লাইলাতুল কদরের নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত

লাইলাতুল কদরের নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; আজকে আলোচনা করব লাইলাতুল কদরের ফজিলত লাভের আশায় রমজানের শেষ দশকে বিশেষ করে বেজোড় রাতে কিয়ামুল লাইল বা রাতের সালাত বা নামাজ আদায় করা সম্পর্কে।
লাইলাতুল কদরের নামাজ পড়ার নিয়ম প্রথম পদ্ধতি: ১৩ রাকাত দ্বিতীয় পদ্ধতি : ১৩ রাকাত তৃতীয় পদ্ধতি : ১১ রাকাত চতুর্থ পদ্ধতি : ১১ রাকাত পঞ্চম পদ্ধতি : ১১ রাকাত ষষ্ঠ পদ্ধতি : ৯ রাকাত
প্রথম পদ্ধতি: ১৩ রাকাত হালকাভাবে দু’রাকআত পড়ে এর সূচনা করবে। সর্বাগ্রগণ্য মত অনুযায়ী এ দুই রাকআত হল এশার ফরজ সালাত পরবর্তী দুই রাকাত সুন্নাত অথবা ঐ নির্দিষ্ট দু’রাকাত ছালাত, যার মাধ্যমে রাসূল (ছাঃ) রাতের সালাত শুরু করতেন। যেমনটি গত হয়েছে। অতঃপর অত্যন্ত দীর্ঘ দু’রাকআত আদায় করবে। অতঃপর এর চেয়ে কম দীর্ঘ দু’রাকআত পড়বে। অতঃপর পূর্বের চেয়ে কম দীর্ঘ দু’রাকআত পড়বে। অতঃপর তদপেক্ষা কম দীর্ঘ দু’রাকআত পড়বে। অতঃপর এর চেয়ে কম দীর্ঘ দুই রাকাত পড়বে। অতঃপর এক রাকাত বিতর পড়বে।
দ্বিতীয় পদ্ধতি : ১৩ রাকাত তন্মধ্যে দুই দুই করে আট রাকাত পড়বো এবং প্রত্যেক দুই রাকাত পর সালাম ফিরাবে। অতঃপর পাঁচ রাকাত বিতর পড়বে। শুধুমাত্র পঞ্চম রাকাতে বসবে এবং সালাম ফিরাবে।
তৃতীয় পদ্ধতি : ১১ রাকাত প্রত্যেক দুই রাকাতের মাঝখানে সালাম ফিরাবে এবং এক রাকাত বিতর পড়বে। চতুর্থ পদ্ধতি : ১১ রাকাত এর মধ্যে প্রথম চার রাকাত এক সালামে অতঃপর পরের চার রাকাত এক সালামে পড়বে। অতঃপর তিন রাকাত বিতর পড়বে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এই চার ও তিন রাকাতের দুই রাকাতের মাঝখানে কি বসতেন? এ ব্যাপারে আমরা কোন সন্তোষজনক জবাব পাই না। তবে তিন রাকাত বিতর সালাতে দুই রাকাত পর বসা শরীআত সম্মত নয়।
পঞ্চম পদ্ধতি : ১১ রাকাত এর মধ্যে একটানা আট রাকাত আদায় করে ৮ম রাকাতে বসবে এবং তাশাহুদ ও নবী সঃ এর দরূদ পড়ে সালাম না ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে যাবে। অতঃপর এক রাকআত বিতর পড়ে সালাম ফিরাবে। এই হল নয় রাকাত। অতঃপর বসে দুই রাকাত আদায় করবে।
ষষ্ঠ পদ্ধতি : ৯ রাকাত তার মধ্যে ছয় রাকাত একটানা পড়ে ষষ্ঠ রাকাতে বসবে অতঃপর তাশাহুদ ও নবী (ছাঃ)-এর উপর দরূদ পড়ে পূর্বের মতাে সালাম না ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে যাবে। অতঃপর এক রাকাত বিতর পড়ে সালাম ফিরাবে। এই হল সাত রাকআত। অতঃপর বসে দুই রাকাত পড়বে।
এই পদ্ধতি গুলো রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে সুস্পষ্ট নছ বা দলিলের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। উক্ত পদ্ধতিগুলোর উপর আরো অন্যান্য প্রকার এভাবে বৃদ্ধি করা যেতে পারে যে, প্রত্যেক প্রকার থেকে ইচ্ছামতো রাকআত সংখ্যা কমিয়ে এক রাকাত বিতরে সীমাবদ্ধ করবে। রাসূল (ছাঃ)-এর নিম্নোক্ত বাণীর প্রতি আমল করণার্থে। তিনি বলেন, যে চায় সে পাঁচ রাকাত বিতর পড়ুক, যে চায় সে তিন রাকাত বিতর পড়ুক এবং যে চায় সে এক রাকাত বিতর পড়ুক।
