পবিত্র কুরআনে এসেছে -
এ আয়াত থেকে বুঝা যায় তাওয়াফ কাবা নির্মাণের পর থেকেই শুরু হয় হয়েছে।
রামল শুরু হয় সপ্তম হিজরীতে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)ষষ্ঠ ‘হিজরীতে হুদায়বিয়া থেকে ফিরে যান উমরা আদায় না করেই। হুদায়বিয়ার চুক্তি অনুযায়ী পরবর্তী বছর তিনি ফিরে আসেন উমরা পালনের উদ্দেশ্যে। সময়টি ছিল যিলকদ মাস। সাহাবাদের কেউ কেউ জ্বরাক্রান্ত হয়েছিলেন এ বছর। তাই মক্কার মুশরিকরা মুসলমানদেরকে নিয়ে ব্যঙ্গ করে পরস্পরে বলাবলি করতে লাগল, ‘এমন এক সম্প্রদায় তোমাদের কাছে আসছে য়াছরিবের (মদিনার) জ্বর যাদেরকে দুর্বল করে দিয়েছে।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর এক বর্ণনায় এসেছে, ‘ইব্রাহীম (আঃ) হাজি ও তাঁর দুগ্ধপায়ী সন্তান ইসমাইলকে নিয়ে এলেন ও বায়তুল্লাহর কাছে যমযমের উপর একটি গাছের কাছে রেখে দিলেন। মক্কায় সে সময় মানুষ বলতে অন্য কেউ ছিল না। পানিরও কোনো ব্যবস্থা ছিল না তখন সেখানে। এক পাত্রে খেজুর ও অন্যটিতে পানি রেখে ফিরে যাওয়ার জন্য রওয়ানা হলেন ইব্রাহীম (আঃ)। ইসমাইল (আঃ) এর মা তার পিছু নিলেন। বললেন, এই জনমানবশূন্য তৃণ-লতা-হীন ভূমিতে আমাদেরকে ছেড়ে আপনি কোথায় যাচ্ছেন? তিনি একাধিকবার ইব্রাহীম (আঃ) কে কথাটা বললেন। ইব্রাহীম তার দিকে না তাকিয়েই সামনের দিকে এগিয়ে চললেন। অতঃপর তিনি বললেন, ‘আল্লাহ কি আপনাকে নির্দেশ করেছেন? হাঁ, ইব্রাহীম (আঃ) উত্তর করলেন। তাহলে আল্লাহ আমাদেরকে ধ্বংস করবেন না। হাজি ফিরে এলেন। ইব্রাহীম এগিয়ে চললেন। তিনি যখন দু’পাহাড়ের মধ্য খানে সরু পথে প্রবেশ করলেন, যেখানে কেউ তাঁকে দেখছে না, তিনি বায়তুল্লাহর পানে মুখ করে দাঁড়ালেন! হাত উঠিয়ে এই বলে দোয়া করলেন-
ইসমাইল (আঃ) এর মা তাকে দুধ পান করাতে থাকলেন। নিজে ওই পানি থেকে পান করে গেলেন। পাত্রের পানি শেষ হয়ে গেলে তিনি পিপাসার্ত হলেন। পিপাসা পেল সন্তানকেও। সন্তানকে তিনি তেষ্টায় কাতরাতে দেখে সরে গেলেন দূরে যাতে এ অবস্থায় সন্তানকে দেখে কষ্ট পেতে না হয়। পাহাড়সমূহের মধ্যে সাফাকে তিনি পেলেন সবচেয়ে কাছে। তিনি সাফায় আরোহণ করে কাউকে দেখা যায় কি-না জানার জন্য উপত্যকার দিকে মুখ করে দাঁড়ালেন। কাউকে দেখতে না পেয়ে সাফা থেকে নেমে এলেন। উপত্যকায় পৌঁছালে তিনি তাঁর কামিজ টেনে ধরে পরিশ্রান্ত ব্যক্তির মতো দ্রুত চললেন। উপত্যকা অতিক্রম করলেন। অতঃপর মারওয়ায় আরোহণ করলেন। মারওয়ায় দাঁড়িয়ে তাকিয়ে দেখলেন কাউকে দেখা যায় কি-না। কাউকে দেখতে না পেয়ে নেমে এলেন মারওয়া থেকে। আর এ ভাবেই দু’পাহাড়ের মাঝে সাতবার প্রদক্ষিণ করলেন। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বললেন, এটাই হল সাফা মারওয়ার মাঝে মানুষের সাঈ (করার কারণ)। তিনি মারওয়ার ওপর থাকাকালে একটি আওয়াজ শুনতে পেয়ে নিজেকে করে বললেন, ‘থামো!’ তিনি আবারও আওয়াজটি শুনতে পেয়ে বললেন- শুনতে পেয়েছি, তবে তোমার কাছে কোনো ত্রাণ আছে কি না তাই বলো। তিনি দেখলেন, যমযমের জায়গায় একজন ফেরেশতা তাঁর পায়ের গোড়ালি বা পাখা দিয়ে মাটি খুঁড়ছে। এক পর্যায়ে পানি বের হয়ে এল, তিনি হাউজের মতো করে পানি আটকাতে লাগলেন। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বলেছেন, ‘আল্লাহ ইসমাইলের মাতার ওপর রহম করুন। তিনি যমযমকে ছেড়ে দিলে, বর্ণনান্তরে-যমযমের পানি না ওঠালে, যমযম একটি চলমান ঝরনায় পরিণত হত।
