকট সঠিক সিদ্ধান্ত এই যে, মহানবী (ﷺ) হতে যা কিছু শুদ্ধভাবে প্রমাণিত আছে তার প্রত্যেকটার উপর আমল করতে হবে। আর তাঁরা ঐ আমলের কোনটিকেও অপছন্দ করেন না। কেননা, আযান ও ইকামতের পদ্ধতি একাধিক হওয়ার ব্যাপারটা ক্বিরাআত, তাশাহহুদ প্রভৃতির পদ্ধতি একাধিক হওয়ার মতই।’
[মাজমূউ ফাতাওয়া ২২/৩৩৫, ২২/৬৬]
সুতরাং উভয় প্রকারই আযান ও ইকামত আমলযোগ্য। আর বৈধ নয় এ নিয়ে কাদা ছুঁড়াছুঁড়ি।
প্রকাশ থাকে যে, ভুলে ইকামত না দিয়ে (একাকী অথবা জামাআতী) নামায পড়ে ফেললে নামাযের কোন ক্ষতি হয় না। ইকামত নামায হতে পৃথক জিনিস। অতএব ঐ ভুলের জন্য সহু সিজদা বিধেয় নয়।
[তুহ্ফাতুল ইখওয়ান, ইবনে বায ৭৮পৃ:]
ইকামতকে দ্বিতীয় আযান বলা হয়, তাই ইকামতও এক প্রকার আযান।
[ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্, সঊদী উলামা-কমিটি ১/২৪৯]
সুতরাং এর জওয়াবও আযানের মতই। অবশ্য ‘হাইয়্যা আলাস সলা-হ্ ও ফালাহ্’ এর জওয়াবে ‘লাহাউলা অলা ক্বুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ্’ এবং শেষে (সময় পেলে) দরুদ ও অসীলার দুআ পাঠ করা বিধেয়। যেহেতু হাদীস শরীফে মুআযযিনের জওয়াব (তার মতই) বলতে এবং তার শেষে দরুদ ও অসীলার দুআ পড়তে আমাদেরকে আদেশ করা হয়েছে।
[মুসলিম, মিশকাত ৬৫৭নং]
উক্ত হাদীসের ভিত্তিতেই ‘ক্বাদ ক্বামাতিস স্বলাহ্ এর জওয়াবে ‘ক্বাদ ক্বামাতিস স্বলাহ্’ই বলতে হবে। নচেৎ এর জওয়াবে ‘আক্বামাহুল্লাহু অআদামাহা’ বলার হাদীস শুদ্ধ নয়। আর যয়ীফ হাদীসকে ভিত্তি করে শরীয়তের কোন আমল ও ইবাদত বৈধ নয়।
[মিশকাত, আলবানীর টীকা ১/১২১]
মতান্তরে যেহেতু ইকামতের জবাবে কোন স্পষ্ট সহীহ হাদীস নেই, তাই ইকামতের জবাব দেওয়া সুন্নত নয়।
আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, “নামাযের ইকামত হয়ে গেলে তোমরা আমাকে না দেখা পর্যন্ত (নামাযের জন্য) দাঁড়াও না।”
[বুখারী ৬৩৭নং]
যেমন ইকামত হয়ে গেলে তাড়াহুড়ো করে দাঁড়ানোও উচিৎ নয়। কারণ উক্তহাদীসের এক বর্ণনায় তিনি বলেন, “তোমাদের মাঝে যেন ধীরতা ও শান্তভাব থাকে। যেহেতু রাজাধিরাজের দরবারে কোন প্রকারের হৈ-হুল্লোড় ও তাড়াহুড়ো চলে না। বলা বাহুল্য এই দরবারে থাকবে শত আদব, শত বিনয়, ধীরতা ও স্থিরতা।
হুমাইদ বলেন, আমি সাবেত আল-বুনানীকে ইকামতের পর কথাবার্তা বলার বৈধতার ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি আনাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস শুনালেন; ‘একদা নামাযের ইকামত হয়ে গেলে এক ব্যক্তি নবী (ﷺ) কে নামাযে প্রবেশ করতে আটকে রেখেছিল।
[বুখারী ৬৪৩নং]