তাহাবী, হা/১৬০৩; হাকেম, হা/১১২৮; দারাকুতনী, হা/১৬৬০; বায়হাকী, হা/৪৭৭৬
এই পাঁচ ও তিন রাকাত বিতর চাইলে এক বৈঠকে ও এক সালামে আদায় করবে। যেমনটি দ্বিতীয় পদ্ধতিতে বর্ণিত হয়েছে। আর চাইলে প্রত্যেক দুই রাকাত পর সালাম ফিরাবে। যেমনটি তৃতীয় ও অন্যান্য পদ্ধতিতে বর্ণিত হয়েছে। আর এটাই সর্বোত্তম।
ইবনু খুযায়মা তার সহীহ গ্রন্থে (২/১৯৪, হা/১১৬৮, ‘ছালাত অধ্যায়) উল্লিখিত পদ্ধতিগুলোর কোন একটিতে আয়েশা (রাঃ) ও অন্যদের বর্ণিত হাদিস উদ্ধৃত করার পর বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হতে যত রাকাত রাতের সালাত আদায় করা ও যেভাবে আদায় করা বর্ণিত হয়েছে, তার মধ্যে যে সংখ্যাটা পছন্দনীয় তা মানুষের জন্য পড়া জায়েয। উহার যেকোন সংখ্যা আদায় করা কারাে জন্য নিষেধ নেই। (আলবানী বলেন) আমার বক্তব্য হল, রাসূল (ছাঃ) থেকে যত রাকাত আদায় করা সহীহ প্রমাণিত হয়েছে তাকে আবশ্যকীয়ভাবে আঁকড়ে ধরা ও তার চেয়ে রাকআত সংখ্যা বেশি না করার যে সিদ্ধান্তকে আমরা পছন্দ করেছি, তা সম্পূর্ণরূপে ইবনে খুযায়মার এ মতের অনুকূলে। তাওফীক দেয়ার জন্য মহান আল্লাহর যাবতীয় প্রশংসা। আমি তার আরো অধিক অনুগ্রহ কামনা করছি।
পক্ষান্তরে পাঁচ ও তিন রাকাত বিতর সালাতের প্রত্যেক দুই রাকাত অন্তর বসা ও সালাম না ফিরানাের বিষয়টি রাসূল (ছাঃ) থেকে আমরা প্রমাণিত পাইনি। তবে মূল বিষয়টি জায়েয। কিন্তু যখন নবী (ছাঃ) মাগরিবের ন্যায় তিন রাকাত বিতর পড়তে নিষেধ করেছেন এবং এর কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, তোমরা বিতর সালাতকে মাগরিবের সাথে সাদৃশ্য প্রদান করাে না তাহাবী, হা/১৭৩৮, ‘বিতর’ অনুচ্ছেদ; দারাকুতনী, হা/১৬৬৯; সহীহ ইবনে হিব্বান, হা/২৪২৯ ‘বিতর’ অনুচ্ছেদ।
যে ব্যক্তি তিন রাকাত বিতর পড়বে তাকে অবশ্যই এই সাদৃশ্য থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আর এটা দুভাবে হতে পারে :
১. জোড় ও বিজোড়ের মাঝখানে সালাম ফিরানো। এটাই অধিক শক্তিশালী ও সর্বোত্তম।
২. জোড় ও বিজোড়ের মাঝখানে না বসা। আল্লাহই সর্বাধিক অবগত।
শবে কদরের নামাজের কেরাত রাসুল সঃ এর রাতের সালাতের কেরাত কেমন ছিল সে সম্পর্কে কয়েকটি হাদিস পেশ করতে চায়।
আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান রাঃ বলেন,
তিনি একদা আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেন যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর রমজানের রাতের সালাত কেমন ছিল। উত্তরে তিনি বলেন, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রামাযান মাসে এবং রামাযানের বাইরে ১১ রাকাতের বেশি সালাত আদায় করতেন না। তিনি প্রথমে (২+২) চার রাকাত পড়তেন। তুমি (আবু সালামা) তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করাে না। অতঃপর তিনি (২+২) চার রাকাত পড়তেন। তুমি তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করাে না। অতঃপর তিনি তিন রাকাত (বিতর) পড়তেন।
