শবে কদরের তাৎপর্য

শবে কদরের তাৎপর্য
১। শবে কদরের রয়েছে বিশাল মর্যাদা ও মাহাত্ম মহান আল্লাহ এই রাতে কুরআন অবতীর্ণ করেছেন এবং সে রাতের মাহাত্ম্য ও ফজিলত বর্ণনা করার জন্য কুরআন মাজীদের পূর্ণ একটি সূরা অবতীর্ণ করেছেন এবং সেই সূরার নামকরণও হয়েছে তারই নামে। মহান আল্লাহ বলেন, অর্থাৎ, নিশ্চয় আমি ঐ কুরআনকে শবে কদরে অবতীর্ণ করেছি। তুমি কি জান, শবে কদর কি? শবে কদর হল হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। (কুঃ ৯৭/১-৩) এক হাজার মাস সমান ৩০ হাজার রাত্রি। অর্থাৎ এই রাতের মর্যাদা ৩০,০০০ গুণ অপেক্ষাও বেশী! সুতরাং বলা যায় যে, এই রাতের ১টি তাসবিহ অন্যান্য রাতের ৩০,০০০ তসবীহ অপেক্ষা উত্তম; অনুরূপ এই রাতের ১ রাকআত নামাজ অন্যান্য রাতের ৩০,০০০ রাকআত অপেক্ষা উত্তম। বলা বাহুল্য, এই রাতের আমল শবে কদর বিহীন অন্যান্য ৩০ হাজার রাতের আমল অপেক্ষা অধিক শ্রেষ্ঠ; সুতরাং যে ব্যক্তি এই রাতে ইবাদত করল, আসলে সে যেন ৮৩ বছর ৪ মাস অপেক্ষাও বেশি সময় ধরে ইবাদত করল। ২। শবে কদরের রাত হল মুবারক রাত, অতি বরকতময়, কল্যাণময় ও মঙ্গলময় রাত মহান আল্লাহ বলেন, অর্থাৎ, আমি এ কুরআনকে বরকতময় রজনীতে অবতীর্ণ করেছি। (কুঃ ৪৪/৩) উক্ত বরকতময় রাত্রি হল ‘লাইলাতুল ক্বাদর’ বা শবে কদর; আর শবে কদর নিঃসন্দেহে রমজানে। বলা বাহুল্য, ঐ রাত্রি শবে বরাতের রাত্রি নয়; যেমন অনেকে মনে করে থাকে এবং ঐ রাত্রে বৃথা মনগড়া ইবাদত করে থাকে; কারণ, কুরআন (লাওহে মাহফুজ থেকে) অবতীর্ণ হয়েছে (অথবা তার অবতরণ শুরু হয়েছে) রমজান মাসে। কুরআন বলে, রমজান মাস; যে মাসে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। (কুঃ ২/১৮৫) আর তিনি বলেন, নিশ্চয় আমি ঐ কুরআনকে শবে কদরে অবতীর্ণ করেছি। (কুঃ ৯৭/১-৩) আর এ কথা বিদিত যে, শবে কদর হল রমজানে; শাবানে নয়। ৩। লাইলাতুল কদর ভাগ্য রজনী এই রাত সেই ভাগ্য-রাত; যাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়। (কুঃ ৪৪/৪) ৪। ফেরেশতা নাযিল হয় এটা হল সেই রাত; যে রাতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতাকুল তাদের প্রতিপালকের আদেশে অবতীর্ণ হন। অর্থাৎ, যে কাজের ফয়সালা ঐ রাতে করা হয় তা কার্যকর করার জন্য তারা অবতরণ করেন। ৫। এ রাত হল সালাম ও শান্তির রাত মহান আল্লাহ বলেন, সে রজনী ফজর উদয় পর্যন্ত শান্তিময়। পূর্ণ রাতটাই শান্তিতে পরিপূর্ণ, তার মধ্যে কোন প্রকার অশান্তি নেই। রাত্রি জাগরণকারী মুমিন নারী-পুরুষের জন্য এ হল শান্তির রাত্রি। শয়তান তাদের মাঝে কোন প্রকার অশান্তি আনয়ন করতে পারে না। অথবা সে রাত্রি হল নিরাপদ। শয়তান সে রাত্রে কোন প্রকার অশান্তি ঘটাতে পারে না। অথবা সে রাত হল সালামের রাত। এ রাতে অবতীর্ণ ফেরেশতাকুল ইবাদতকারী মুমিনদেরকে সালাম জানায়। ৬। এ রাত্রি হল কিয়াম ও গুনাহ-খাতা মাফ করাবার রাত্রি মহানবী সঃ বলেন, যে ব্যক্তি ঈমান রেখে ও নেকী লাভের আশা করে শবে কদরের রাত্রি কিয়াম করে (নামায পড়ে), সে ব্যক্তির পূর্বের গুনাহ সমূহ মাফ হয়ে যায়। বুখারী ৩৫, মুসলিম ৭৬০ বলা বাহুল্য, এ রাত্রি হল ইবাদতের রাত্রি। এ রাত্রি ধুমধাম করে পান-ভােজনের, আমােদখুশীর রাত্রি নয়। আসলে যে ব্যক্তি এ রাত্রের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়, সেই সকল প্রকার কল্যাণ থেকে বঞ্চিত। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বিষয়গুলি সঠিকভাবে বুঝার ও শবে কদরের ফজিলত লাভ করার তাওফীক দান করুক। আল্লাহুম্মা আমীন।