মসজিদের এক প্রান্তে গোপনে কথা বলতে লাগলে উপস্থিত মুসল্লীগণ ঘুমে ঢলে পড়েছিল। একদা নামাযের ইকামত হয়ে গেলে মুসল্লীগণ কাতার সোজা করে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। আল্লাহর রসূল (ﷺ) হুজরা হতে বের হয়ে যখন ইমামতির জায়গায় এলেন, তখন তাঁর মনে পড়ল যে, তিনি নাপাকীর গোসল করেননি। তিনি সকলের উদ্দেশ্যে বললেন, “তোমরা স্বস্থানে দন্ডায়মান থাক।” অতঃপর তিনি হুজরায় ফিরে গিয়ে গোসল করলেন। তিনি যখন বের হয়ে এলেন, তখন তাঁর মাথা হতে পানি টপকাচ্ছিল। এরপর তিনি ইমামতি করে নামায পড়লেন।
উক্ত হাদীস থেকে এ কথা বুঝা যায় যে, প্রয়োজনে ইকামত ও নামাযের মাঝে বেশ কিছু সময় বিরতি হলে কোন ক্ষতি হয় না। পরন্তু ইকামত ফিরিয়ে বলতে হয় না।
ইকামত হওয়ার পর কোন জরুরী কথা, নামায ও কাতার বিষয়ক কথা বলা বৈধ। তবে নামাযের প্রস্তুতি নেওয়ার পর কোন পার্থিব কথা বলা উচিৎ নয়।
[ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্, সঊদী উলামা-কমিটি ১/২৫১]
ইকামত শুরু হলে এবং ইমাম উপস্থিত থাকলে প্রত্যেকে নিজের সুবিধামত উঠে নামাযের জন্য দন্ডায়মান হবে। ইকামতের শুরুতে, মাঝে বা শেষে, যে কোন সময়ে দাঁড়ালেই চলবে। তবে এ কথার খেয়াল অবশ্যই রাখা উচিৎ, যাতে ইমামের সাথে তকবীরে তাহ্রীমা ছুটে না যায়।
[আলমুমতে শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ৩/১০]
মহানবী (ﷺ) বলেন, বিলাল রাতে (ফজরের পূর্বে) আযান দেয়। সুতরাং ইবনে উম্মে মাকতূম (ফজরের) আযান না দেওয়া পর্যন্ত তোমরা খাও ও পান কর।
[বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৬৮০নং]
উক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ফজরের পূর্বে তাহাজ্জুদ ও সেহ্রীর আযান মহানবী (ﷺ) এর যুগে প্রচলিত ছিল এবং আজও পর্যন্ত সে সুন্নত মক্কা-মদ্বীনা সহ্ সঊদী আরবের প্রায় সকল স্থানে সেহ্রীর ঐ আযান (বিশেষ করে রমযানে) শুনতে পাওয়া যায়। পক্ষান্তরে আমাদের দেশে প্রায় সকল স্থানে ঐ সময়ে আযানের পরিবর্তে শোনা যায় কুরআন ও গজল পাঠ! সুতরাং এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, সুন্নতের জায়গা দখল করেছে মনগড়া বিদআত।
অনেকে বলে থাকেন, উভয় সময়ে আযান হলে লোকেরা গোলমালে পড়বে; সেটা সেহ্রীর না ফজরের আযান -এ নিয়ে সন্দেহে পড়বে। কিন্তু পৃথক পৃথক উভয় সময়ের জন্য নির্দিষ্ট দু’জন মুআযযিন আযান দিলে গোলমালের ভয় থাকে না। তা ছাড়া সেহ্রীর আযানে
الصَّلاَةُ خَيْرٌ مِّنَ النَّوْم শব্দ থাকবে না। অতএব সকল প্রকার ওজর-আপত্তি ত্যাগ করে বিদআত বর্জন করতে এবং সুন্নাহর উপর আমল করতে আল্লাহ আমাদের তওফীক দিন। আমীন।