সহীহ মুসলিম ২০১৩
নুআয়ম ইবনে যিয়াদ আবূ তালহা থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নুমান ইবনে বশীর (রাঃ)-কে হিম্‌স নামক স্থানের মিম্বরে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছি, আমরা একবার রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে রমযান মাসের তেইশতম রাত্রের প্রথম এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত তারাবীহ্‌র সালাত আদায় করলাম। অতঃপর পঁচিশতম রাত্রে তাঁর সাথে অর্ধ রাত্রি পর্যন্ত তারাবীহ্‌র সালাত আদায় করলাম। আবার তাঁর সাথে সাতাইশতম রাত্রেও তারাবীহ্‌র সালাত আদায় করতে লাগলাম। এমন কি আমরা আশংকা করলাম যে, “ফালাহ” পাব না। সাহাবীগণ সাহরীকে ফালাহ বলতেন।
সুনানে আন নাসায়ী ১৬০৬
হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি একরাত্রে রাসূল্লুলাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সালাত আদায় করলাম। তিনি সূরা বাকারা শুরু করলেন, আমি মনে মনে বললাম যে, হয়তো তিনি একশত আয়াত পরিমাণ তিলাওয়াত করে রুকূতে যাবেন। কিন্তু তিনি তিলাওয়াত চালিয়েই যেতে থাকলেন, আমি মনে মনে বললাম, হয়তো তিনি দু’শত আয়াত পরিমাণ তিলাওয়াত করে রুকূতে যাবেন, কিন্তু তিনি তিলাওয়াত চালিয়েই যেতে থাকলেন। আমি মনে মনে বললাম, হয়তো তিনি পূর্ণ সূরা এক রাকআতেই তিলাওয়াত করে ফেলবেন। কিন্তু তিনি তিলাওয়াত চালিয়েই যেতে থাকলেন এবং সূরা “নিসা” শুরু করে তাও তিলাওয়াত করে ফেললেন। তারপর সূরা “আলে-ইমরান” ও শুরু করে তাও তিলাওয়াত করে ফেললেন।
তিনি ধীরে ধীরে তিলাওয়াত করতেন। যদি তিনি এমন কোন আয়াত তিলাওয়াত করে ফেলতেন যাতে কোন তাসবীহ্‌ রয়েছে তবে তাসবীহ পাঠ করতেন, যদি কোন যাঞ্ছা করার আয়াত তিলাওয়াত করে ফেলতেন তবে যাঞ্ছা করতেন। যদি কোন বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনার আয়াত তিলাওয়াত করে ফেলতেন, তবে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। তারপর রুকূ করতেন এবং বলতেন, “সুবাহানা রাব্বিয়াল আজীম” তাঁর রুকূ প্রায় তাঁর কিয়ামের সমান হত। পরে তাঁর মাথা উঠাতেন এবং বলতেন “সামিআল্লাহু লিমান হামিদা”। তাঁর দাঁড়ানো প্রায় তাঁর রুকূর সমান হত। তারপর সিজদা করতেন এবং বলতেন, “সুবহানা রাব্বিয়াল আ‘লা”। তাঁর সিজদা প্রায় তাঁর রুকূ’র সমান হত।
সুনানে আন নাসায়ী ১৬৬৪
লাইলাতুল কদরের নামাজ পড়ার নিয়ত নিয়ত মানে মনের সংকল্প। আর তার স্থান হল অন্তর; মুখ নয়। মহানবী সঃ ও তার সাহাবীদের কেউই কোন নির্দিষ্ট শব্দ মুখে উচ্চারণ করতেন না; তাই তা মুখে উচ্চারণ করা বিদআত; তাছাড়া নিয়তের জন্য কোন বাধা-ধরা শব্দাবলীও নেই।
মহান আল্লাহ বলেন,
তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর এবাদত করবে, নামায কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে; এটাই সঠিক ধর্ম।
কুরআন ৯৮/৫
আর মহানবী সঃ বলেন,