আমরা সুনির্দিষ্ট স্থানের বাইরে উকুফে আরাফা করছিলাম। ইবনে মেরবা আনসারি আমাদের কাছে এলেন এবং বললেন, আমি আপনাদের কাছে রাসূলুল্লাহর প্রতিনিধি।
তিনি বলেছেন-
হজ্জের মাশায়ের জায়গায় অবস্থান করুন কেননা আপনারা আপনাদের পিতা ইব্রাহীমের ঐতিহ্যের ওপর রয়েছেন।
এর অর্থ ইব্রাহীম (আঃ) উকুফে আরাফা করেছিলেন, সে হিসেবে আমরাও করে থাকি।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন -
বায়তুল্লাহ বা আল্লাহর ঘর বা কা‘বাকে বাইতুল আতীকও বলা হয়। কারণ, আল্লাহ এ ঘরকে কাফের শাসকদের থেকে স্বাধীন করেছেন। অথবা আতীক অর্থ প্রাচীন। কারণ এ ঘরটি সর্ব প্রাচীন ইবাদত ঘর। আশ্চর্যের বিষয় হলো -এ ঘরের স্থানটি পৃথিবীর ভৌগলিক মানচিত্রের কেন্দ্রে অবস্থিত কাবা ঘর নির্মাণ ও সংস্কার হয়েছে একাধিকবার। কারও কারও মতে পাঁচবার-
তবে বিশুদ্ধ মতে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম সর্বপ্রথম কা‘বা ঘর নির্মাণ করেন।
আল্লাহ তা‘আলা কুরআনুল কারীমে বলেন-
আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
কাবা ও হজের ইতিহাসে রয়েছে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের মহৎ ইসলামী আখ্যান। আল্লাহ তা‘আলা ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে তার স্ত্রী হাজের ও পুত্র ইসমা‘ঈল আলাইহিস সালামকে মরুময়, পাথুরে ও জনশূন্য মক্কা উপত্যকায় রেখে আসার নির্দেশ দেন -এটা ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষাস্বরূপ।
প্রচণ্ড পানির পিপাসায় ইসমা‘ঈল আলাইহিস সালামের প্রাণ যখন ওষ্ঠাগত, তাঁর মা ‘হাজের’ পানির সন্ধানে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝে ৭ বার ছুটাছুটি করেন। অতঃপর জিবরীল আলাইহিস সালাম এসে শিশু ইসমাঈলের জন্য সৃষ্টি করলেন সুপেয় পানির কূপ -যমযম। আল্লাহর নির্দেশে ইবরাহীম ও ইসমা‘ঈল আলাইহিস সালাম দু’জনে যমযম কূপের পাশে ইবাদতের লক্ষে কা‘বার পুণঃনির্মাণ কাজ শুরু করলেন।
আল্লাহ তা‘আলা ইবরাহীম আলাইহিস সালামের আনুগত্য দেখার জন্য আরেকটি পরীক্ষা নিলেন। তিনি ইবরাহীম আলাইহিসকে সালাম স্বপ্নে দেখালেন যে, তিনি তার পুত্রকে কুরবানি করছেন। আর এ স্বপ্নানুসারে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যখন বাস্তবে তার পুত্রকে জবাই করতে উদ্যত হলেন তখন আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে গেলেন এবং ইবরাহীমের পুত্রের স্থলে একটি পশু কুরবানি করিয়ে দিলেন। সেই থেকে হজের সাথে সাথে চলে আসছে এ নিয়ম, মুসলিম বিশ্বে যা ঈদুল আযহা (কুরবানী ঈদ বা বকরা ঈদ) নামে পরিচিত।