সমস্ত কর্ম নিয়তের উপর নির্ভরশীল এবং মানুষের তাই প্রাপ্য হয় যার সে নিয়ত করে।
সহীহ বুখারী হাদিস নং ১
জ্ঞাতব্য যে, নামাজের শুরুতেই কেউ যদি সমস্ত নামাযের একবার নিয়ত করে নেয়, তাহলে তাই যথেষ্ট; প্রত্যেক ২ রাকাতে নিয়ত করা জরুরী নয়; অবশ্য নামাজ পড়তে পড়তে কেউ কোন প্রয়োজনে তা ছেড়ে দিয়ে পুনরায় পড়তে লাগলে নতুন নিয়তের দরকার; সতর্কতার বিষয় যে, নিয়ত করা জরুরী; কিন্তু পড়া বিদআত।
তাড়াহুড়া না করে সুন্দরভাবে নামাজ পড়া মহানবী সঃ ও সাহাবায়ে কেরাম রাতের নামাজকে খুবই লম্বা করে পড়তেন; যেমন পূর্বে এ কথা আলোচিত হয়েছে। মহানবী সঃ এর রুকু ও সিজদাহ প্রায় তার কিয়ামের মতই দীর্ঘ হত; আর এত লম্বা সময় ধরে তিনি সিজদায় থাকতেন যে, সেই সময়ে প্রায় ৫০টি আয়াত পাঠ করা যেতে পারে।
বুখারী ১১২৩
সুতরাং এ কথা আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে যে, আমরা আমাদের রাতের নামাযকে তাদের নামাজের কাছাকাছি করার যথাসাধ্য চেষ্টা করব; আমরাও কেরাত লম্বা করব, রুকু, সিজদা ও তার মাঝে কওমা ও বৈঠকে তাসবীহ ও দুআ অধিকাধিক পাঠ করব; যাতে আমাদের মনে কিঞ্চিৎ পরিমাণ হলেও যেন বিনয়-নম্রতা অনুভূত হয়; যে বিনয়-নম্রতা হল নামাযের প্রাণ ও মস্তিষ্ক; আমাদের উচিত, এই নামাযের সুন্নতকে তার পদ্ধতি, বৈশিষ্ট্য ও পরিমাণ (কোয়ালিটি ও কোয়ান্টিটি) উভয় দিক থেকেই গ্রহণ করা; অতএব আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী নামাজের সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্য অবলম্বন করব; যেমন গ্রহণ করে থাকি রাকআত সংখ্যা। বলা বাহুল্য, বিনয়-নম্রতা, মনের উপস্থিতি ও ধীর-স্থিরতা ছাড়া কেবল রাকাত আদায়ের কর্তব্য পালন করাই মুখ্য উদ্দেশ্য নয়।
পক্ষান্তরে নামাযে অতিরিক্ত তাড়াহুড়া বৈধ নয়। তাছাড়া তাড়াহুড়া করতে গিয়ে যদি নামাযের কোন ওয়াজিব বা রুকন সঠিকরূপে আদায় না হয়, তাহলে তাে নামাযই বাতিল হয়ে যাবে। নামাযে ধীরতা ও স্থিরতা অবলম্বন করা ফরয ও অপরিহার্য; যে তা বর্জন করবে, তার নামায বাতিল গণ্য হবে; যেহেতু একদা মহানবী সঃ এক ব্যক্তিকে অধীর ও অস্থির হয়ে নামায পড়তে দেখে তাকে নামায ফিরিয়ে পড়তে আদেশ করলেন এবং শিক্ষা দিলেন যে, নামাজে রুকু, সিজদা, কওমা ও দুই সিজদার মাঝখানে ধীরতা ও স্থিরতা অবলম্বন করা ওয়াজেব।
বুঃ ৭৫৭, মুঃ ৩৯৭
মহানবী সঃ বলেন, সে নামাযীর নামায যথেষ্ট নয়, যে রুকু ও সিজদায় তার পিঠ সোজা করে না।
আদাবুল মুফরাদ ৮৫৫
রাসুল সঃ বলেন, সবচেয়ে নিকৃষ্ট চোর হল সেই ব্যক্তি, যে তার নামাজ চুরি করে; লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল সঃ নামায কিভাবে চুরি করবে? তিনি বললেন, পূর্ণরূপে রুকূ ও সিজদাহ না করে।
ইবনে আবী শায়বা ২৯৬০, ত্বাবারানী ১২২৯
তিনি আরো বলেন, আল্লাহ সেই বান্দার নামাজের প্রতি তাকিয়েই দেখেন না, যে রুকু ও সিজদায় তার মেরুদন্ড সোজা করে না।
ইআশাঃ ২৯৫৭, ইমাঃ আঃ, সিসঃ ২৫৩৬ নং
তিন রাকাত বিতরের কেরাত তিন রাকাত বিতরের প্রথম রাকাতে সূরা আ’লা, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরুন এবং তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস পড়া সুন্নাত।
নাসাঈ, হা/১৭২৯-৩১, রাত ও দিনের নফল সালাত অধ্যায়-২০, অনুচ্ছেদ-৪৭;
হাকেম, হা/১১৪৪ ‘বিতর’ অধ্যায়।
হাকেম হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
কখনো কখনো এর সাথে সুরা ফালাক ও নাস পড়বে।
তিরমিযী, হা/৪৬৩, ‘বিতর’ অধ্যায়-৩, ‘বিতরের কিরাআত’ অনুচ্ছেদ-৯;
হাকেম, হা/১১৪৪।
হাকেম হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন এবং যাহাবী তাকে সমর্থন করেছেন।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত আছে যে, তিনি একবার বিতরের এক রাকাতে সূরা নিসার একশত আয়াত পড়েছিলেন।
নাসাঈ, হা/১৭২৮, রাত ও দিনের নফল সালাত অধ্যায়-২০, বিতরের ক্বিরাআত অনুচ্ছেদ-৪৬;
আহমাদ, হা/১৯৭৭৫,
সনদ ছহীহ।
দোয়া কুনূত ও তা পাঠের স্থান কেরাত শেষ করে রুকুর পূর্বে কখনো কখনাে ঐ দুআর মাধ্যমে কুনুত পড়বে, যেটি রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর নাতি হাসান বিন আলী (রাঃ)-কে শিখিয়ে দিয়েছিলেন। দু’আটি হলঃ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাহদিনী ফীমান হাদায়তা, ওয়া আ-ফিনী ফীমান ‘আ ফায়তা, ওয়া তাওয়াল্লানী ফীমান তাওয়াল্লায়তা, ওয়া বা-রিকলী ফীমা ‘আত্বায়তা, ওয়া কিনী শাররা মা ক্বাযায়তা; ফাইন্নাকা তাকৃযী ওয়া লা ইয়ুকৃযা ‘আলায়কা, ওয়া ইন্নাহু লা ইয়াযিলু মাঁও ওয়া-লায়তা, ওয়া লা ইয়াইযঝ মান ‘আ-দায়তা, তাবা-রকতা রব্বানা ওয়া তাআ-লায়তা।
অনুবাদ : হে আল্লাহ! তুমি যাদেরকে সুপথ দেখিয়েছ, আমাকে তাদের মধ্যে গণ্য করে সুপথ দেখাও। যাদেরকে তুমি ক্ষমা করেছ, আমাকে তাদের মধ্যে গণ্য করে ক্ষমা করে দাও। তুমি যাদের অভিভাবক হয়েছ, তাদের মধ্যে গণ্য করে আমার অভিভাবক হয়ে যাও। তুমি আমাকে যা দান করেছ, তাতে বরকত দাও। তুমি যে ফায়সালা করে রেখেছ, তার অনিষ্ট হতে আমাকে বাঁচাও। কেননা তুমি সিদ্ধান্ত দিয়ে থাক, তোমার বিরুদ্ধে কেউ সিদ্ধান্ত দিতে পারে না। তুমি যার সাথে বন্ধুত্ব রাখ, সে কোনদিন অপমানিত হতে পারে না। আর তুমি যার সাথে শত্রুতা পোষণ কর, সে কোনদিন সম্মানিত হতে পারে না। হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি বরকতময় ও সর্বোচ্চ।
আবু দাউদ, হা/১৪২৫, ছালাত অধ্যায়-২, ‘বিতরের কুনূত’ অনুচ্ছেদ-৩৪০;
তিরমিযী, হা/৪৬৪, ‘বিতর’ অধ্যায়-৩, অনুচ্ছেদ-১০;
নাসাঈ, হা/১৭৪৫, রাত ও দিনের নফল সালাত অধ্যায়-২০, ‘বিতরের দু’আ অনুচ্ছেদ-৫১;
কখনো কখনো রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপর দরুদ পাঠ করবে। রুকুর পরে কুনুত পড়া এবং রমজানের দ্বিতীয়ার্ধে কুনুত এর দোয়ার সাথে কাফেরদের প্রতি লানত (অভিসম্পাত), রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপর দরূদ পাঠ এবং মুসলমানদের জন্য দু’আ বৃদ্ধি করাতে কোন সমস্যা নেই। উমার (রাঃ)-এর যুগে এরূপ করা ইমামগণ থেকে প্রমাণিত রয়েছে। আব্দুর রহমান বিন আব্দুল কারী বর্ণিত হাদীসের শেষাংশে এসেছে। তারা রমজানের দ্বিতীয়ার্ধে কাফেরদেরকে লানত করতাে এ দোয়া বলেঃ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা কৃাতিলিল কাফারাতাল্লাযীনা ইয়াছুদূনা ‘আন সাবীলিকা, ওয়া ইয়ুকাযিবৃনা রুসুলাকা, ওয়ালা ইয়ুমিনূনা বিওয়াদিকা ওয়া খা-লিফ বায়না কালিমা তিহিম, ওয়া আলকি ফী কুবিহিমুর রুবা, ওয়া আলকি আলাইহিম রিজযাকা ওয়া আযাবাকা ইলাহাল হাক।
অনুবাদ : হে আল্লাহ! আপনি কাফেরদেরকে ধ্বংস করুন। যারা আপনার রাস্তা বন্ধ করে, আপনার প্রেরিত রাসূলগণকে অবিশ্বাস করে এবং আপনার অঙ্গীকারের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না। আপনি তাদের দলের মধ্যে ভাঙ্গন সৃষ্টি করে দিন, তাদের অন্তরে ভীতি সঞ্চার করুন এবং হে সত্যের উপাস্য! তাদের প্রতি আপনার শাস্তিকে অবধারিত করে দিন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর প্রতি দরূদ পাঠ করতেন এবং সাধ্যানুযায়ী মুসলমানদের জন্য কল্যাণ প্রার্থনা করতেন। অতঃপর মুমিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতেন।
বর্ণনাকারী বলেন, কাফেরদের প্রতি লা’নত, নবী (ছাঃ)-এর প্রতি দরূদ পাঠ, মুমিন নর-নারীর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা এবং নিজের জন্য চাওয়ার পর তিনি (উবাই বিন কাব) বলতেনঃ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইয়্যা-কা না’বুদু, ওয়ালাকা নুছল্লী ওয়া নাসজুদু, ওয়া ইলাইকা নাস’আ ওয়া নাহফিদু, ওয়া নারজু রহমাতাকা রব্বানা, ওয়া নাখা-ফু ‘আযা-বাকাল জিদ্দা, ইন্না ‘আযা-বাকা লিমান ‘আদায়তা মুলহাক।
অনুবাদ : হে আল্লাহ! আমরা একমাত্র আপনারই ইবাদত করি, আপনার জন্যই ছালাত আদায় করি ও সিজদাহ করি। আমরা আপনার নিকটে ফিরে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করি। হে আমাদের প্রভু! আমরা আপনার রহমত কামনা করি এবং আপনার কঠিন শাস্তি কে ভয় করি। আপনার সাথে যে শত্রুতা পোষণ করেছে, আপনার আযাব তার প্রতি অর্পিত হৌক। অতঃপর তিনি তাকবীর দিয়ে সেজদায় চলে যেতেন।
সহীহ ইবনে খুযায়মা, ২/১৫৫-১৫৬, হা/১১০০।
বিতরের শেষে পঠিতব্য দোয়া বিতরের শেষে (সালামের পূর্বে বা পরে) এই দু’আটি পড়া সুন্নাতঃ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা বিরিকা মিন সাখাত্বিকা, ওয়া বিমুআফাতিকা মিন উক্বাতিকা, ওয়া আ’ঊযু বিকা মিন কা, লা উহছী ছানাআন আলায়কা, আনতা কামা আছনায়তা ‘আলা নাফসিকা। অনুবাদ : হে আল্লাহ! আমি আপনার সন্তুষ্টির মাধ্যমে আপনার ক্রোধ থেকে এবং আপনার ক্ষমার মাধ্যমে আপনার শাস্তি থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। আমি আপনার মাধ্যমে আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। আমি আপনার প্রশংসাকে গণনা করতে পারব না। আপনি আপনার যেভাবে প্রশংসা করেছেন, তেমনটিই আপনার জন্য প্রযোজ্য।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বিষয়গুলো সঠিকভাবে বুঝার ও আমল করার তাওফীক দান করুক। আল্লাহুম্মা আমীন।